বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সারথি কবি-মাহবুবা আখতারের দুইটি কবিতা

305

এসো কিনি বেচা করি

        মাহবুবা আখতার 

শব্দের দ্রাঘিমায় হেঁটে যাই নিঃশব্দে একাকী
আহা কি চমৎকার সীমাবদ্ধতা,চমৎকার তার সীমান্ত।
কায়ক্লেশের অবাধ্য জীবন শোকে, দুঃখে মুহ্যমান,
ধ্যানমগ্ন ঈশ্বর চর্চাপদ খেয়ে ফেলে, আলস্যে নিঃসঙ্গ অতীতে ফিরে যায় বারবার।

ভাঙচুর,নেশায় চুর আবোল তাবোল নির্লজ্জ শ্রুতি বধির শিল্প,
সুরের লহরীতে উদোম শিল্প ছড়িয়ে রাখে বিমূর্ত প্রণয়।
নিঃসঙ্গ অপ্রাপ্তি সমূহ আলো-আঁধারির ছায়ায় দিশাহীন খুঁজে ফিরে আকাঙ্ক্ষার মোহর,
যৌবনের মত্ত উল্লাসে মুখর প্রমোদ পিপাসার জল
আহা!কি দুঃখময় কীর্তন।

সময় কি কখনো ফিরেছে সময়ের আবহে
ত্রিতাল শৈল্পিক সুধায় নর্তকীর প্রণয় আহবান। ছলকে পড়ে অমৃত পান পেয়ালা
মোহন মুদ্রায় খেলে জীবনের অকপট পান্ডুলিপি।
আহা! উন্মাদনা মিথ্যে ছলে হারিয়ে যায় চোখের গভীরতা,ঠোঁটের তৃষ্ণা
ইচ্ছে কি কখনো বেঁধে রেখেছে ইচ্ছেকে?

জানাজানির গাণিতিক হিসেব এখন অপেক্ষার বালুচর,
নদী ভাঙ্গে, জল স্রোত হারায়, অনার্য ভালোবাসা কুহক মায়ায় চাঁদ হয় চমৎকার মস্ত চাঁদ।
অজানা তৃষ্ণায় ক্ষুধার মৃত্যু ঘটে, লালা ঝরে বিষম লালা।

এসো আমরা কিনিবেচা করি,বেচে দিই পরম আত্মা, শর্তহীন বেচায় লোকসানটাই থাকুক।
আলো সরিয়ে গহন অন্ধকারে বেঁচে থাকি,
আত্মপ্রত্যয়ী বিশ্বাসী বন্ধু হই নিখাদ ইচ্ছেয় অহর্নিশ।
আহা কি অক্ষম আজ প্রার্থনার পাটাতন, ইচ্ছের
সমাহার।

কাবিননামার কস্তুরী
মাহবুবা আখতার

কবি সর্বভুক খেয়ে ফেলে সুখ, দুঃখ, প্রেম,ভালোবাসা,
কায়ক্লেশে যাপিত দিনে নরোম জোছনার জলে ডুবিয়ে
রাখে বসন্ত।
খেয়ে ফেলে বছর,মাস,দিন,শোভন সময়।
কবি খেয়ে ফেলে তার জন্ম,শৈশব, কৈশোর,
কালো শ্লেটে লিখে রাখে হিসেব বাড়ন্ত বেলার অস্পষ্ট
স্মৃতি।
দুর্দান্ত দুঃখী হয় কৈশোরের না পাওয়ার কষ্ট কাতরতার
আখ্যানে।

কবি নিঃশব্দে খেয়ে ফেলে যৌবন,
উচ্ছৃঙ্খল, বেপরোয়া জীবনের ভাঙচুর পদাবলী।
দুমড়ে মুচড়ে আকুল জড়িয়ে রাখে বাসনার টগবগ
যৌবন,
বাৎসায়নের রসায়নে মহাকাব্য লিখে রাখে বোধের আগুনে।
যৌবন স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন গুছিয়ে রাখে,প্রচন্ড উন্মাদনায়
ঝর তোলে
যৌবন পড়ন্ত আলোয় ক্লান্ত পথিকের মতো হেঁটে যায়
অচেনা পথে।

কবি সর্বভুক খেয়ে ফেলে সময়-অসময়,রাত -দিন,
সূর্য গ্রহণ-চন্দ্র গ্রহণ,
কবি খেয়ে ফেলে লজ্জা, ঘৃণা,দুঃখ,হতাশা, মারী।
ইচ্ছেরা শূন্যতার গহিনে শয্যা পাতে, উজান স্রোতে
পাল তোলে।
গুম হতে থাকে বাসনার বিলাস শুশ্রূষাহীন আদরে,
কবি তন্নতন্ন করে ছিড়ে রাখে যৌবনের বেবাক পলি।
কবি আঁধার খায়,কষ্ট খায়,জোছনার শরীর খায়,
নেতাদের নষ্টামি, জনসভা খায়,শ্লোগান খায়,ধর্মের মুখোশ খায়।
কবি ঠোঁট ডুবিয়ে ঠোঁট খায় খেয়ে নেয় যৌবনের শরীর।

কবি জলের আঁচলে জল বেঁধে হেঁটে যায়, হেঁটে যায় অনন্তলোকে,
মেঘের সাম্পানে আগুন পোড়ায়,আগুনে পোড়ে বুকের গৃহস্থালি।
জলের অতলে জমিয়ে রাখে প্রণয়ী ভৌগোলিক সীমানা
মুঠো মুঠো স্বপ্নরা বিষন্ন, বিষাদে বেঁচে দেয় দেহতত্ব।
কবি বিশ্বাসে এঁটে রাখে “কাবিননামার” কস্তুরি কৌটো
বুকের অলিন্দে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here