“যশোরের কেশবপুরে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় চাই ”সৃজনশীল লেখনির আলোয় আলোকিত করেছে কলম সৈনিক-হাসানুজ্জামান ।

384
সৃজনশীল লেখনির আলোয় আলোকিত করেছে কলম সৈনিক-হাসানুজ্জামান ।

যশোরের কেশবপুরে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় চাই

                                          হাসানুজ্জামান

যশোর জেলার মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত কেশবপুরে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের দাবী উঠেছে। এই অঞ্জলের মানুষের প্রাণের এই দাবীটি এখন শুধুমাত্র যশোরেই নয় খুলনাবিভাগের প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১০ সালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করতে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যশোর জেলার সর্বশ্রেণীর মানুষের এই দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে দাবীটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় দাবীটি এখনও বাস্তবায়িত না হওয়ায় এই অঞ্জলের মানুষের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামটিকে এখন আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না। এখানেই জন্মগ্রহণ করেছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক ও বিপ্লবী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কবিতায় সনেট এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন ঘটিয়েছেন তিনি। মহাকাব্য ‘মেঘনাধবধ, সৃষ্ঠির মধ্যদিয়ে কবি নিজের পরিচিতিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বত্র। শুধু বাংলা ভাষায় নয় অনান্য ভাষাতেও মুদ্রিত হয়েছে ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যটি।
কেশবপুরের পাঁজিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন পঞ্জাশের দশকের ভারতীয় চলচিত্রের জনপ্রিয় নায়ক ধীরাজ ভট্রাচার্য। ৪০টির বেশী সিনেমায় এবং প্রায় ৫০টি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। পাঁজিয়ায় স্কুল জীবনের পাঠ চুকিয়ে তিনি কোলকাতায় গিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কলেজ জীবন থেকেই তিনি চলচিত্রে অভিনয়ে আকৃষ্ঠ হয়ে ওঠেন। পরিচালক মধু বাবুর হাত ধরেই তার চলচিত্রে অভিষেক ঘটে। তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে মৃণালিনী,নৌকাডুবি,ধুমকেতু,গিরিবাল,কাল পরিণয় উল্লেযোগ্য।

কোলকাতার বাংলা একাডেমীর পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক মনোজ বসুর বাড়ীও কেশবপুরের ডোঙ্গাঘাট গ্রামে। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও নিরলস প্রচেষ্ঠায় একজন সাহিত্যিক হয়ে ওঠেন। তাঁর লেখা ‘বাঁশের কেল্লা, ভুলি নাই,কাঁচের আকাশ,দিল্লী অনেক দূর, কিংশুক,মায়াকন্যা, আমার ফাঁসি প্রভৃতি গ্রন্থ পাঠকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।

কেশবপুরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা তালাতে জন্ম গ্রহণ করেছেন বাংলা সাহিত্যের দিকপাল সিকান্দার আবু জাফর এবং শিল্পী জাহাজ্ঞীর । এ ভাবেই সাহিত্যের নানা অঙ্গনের পরিচিত অনেক মূখ যাদের জন্মভিটা এই অঞ্জলে। এই কেশবপুরের মাটি ধন্য হয়েছে এই সকল গুণি মানুষদের কারণে।
একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে প্রথমেই প্রয়োজন তার শিক্ষার প্রতি গুরাত্বারোপ করা। কেননা শিক্ষা ব্যতীত কেউ এগুতে পারে না। সময়ের প্রেক্ষাপটে শিক্ষার ধরণ পাল্টিয়ে গেছে। শিক্ষা এখন দু‘ধরণের। একাডেমিক শিক্ষা এবং জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষা। একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনদের দিয়ে জাতির উন্নয়ন আশা করা যায় না। জ্ঞানার্জনের জন্য যে শিক্ষা সেই শিক্ষা সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ধীরাজ ভট্্রাচার্য ও মনোজ বসুদের মত ব্যক্তিরা সারাজীবন নিজের জন্য নয় দেশ, জাতির জন্য কাজ করে গেছেন। তাঁদের রেখে যাওয়া দর্শন ধারণ করেই ষাটের দশক থেকে এই অঞ্জলে শিশুদেরকে আলোকিত মানুষরুপে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে অবিরত কাজ করে চলেছে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘর। খেলাঘরের উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিজ্ঞান মনস্ক মানবিক বাংলাদেশ বির্ণিমান করা

ফলে সংস্কৃতির তীর্থস্থান বলে পরিচিত এই অজ্ঞলে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এ ছাড়াও দাবী উঠেছে ধীরাজ ভট্রাচার্য ও মনোজ বসুর বাড়ীটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের আওতায় নিয়ে তা যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা, একটি শিশু পাঠাগার স্থাপন এবং সর্বোপরি প্রতিবছর সপ্তাহব্যাপি মেলার আয়োজনের। এলাকার সংস্কৃতিকর্মীদের এই দাবীর সাথে সাধারণ মানুষের সমর্থন দাবীটিকে একটি যৌক্তিক দাবীতে পরিণত করেছে।

লেখক ঃ সহকারী অধ্যাপক, সদস্য, খেলাঘর কেন্দ্রিয় কমিটি। ০১৭১১-১০৮৭৩৬

Content Protection by DMCA.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here