“অনুভূতির জানালায় কয়েকটি কাচের টুকরো”ভিন্ন ধারার অণুগল্পটি সৃষ্টিশীল লেখনির আলোয় আলোকিত করেছেন লেখক ও কবি নাসরিন আক্তার ।

736
“অনুভূতির জানালায় কয়েকটি কাচের টুকরো”
লেখক ও কবি নাসরিন আক্তার ।

”অনুভূতির জানালায় কয়েকটি কাচের টুকরো “

                                                                               নাসরিন আক্তার

 

“একজন জিতলে অন্যজনকে যে হারতেই হয়,তোমাকে জিতিয়ে আমি না হয় হেরেই গেলাম শ্রীলেখা!”যেদিন এই কথা গুলো বললে সেদিনই প্রথম বুঝেছিলাম, সব জয়ই জয় নয়।হেরে গিয়েও জিতে যাওয়া যায়। সত্যি অর্থে হেরে গিয়েও তুমিই জিতে গিয়েছিলে সেদিন। তোমার কাছে জয়ী হওয়া সেই আমি অবশেষে হেরেই গেলাম। আজ অব্দি আর জয়ী হতে পারিনি, অনুরুদ্ধ! জীবনের রেলগাড়িটা হুইসেল বাজিয়ে এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে ছুটে চলছে।কত পেসেঞ্জারের ওঠা – নামা। কেউ কখনো পাশে বসে বলেনি চলো শেষ স্টেশান অব্দি যাই।

একাকীত্ব! না না, একাকীত্ব আমাকে আর স্পর্শ করে না। তুমি তো জাননো না আজকাল আমি বুকের খাঁচায় প্রজাপতি পুষি। ওদের পাখায় কালির আঁচড়ে এঁকে দেই জীবনের গল্প । জীবন কাকে বলে অনুরুদ্ধ! তুমি কি জানো?না কি জীবন নামক প্রহসনে পথ চলো মাত্র! আজও আমার ভাবনা গুলো লাটিমের মতো পাক খেয়ে খেয়ে একই বলয়ে আঁটকা পড়ে আছে। সেই ছোট বেলার ইচ্ছেগুলো স্বর্নলতার মত আজও তোমাকে আশ্রয় করে বাঁচতে চায়।

খুব ইচ্ছে করে- না, পথেরপাঁচালির অপুর মত রেললাইন ধরে নয়। সবুজ ছায়াশীতল মেঠো পথ ধরে হেঁটে যাই অনেকটা পথ।যেখানে শুধু পায়ের সাথে পা নয় দুজনার মন ও হাঁটবে একই সরল রেখায়। প্রায়ই একটা স্বপ্ন গভীর রাতে মনসায়রে এসে ছায়া ফেলে। ” স্থির শান্ত নদীর মাঝখানে মাঝি হীন ছই হীন একটা নৌকো। তুমি, আমি আর শরতের আকাশে একফালি চাঁদ।চাঁদের আলোয় দেখতে পাই তোমার চোখের কোনে চিকচিক করা অশ্রু। আর আমি! আমার অনুভূতি তো তোমার অজানা নয়। আমরা সেই স্থির নৌকার মত আজও কি একই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে? আমাদের শরীরের বয়স বেড়েছে, মনের বয়স কি বাড়েনি ? নাকি অতৃপ্ত মন বারবার ফলে আসা দিনগুলো ফিরে পেতে চায়?

সময়ের পরিক্রমা পাড়ি দিয়ে আবার ক্ষনিকের জন্য দেখা সেদিন। এটাকে কি ভাগ্যায়ত্ত বলবো! এত বছর পর তবুও মনে হলো সেই তুমি তেমনি আছো যেমনটা দেখেছিলাম দলছুটের আগে। সেই চোখ, সেই গভির চাহনি। নাকের নিচে প্রজাপতির মতো গোফ। মেদহীন লম্বা গড়ণ। বার বার রিস্টওয়াচে দৃষ্টিফেলা বলে দিচ্ছিলো তোমার সময়ের স্বল্পতা। আমার হাতেও বেশি সময় ছিলো না। তবুও সময় ও সমাজবিধি ভুলে চঞ্চল পায়ে এগিয়ে আসলে হয়তো এটুকুই জানার জন্য।চকচকে চোখে গাম্ভীর্য নিয়ে ঠোটদুটি নড়ে উঠলো—কেমন আছো শ্রিলেখা? সব ভালো তো?

আমার চলমান মূহুর্ত গুলো সেখানেই থমকে দাঁড়ায়। আমি আমার থেমে যাওয়া ঘড়িটায় চবি দিতে ভুলে যাই। ভুলে যাই দুজনার পথে বিপরীতমুখি দাঁড়িয়ে আছে দুটি ট্রেন । হুইসেল বাজলেই সে ছেড়ে যাবে স্টেশান।

আমি শূণ্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকি তোমার ফেলে যাওয়া শূন্য স্টেশানটার দিকে। আতিপাতি খুঁজি ছেঁড়া টুকরো খড়কুটো, শুকনো পাতা। আমার কাছে অনুমতি না নিয়েই চোখজোড়া ঘণ কুয়াশায় ঢুবে যায় – আর মন আওড়ে
চলে রবীন্দ্রনাথের” হঠাৎ দেখা “কবিতার শেষ চরণ দুটি —

আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে! কিছুই কি নেই বাকি?——–

, ‘”রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে৷'” এই শেষটুকু বলার জন্য তুমি আর পিছু ফিরলে না।

তাই আজ বার বার মন বলছে –

পিছু ফেরা সত্য নয় পরাজয় বৃত্ত রেখা আঁকে ,
বয়স যতই বারুক রোদে- ছায়া মাখামাখি
স্মৃতি কিছু আছে সঞ্চয়ের হাটে,
পাতাঝরা শব্দে বিভ্রম হয় তুমি যেন দাঁড়িয়ে পাশে ।
কেনো এমন হয় অসময়ে জন্মায় আকুতি প্রত্যাশা,,
মূহুর্তে অপ্রকৃতিস্থ আমি ভুলে যাই জগতিক ভাষা।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here