মফস্বলের রোগীতে ঠাসা রাজধানীর হাসপাতাল ৭০ শতাংশ রোগী বাইরের, ঢাকায় সংক্রমণ বাড়ছে *উপজেলা হাসপাতাল রোগীশূন্য

170

দৈনিক আলাপ ওয়েবডেস্কঃ রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি সব হাপসাতাল রোগীতে ঠাসা। আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা খালি নেই। রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি ৭০ ভাগ রোগী মফস্বলের। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে রোগীরা রাজধানীতে এসেছেন। অধিকাংশ উপজেলা হাসপাতালে রোগী শূন্য। এদিকে রাজধানীতে বাইরের রোগীদের চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি আবার রাজধানীতে সংক্রমণও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০৪ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে একদিনে মারা গেছেন ৮২ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাতে শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৪৮৯ জন। এরমধ্যে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪ হাজার ৪৮০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৫০ শতাংশের বেশি। এ কারণে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের সিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাশের সংখ্যা বাড়ছে রোজ। হাসপাতালে আর খালি শয্যা নেই, আইসিইউ নেই, সিসিইউ নেই, ফ্লোরে ফাঁকা জায়গা নেই, জায়গা নেই করিডোরে, সিঁড়ির মুখে। একটি বেডের জন্য আরেকটি লাশ বেরোনোর প্রতীক্ষা। গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে বেড না পেয়ে অনেক রোগী আবার গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। তাদের ভাগ্যে কী হবে কে জানে?

No description available.

দেশের অর্ধশতাধিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে , জনবল সংকটে সেখান থেকে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। জনবলের অভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বন্ধ। এ কারণে রোগীরা ঢাকায় চলে আসছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, করোনায় মৃত্যু মাত্র ১ ভাগ। আক্রান্তদের মধ্যে ১০ ভাগের হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বাকি ৯০ ভাগের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা বাসায় আইসোলেশনে রেখে সুস্থ করা যায়। কিন্তু জনবল সংকটে উপজেলা হাসপাতালে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। দেশে প্রায় ৪০ হাজার বেকার ডাক্তার এবং সমসংখ্যক বেকার নার্স রয়েছেন। তাদের নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। সরকার জনবল সংকট নিরসন করতে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় কম। চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দিতে হবে। সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে।

শহীদ সোরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালে রোগীর চাপ প্রচণ্ড। আগত রোগীদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ঢাকার বাইরের রোগী। এই রোগীর চাপে পুরো হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল করার প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাপসাতালেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন রোগী আসছে। করোনা রোগী সামাল দিতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিশেহারা। ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালেও করোনা রোগীর প্রচণ্ড চাপ। এই হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা রোগীদের জন্য ৫০০ শয্যা আছে। রোগী ভর্তি আছে সাড়ে ৫০০। গড়ে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়। এর ৮০ ভাগ রোগীই ঢাকার বাইরের। করোনা রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
করোনায় আরও ১৮৭ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১২ হাজার ১৪৮ 

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবং কোভিড গাইডলাইন ও হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. একে আজাদ বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ১০ ভাগের হাসপাতালে যেতে হয়। ৯০ ভাগ রোগীকে উপজেলার মতো হাসপাতাল কিংবা বাসায় আইসোলেশনে রেখে সুস্থ করা যায়। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এখন মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যাচ্ছে। সামনে ঘরে ঘরে মানুষ সংক্রমিত হবে। কিভাবে সেটা সামাল দেওয়া হবে আল্লাহ জানে। ঢাকার হাসপাতালে এখনই বেড খালি নেই। উপজেলার হাসপাতালে তীব্র জনবল সংকট। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সংকট সবচেয়ে বেশি। ঠিকাদারের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ঠিকমতো বেতন দেওয়া হয় না। অনেকে ১৭ মাস ধরে বেতন পান না। গ্রামাঞ্চলের হাসপাতালে জনবল ৮০ ভাগই শূন্য। এই প্রেক্ষিতে উপজেলা পর্যায়ে ফিল্ড হাসপাতাল চালু করার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। দৈনিক ১২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু করোনা রোগীদের জন্য রাজধানীসহ সারাদেশে আইসিইউ বেড আছে প্রায় ৭০০। তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগের হাসপাতালে আসার প্রয়োজন হয়। উপজেলা হাসপাতালে জনবলসহ পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা থাকলে গ্রামের রোগীদের ঢাকায় আসার প্রয়োজন হতো না। উপজেলায় বেড ফাঁকা। অথচ ঢাকায় শয্যা খালি নেই। কোন কোন হাসপাতালে ফ্লোরে রেখে রোগীর সেবা দেওয়া হচ্ছে। অনেকে ভ্যাকসিন নিয়েও আক্রান্ত হচ্ছে। তাই মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, করোনা রোগী বাড়ছে। রাজধানীতে একই সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীও বাড়ছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। রাজধানীর হাসপাতালে বাইরের রোগীদের চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে।

প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ হাপসাতাল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার খান বলেন, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপে আমরা দিশেহারা। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সমানতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবা কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা সেবা থেমে নেই। বর্তমানে ভর্তি রোগীদের বেশিরভাগ ঢাকার বাইরের রোগী। করোনা রোগীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রেটও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানবতার সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা কোন লাভের হিসাব দেখি না। তবে সরকারিভাবে আমাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে না।

Content Protection by DMCA.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here