বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সারথি কবি জেরিন সুলতানার অনবদ্য অনুভূতির তিনটি কবিতা

243
জেরিন সুলতানার অনবদ্য অনুভূতির তিনটি কবিতা

ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো
জেরিন সুলতানা

কেউ আঘাত করে করে ক্লান্ত হয়ে যায়
কেউ আঘাত সইতে সইতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে,
কেউ বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে যায়
কেউ আবার , বুঝতে বুঝতে ক্লান্ত।
কেউ আঘাত ভুলতে বেপরোয়া হয়ে যায়
কেউ আঘাতের প্রতি করে অভিমান,
আঘাতে আঘাতে জর্জরিত যে হৃদয়
সে আর নতুন করে পুরতে চায়না আঘাতের অনলে
জীবনের প্রতি বারতে থাকে শুধুই অভিমান ।
বেঁচে থাকার ইচ্ছে টা মরে যায় দিনকে দিন
ইচ্ছে করেই কখনো খোঁজে না সুখের সোপান,
এক জীবনে মানুষ আর কতই বা চাইতে পারে?
এক সময় ভালো থাকার, ভালো রাখার
ইচ্ছে টাও মরে যায়!
জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতে বড্ড বেশি ইচ্ছে করে।
একটা সময় কেউ আঘাত করে পালিয়ে যাবে বলে
ভয়ে কুঁকড়ে যেতো হৃদয়ের অলিগলি।
এখন আর ভয় নেই কিছু হারাবার, সময় হয়না
পাওয়া না পাওয়ার হিসেব রাখার,
হৃদয়ের সমস্ত উত্তাপে যখন ক্ষোভ কেবল হাতড়ে ফেরা
হতাশার চাদরে ঢাকা জীবনীশক্তি হীন নিজেকে।
এক পাথরের মূর্তি তখন আমি
দেশলাইয়ের কাঠি হয়ে জ্বলতে থাকি, পুরতে থাকি
তবে সে অনলে কাউকে পোড়ানোর
ইচ্ছে টা কখনোই ছিল না, ইচ্ছে হয়না।
কেবল একাকিত্ব কে বরণ করে নেয়া
কেবল ক্লান্তি , কেবল ক্লান্তি ,কেবল ক্লান্তি
ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো ,,,,,,,,,,,,,

কবিতার জন্য
✍️ জেরিন সুলতানা

অক্ষয় স্মৃতি!
কেউ কুড়িয়ে রাখে মলাটের ভাজে,
কেউ কুড়িয়ে নিয়ে যত্নে রাখে হৃদয়ের মাঝে ।
কারো স্মৃতি শোভা পায় ধুলোর সাজে
রৌদ্রের খরতা পেয়ে অনবরত লাগে
শীতল হৃদয়ে পুড়ে যাওয়ার আগুন !
পুড়ে যায় স্মৃতি পুড়ে যায় ঘর ,পুড়ে যায় স্বপ্ন ,
এক চিলতে সুখের আশায় মাটি ভেদ করে
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে দু’চোখ
চাতক পাখির মত, দু ফোটা তৃষ্ণার জল চায় শুধু
যদিও এক জনমে চাইবার শেষ নেই কিছুই।
ক্ষত বিক্ষত হৃদয় বয়ে বেড়াতে বড়ই কষ্ট মানুষের
হৃদয় বদল করে যদি বোঝা যেত অপর হৃদয়ের কষ্ট,
এই সব আবোল তাবোল বেখেয়ালি কল্পনা দিনরাত
এই অসময়েও ভাঙা হৃদয় বয়ে বেড়ানো কিছু মানুষ
দিন রাত শব্দের জাল বোনে ।
অপেক্ষায় থাকে কবিতার বৃষ্টি, কবিতার মেঘ ,
কবিতার নদী আর কবিতার দীঘির জন্য।
ভাঙা হৃদয়ে থাকেনা কিছুই কবিতা ছাড়া
ভেতরে ভেতরে পুরতে থাকে , চোখের জল ঝরতে থাকে বহতা নদীর মতো , তবুও শেষ হয়না সে জল
শেষ হয়না স্বপ্ন হারানোর আর্তনাদ।
স্মৃতির মরন কামর বড্ড বেশি ভয়ানক হয়ে ওঠে
তবুও কিছু মানুষ শব্দ খুঁজে বেড়ায় ,
কবিতা লেখার আশায় অক্ষরের পেছনে ছুটে বেড়ায়
অনেক কষ্টে জোগাড় করে কিছু অক্ষর
কিছু শব্দ তৈরি করে তা দিয়ে।
কেউ কেউ অক্ষর গুলো কোন খামে ভরে রাখে সযত্নে
কেউ আবার অক্ষর গুলোকে ভরে রাখে ধুলো মাখা বাক্সে, মন চাইলে ধুলো ঝেড়ে এক পলক দেখে নেয় আর মনে মনে বলে ,,,,,,,
“হতে পারিনি আমি কবি , শব্দ যোগার করেছি শুধু
ছাপা হবে না বলে বাক্য তৈরি করিনি কোনদিন ” ।

জীবন খুঁজে ফিরি
✍️জেরিন সুলতানা

আমার স্বপ্নের চারা গাছ গুলো
আমার সামনে একে একে শুকিয়ে গেছে,
আমি তো তাদের যত্ন করেছি
উপযুক্ত সার দিয়েছি সেচ দিয়েছি !
তবুও কেন তাদের বড় করতে পারলাম না ?
হয়তো সেটাও এক মুমূর্ষ ব্যর্থতা
কখনো কি দুদন্ড থেমেছিল জীবন ?
কই নাতো,
লাগামহীন ঘোড়ার মত
প্রবল বেগে ছুটছে তো ছুটছেই।
মাছ ধরতে গিয়ে অবেলায় অসময়ে
অধীর আগ্রহে ছিপ ফেলে যেমন বসে থাকা ।
তেমনি ফেলে আসা শৈশব কে ধরতে গিয়ে
বৃথাই সময় গিয়েছে চলে ,
অনবরত স্মৃতির পেছোনে দৌড়াই শুধুই দৌড়াই
থামার প্রয়োজন আছে কি আমার ?
হ্যাঁ আছে তো !
বয়স নাকি বেড়েছে ,আমি কি হাঁপিয়ে উঠেছি ?
হ্যাঁ তাইতো,
আজকাল বিন্দু বিন্দু ক্লান্তি ঝরছে আমার
ক্লান্তি আমার দেহের মলাট ভেদ করে আমার হৃদয়ের সীমানায় হাতুড়ি ফেলে অবিরাম ।
অনবরত কেউ যেন চোখ দুটো দুহাতে চেপে
কানামাছি খেলার ছলে আমাকে এক পা দু’পা করে নিয়ে যায় শুধুই অজানায় ,
মাঝে মাঝে অনুভবে, আরোহণ করি
স্বপ্নের পাহাড় চূড়ায় !
না , কখনো মনকে বোঝাতে চাইনি
পাহাড় নয় সামনে তোমার
অথৈ সাগর ও থাকতে পারে ।
মনকে বুঝিয়ে নিয়েছি ,নদীই না হয় হোক
পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে পৃথিবী দেখার
সাধ টুকু চুলোয় যাক !
সে নদীতেই অবগাহন করে শীতল হোক দেহ মন । ভালো লাগে তখনই , যখন এই ইট কাঠের শহর
আমায় ডেকে বলে !
এই মেয়ে শোন ?
এই শহরে তুমি পাহাড় নদী খুঁজনা
তার চেয়ে বরং
তুমি নিজেই পাহাড় কিংবা নদী হয়ে যাও।

Content Protection by DMCA.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here