দৈনিক আলাপ ওয়েবডেস্কঃ মাদক আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও এক দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
রিমান্ড ও জামিন আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
আদেশে তিনি বলেন, আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এক দিনের জন্য হেফাজতে নিয়ে পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিআইডি। রিমান্ডের বিষয়ে হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
গত ৪ আগস্ট রাতে ঢাকার বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদক আইনে এ মামলা করা হয়। জব্দ তালিকায় পরীমনির বাসা থেকে ‘মদ এবং আইস ও এলএসডির মতো মাদকদ্রব্য’ উদ্ধারের কথা বলা হয়।
এ মামলায় এর আগে দুই দফায় ছয় দিন রিমান্ডে নিয়ে পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে গত ১৩ অগাস্ট পরীমনিকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।
পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান গত ১৬ অগাস্ট আবারও জামিনের আবেদন করলে আদালত বুধবার শুনানির দিন রেখেছিল।
কিন্তু এর মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তাফা নতুন করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বুধবার সেই জামিন শুনানি আর হয়নি।
বুধবার দুপুরে ঢাকার মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস আসামির উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির সিদ্ধান্ত দিলে একই সঙ্গে নতুন করে জামিন আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবী মজিবুর রহমান।
সেই শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পরীমনিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে আসা হয়।
তৃতীয় দফা রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মামলার ঘটনা ও নেপথ্যের হোতাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার দেওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।… এ অবস্থায় মাদক ব্যবসার হোতাদের গ্রেপ্তার, মাদকদ্রব্যের মজুদ উদ্ধারসহ মাদক ব্যবসার পেছনে অর্থের যোগানদাতাদের খুঁজে বের করার জন্য পুনরায় ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।”
এর বিরোধিতা করে পরীমনির আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান শুনানিতে রিমান্ড সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা এবং আপিল বিভাগের নির্দেশনাগুলো আদালতের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “সব তথ্য উদঘাটন করা হয়ে গেলে আর কোনো রিমান্ডের দরকার হয় না। আসামিকে শনাক্ত করা হয়ে গেলে, রিমান্ডের আর যৌক্তিকতা থাকে না। একটা তথ্যও উদ্ধারের বাকি রাখেনি তদন্ত কর্তৃপক্ষ। এলএসডি কয়টা , আইস কয়টা সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য রিমান্ড আবেদনে নেই।
“র্যাব-পুলিশ কারো বাসায় অভিযান পরিচালনা করতে গেলে অব্যশই তার পারমিশন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কী কায়দায় কী পদ্ধতিতে অভিযান পরিচলনা করা হল আদালত তা জানেন।”
আইনজীবী বলেন, “পরীমনিতো খুনি নয়। সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য নয়। জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ানোর চেষ্টা চলছে। তা যদি হয়, আদালত তাদের বারিত করবেন। আইনে আছে, তদন্তে সহায়তার নামে যদি চাপ প্রয়োগ করা হয়, সেই স্বীকারোক্তি আদালত গ্রহণ করবেন না, বাতিল করবেন।
“যদি আজ তাকে আবারো রিমান্ডে নেওয়া হয়, আইন-আদালত সম্পর্কে কী ধারণা সমাজ পোষণ করবে? পরপর যদি রিমান্ডের নামে হয়রানি করা হয়…. রিমান্ড আর কেন প্রয়োজন?”
মজিবুর রহমান বলেন, পুলিশ প্রয়োজনে জেলগেইটে আসামিকে আরও জিজ্ঞাসাবদ করতে পারে। রিমান্ডের কোনো ‘প্রয়োজন এখানে নেই’।
“এ মামলায় অন্য হিডেন ফ্যাক্টস যদি থাকে, তার ভিকটিম পরীমনিকে হতে হবে কেন?”
জামিন আবেদনে তিনি বলেন, “আমরা প্রয়োজনে প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দেব। আরো কোনো কঠিন শর্ত দিলেও যে কোনো শর্তে আমরা তার জামিন চাই।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন , “আসামি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অপকর্মগুলো করেছে। তার কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। সে একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হোক।”
বেলা ১১ টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর ১২ টা ২০ পর্যন্ত পরীমনির রিমান্ড ও জামিন শুনানি চলে। কয়েকশ আইনজীবীতে ঠাসা এজলাসে এদিন শুনানির সময় তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
শুনানির পর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, পরীমনি বিচারকের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু এর পরপরই পরীমনিকে এজলাস থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
নড়াইলের মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি ঢাকার চলচ্চিত্রে পরীমনি নামে অভিষিক্ত হন ২০১৫ সালে। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলে তুমুল আলোচনার জন্ম দেন তিনি।
সেই আলোচনার মধ্যেই গত ৪ আগস্ট রাতে ঢাকার বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। তাকে গ্রেপ্তার করার পর বনানী থানায় মাদক আইনে এ মামলা করা হয়।
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ রেখেছে আদালত।