ঢাকা প্রতিনিধি: কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতে একদিন সময়ে নিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী।
সভায় ড. কামাল হোসেন ছাড়াও ঐক্যফ্রন্টের অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্য দিতে গিয়ে কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি আজকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছিলাম, প্রেসকে বলেও দিয়েছিলাম। স্যার (ড. কামাল হোসেন) আমি আপনার কাছে আর একটা দিন সময় চাই, শুধু কালকের দিন সময় চাই।
“পরশুদিন আগামী ৫ তারিখ দলবদ্ধভাবে গিয়ে আপনাকে আপনার নেতৃবৃন্দের সামনে আমার অবস্থান জানিয়ে আসব।”
তিনি বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি কখনো জনগণের মতের বিপক্ষে নই, কখনো যাইনি, আমি ভবিষ্যতেও যাব না। তবে একটা কথা বলছি, আপনাদের বিজয় হয়ে গেছে। যেদিন সরকার আলোচনায় বসেছে সেদিনই আপনাদের বিজয় হয়ে গেছে। আপনারা বিজয়ী। আপনাদের বিজয় আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। স্যার আপনাকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
কামাল হোসেনের নেতৃত্বের প্রশংসা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আজকে শুধু ড. কামাল হোসেন, কামাল হোসেনই নন। আজকে তিনি ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা। আমি মনে করি বেসরকারিভাবে সমগ্র জাতির তিনি প্রধান এবং তিনি নেতা।
“আমি গত পরশুদিন তাকে বলে এসেছি, দুইজন রিকশাচালকের কথা যে, ১২/১৩ দিন আগেও ড. কামাল হোসেন কোথাও ভোটে দাঁড়ালে জিততে পারতেন না। শেখ হাসিনার কথা ততদিন পর্যন্ত সত্য। কিন্তু আজকে ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের যেখানে দাঁড়াক সেখান থেকে তিনি জিতে আসবেন। আমি বলব, একবার টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন।”
সরকারের ‘অশনি সংকেত’ দেখতে পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি দিব্যচোখে দেখতে পারছি, এতদিন দেখতাম আওয়ামী লীগ ২০ সিট পাবে। আমি চারদিন যাবত দেখেছি তারা ১৯ সিটও পাবে না। কি করবেন? মাফ করবেন না সাজা দেবেন? এক সিট দুই সিট এদিক ওদিক হলে সাজা দিতে পারবেন না। তার চাইতে যদি বেশি হয় তাহলে আমাকে সাজা দেবেন আমি মাথা পেতে নেব।”

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “মাত্র চারদিন আগে আপনি ছাগল-পাগল বলেছেন, একবারও কী মনে হয়েছে সেই ছাগল-পাগলদের সাথে আপনাকে বসতে হল। এটাই হল রাজনীতি। ৭ দফা আপনি মানবেন না। আর তো ৭ দফা মানা দরকার নাই।“যেদিন আলোচনায় বসেছেন, সেইদিন পোড়া মানুষের গন্ধ নিয়েছেন। আপনি খুব গোলাপ ফুলের সুবাতাস পান নাই। যাই বলুন বদু চাচার সাথেও বসেছেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের সাথে আপনি বসেছেন। আপনার বাবার প্রতিনিধি হয়ে ইয়াহিয়া খানের সাথে ড. কামাল আলোচনায় বসতেন। আপনি যত বড় কথাই বলেন, ইতিহাস তো আপনার কথায় সাক্ষ্য দেয় না। আপনার পরাজয়। সকালে চিঠি দিছে বিকালে রাজী হয়ে গেছেন। দেখেন কতবার কত কিছুতে রাজি হইতে হইতে আপনার ছালাও যাবে, মালাও যাবে।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে ‘বাঘা সিদ্দিকী’ সম্বোধন করে কামাল হোসেন বলেন, “বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সংবিধানে লেখা আছে- এদেশের জনগণ হচ্ছে মালিক। এখানে যারা বসে আছেন, তারা সবাই মালিক।”
জাতীয় ঐক্যের সাথে কাদের সিদ্দিকীকে পাশে পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কামাল হোসেন।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের উদ্যোগে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।
সভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সহসভাপতি নাসরিন সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।