ঢাকা প্রতিনিধি: বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ কক্সবাজারের জিন্নাত আলী। উচ্চতা ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। ২২ বছর বয়সী এ যুবক শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করানোর জন্য বুধবার সন্ধ্যায় জিন্নাত আলীকে নিয়ে সংসদ ভবনে যান কক্সবাজার-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। এ খবর শুনে চার দিকে হইচই পড়ে যায়। তিনি যেখানেই যাচ্ছিলেন লোকজন তাকে ঘিরে ধরছিলেন। ৱ
তাকে একনজর দেখতে ভিড় করেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যরাও। জিন্নাত আলী যখন সংসদ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন গেটে তাকে মাথা নিচু করে বের হতে দেখা যায়। তার সঙ্গে ছবি তোলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ও অনুপম শাহজাহান জয়। জিন্নাত যখন সংসদের ক্যান্টিনে যান তখন অন্য দর্শনার্থীদের সঙ্গে সংসদ সদস্যরাও ভিড় করেন তাকে দেখার জন্য।
জিন্নাতের সঙ্গে ছবি তোলার পর জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, জিন্নাত একটু অসুস্থ। আমি তাকে কিছু আর্থিক সহায়তা করলাম। প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন।
এর আগে বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডি ব্লকের ১৭ তলায় এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ট্রলিতে রোগীদের জন্য খাবার পরিবেশন করতে দেখা যায় হাসপাতালের এক নারী কর্র্মীকে।
১৭ নম্বর বেডের সামনে আসতেই ট্রলি থেকে খাবার-ভর্তি তিনটি ট্রে বের করলেন। প্রতিটি ট্রেতে ছিল ভাত, এক টুকরো মাছ আর পাতলা ডাল। পাশের ওয়ার্ড থেকে অন্য রোগীদের এক স্বজনও আরেকটি ট্রেতে করে খাবার দিয়ে গেলেন। এত খাবারেও নাকি জিন্নাত আলী নামের ওই রোগীর জন্য যথেষ্ট নয়। চার প্লেট ভাত, চার টুকরো মাছ আর ডালে পেট ভরে না।
জিন্নাত আলীর বড় ভাই মো. ইলিয়াস আলীর দাবি, জিন্নাতের উচ্চতা ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি! দেশের সবচেয়ে দীর্ঘকায় মানুষ। ভাইয়ের এই উচ্চতার জন্য তিনি গর্বিত নন, বরং অভাব ও দারিদ্র্যের কারণ বলে মনে করেন। জিন্নাতের প্রচুর খাবার প্রয়োজন হয়। তাকে বাড়িতে সকাল, দুপুর ও রাতে ভাত দিতে হয়।
প্রতিবেলায় এক কেজি চালের ভাত, আর প্রচুর পরিমাণে তরকারি লাগে। কিন্তু আমরা দিতে পারি না। ইলিয়াস আলী জানান, কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া বড়বিল গ্রামে তাদের বাড়ি। বৃদ্ধ বাবা আমীর হামজার এক মেয়ে, তিন ছেলের মধ্যে জিন্নাত তৃতীয়। অন্য সবার মতো স্বাভাবিক ছিল জিন্নাতের গড়ন। কিন্তু বয়স যখন ১২ বছর, সে সময় থেকেই দ্রুত উচ্চতা বাড়তে থাকে। প্রতি বছর দুই থেকে তিন ইঞ্চি করে আকৃতি বাড়তে থাকে। ১০ বছরের মধ্যে প্রায় চার ফুট উচ্চতা বেড়ে জিন্নাত এখন ৮ ফুট ৬ ইঞ্চির এক মানব।
ইলিয়াস আলী বলেন, ছয় বছর আগে পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) আনা হয়েছিল। তখন বলা হয়, অপারেশন লাগবে। ১২ লাখ টাকা খরচ হবে। অপারেশন না করালে ছয় মাসের বেশি বাঁচবে না। ডাক্তারের কাছে এ কথা শুনে আমি ভাইটারে বাড়ি নিয়ে যাই। কিন্তু ছয় বছর ধরে আমার ভাই তো বাইচ্চা আছে।
এবার ঢাকায় কেন আনা হয়েছে? জবাবে ইলিয়াস বলেন, ডান পায়ের চেয়ে জিন্নাতের বাঁ পা একটু বেশি লম্বা। এই পায়ের গোড়ালি ফুলে গেছে। পায়ে পানি জমে যাচ্ছে। ব্যথা করে। আমাদের এলাকার এমপি সাহেব (সাইমুম সরওয়ার কমল) এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। ঢাকায় আনতেও কষ্ট করতে হয়েছে। ১২৬ কেজি ওজনের জিন্নাতকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা যায় না। চেয়ারকোচে করে আনতে হয়েছে। বাসে তোলার সময় শরীরে ব্যথা লেগেছে।
বিএসএমএমইউ’র মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহ বলেন, জিন্নাতের মস্তিষ্কে টিউমার রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়া হরমোন সমস্যার কারণে ওর উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও পরীক্ষা করাতে হবে। জিন্নাতের মতো সমস্যা নিয়ে কয়েকজন রোগী এসেছিল। তবে এই ছেলের মতো দীর্ঘদেহী কেউই ছিল না। বাংলাদেশে জিন্নাতই সম্ভবত সবচেয়ে দীর্ঘ উচ্চতার মানুষ।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবিত মানুষ তুরস্কের সুলতান কশেন। তার উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। তিনি ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘকায় ব্যক্তির স্বীকৃতি দেয়। আর কশেনের চেয়েও তিন ইঞ্চি বেশি লম্বা হলেন রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের জিন্নাত আলী।