লেখক-আবির হাসান সায়েম’র নির্বাক চোখে লিখা ছোট গল্প“মেঘচিঠি”

347
লেখক-আবির হাসান সায়েম'র নির্বাক চোখে লিখা ছোট গল্প“মেঘচিঠি ”

মেঘচিঠি
আবির হাসান সায়েম

মানুষ আমি, আমার চোখে চোখ রেখে
যদি বলো, ‘তুমি একান্ত আমার’,
কী করে থাকবো নির্বাক?
তারায় তারায় রটিয়ে দেবো, ‘আমি তোমার, তুমি আমার’।
~ উত্তর(শামসুর রাহমান)

রোদে খাঁ খাঁ করতে থাকা এক দুপুরে তোমার সাথে দেখা হোক। পকেটে টাকা না থাকায় হেটে আসতে হলো। ঘামে ভেজা শার্ট লেগে গেছে গায়ের সাথে। আমি তোমার পাশে গিয়ে বসলাম। রুমাল বা টিস্যু বের করে ঘামে ভেজা মুখ মুছছি। তুমি পাশে চুপচাপ বসে আছো। কথা বলছো না। বড্ড রাগ আমার উপর। প্রতিবারই এমনটা হয়, তবুও রাগ তোমার করতেই হবে। আমি বললাম,
“বেশি দেরী হয় নি। মাত্র পনেরো মিনিট।”
তুমি কোনো কথা বললে না। আমি আবার বললাম,
“আর হবে না দেরী। “
তুমি তাও কিছু বললে না। রাগ ভাঙানোর জন্য কি করা যায় তা বুঝতে না পেরে মাথা চুলকাই। নাহ চুলকানোতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। একটা বাদামওয়ালা সামনে দাড়িয়ে বালু নেড়ে চেড়ে বাদাম ভাজছে। দশ টাকার বাদাম কিনে দিলে হতো। কিন্তু খরচ করবার মতো দশ টাকা নেই। আর মতো কচ্ছপ টাইপ বুদ্ধিওয়ালা মানুষকে কি বিপদে ফেলেছো বুঝতে পারছো?
হতাশ হয়ে বসে থাকি। কিছুক্ষণ পর তুমিই বলে উঠলে,
“থাকবে কতক্ষণ?”
আমি তোমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম,
” যতক্ষণ চাও। আমার আজ কোথাও যাবার কোনো তাড়া নেই। শুধু এক ঘন্টা পর কাজে একটা জায়গায় যেতে হবে। “
এই বলে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসলাম। তোমার চোখ আরও সরু হয়ে গেছে। গলা ভারী করে তুমি বললে,
” ওহ আচ্ছা।”
“কোথাও যাবে? চলো সামনের দিকে যাই?”
তুমি ধমকের স্বরে বললে,
” চুপ একদম। এখনে চুপচাপ বসে থাকো। “
আমি বাধ্য ছেলের মতো বসে রইলাম। পায়ের নীচ দিয়ে অনেকগুলো কালো পিপড়া ঘোড়াঘুড়ি করছে। ছোট বেলায় ভাবতাম, কালো পিপড়া ভালো আর লাল পিপড়া দুষ্টু। কথাটা মনে পরায় আনমনেই সুক্ষ্ম হাসি ফুঁটে উঠে। তুমি বললে,
” হাঁসছো কেনো?”
আমি আবার অপ্রস্তুত হয়ে তোমার দিকে তাকালাম। কিছু বললাম না। তুমি আবার বললে,
” তোমার জড়তা কাটছে না কেনো? তুমি আমাকে ভয় পাও? নাকি অন্য কিছু?”
” না তেমন কিছু না। “
“আমার দিকে তাকাতেও তুমি লজ্জা পাও। তাকিয়ে সাথে সাথে মাথা নীচু করে ফেলো। আর কতবার দেখা হলে এই অপ্রস্তুতভাবটা কমবে তোমার?”
আমি কিছু বললাম না। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে -এই কথাটুকু বলতে খুব ইচ্ছে করলেও, বলতে পারি না কোনোবারই। হঠাৎ আকাশ ডেকে উঠল। আকাশে কালো মেঘেরা জমা হয়েছে। শ্রাবণ মাসে এই রোদ এই বৃষ্টি ব্যাপারটা ভালোই লাগে।
কয়েকবার দমকা বাতাস দিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামল। বাতাসে তোমার চুল উড়ছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। ইচ্ছে করে, গালে এসে পরা আলগোছে চুলগুলো টেনে কানের পিছনে দিয়ে দেই। কিন্তু পারি না। নিজের উপর রাগ উঠে। কেনো এতো দ্বিধা?
বৃষ্টি জোরে পরতে শুরু করলে, তুমি বললে,
“বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার কোনো সমস্যা আছে? “
” নাহ নেই। “
তুমি আলতো হেসে বললে,
” চলো ভিজি। “
জানো তুমি হাসলে মাঝে মাঝে তোমার গালে সামান্য টোল পরে। অনেক সাহস সঞ্চার করে আজ ছুঁয়েই ফেলি তোমার গাল। লজ্জা খানিক্কটা তুমিও পাও। দেখাও না।
বৃষ্টির তেজ বাড়ে। আমার হাতে তোমার হাত। হেটে যাই, ফাঁকা পথ দিয়ে। কোথায়? জানি না। অজানা গন্তব্যে।
কবে থাকবো? কবে ছাড়বো এই হাত?
~ কখনো না। কখনো না।

Content Protection by DMCA.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here