মুহিবুল্লাহ: রোহিঙ্গা নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উখিয়া থানায় ‘অজ্ঞাতনামা আসামী’র বিরুদ্ধে পরিবারের মামলা, একজন আটক

191

দৈনিক আলাপ ওয়েবডেস্কঃ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে একজনকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়ন, এপিবিএন।

এপিবিএন ১৪’র কমান্ডিং অফিসার পুলিশ সুপার নাইমুল হক জানান আজ (শুক্রবার) সকালে কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ঐ ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

মি. হক বলেন, “সকাল ১১ টার দিকে ক্যাম্পের ভেতর থেকে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এরপর তাকে উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় গতকাল তার পরিবারের পক্ষ থেকে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনজুর মোর্শেদ জানান অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে নিহত মি. মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ মামলাটি দায়ের করেছেন।

মি. মোর্শেদ বলেন, “অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামীর কোনো সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।”

বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পের ভেতরে বন্দুকধারীদের গুলিতে রোহিঙ্গাদের একজন শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত হন।

মি. মুহিবুল্লাহ ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান।

তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

হত্যাকাণ্ডের সাথে তার পরিচিত ব্যক্তিরা জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

কক্সবাজারে কুতুপালং ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়ন ১৪’র কমান্ডিং অফিসার পুলিশ সুপার নাইমুল হক বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “যেহেতু হত্যাকারীরা তার কাছে যেতে পেরেছিলেন এবং তার সাথে দেখা করতে পেরেছিলেন, তারা তার পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন বলেই প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে।”

মি. মুহিবুল্লাহ
ছবির ক্যাপশান,রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন মি. মুহিবুল্লাহ

যেভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নেতা হয়ে উঠেছিলেন মুহিবুল্লাহ

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন পীড়নের মুখে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়, মি. মুহিবুল্লাহও সেসময়ই বাংলাদেশে এসেছিলেন।

মি. মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারের রাখাইনের প্রদেশের মংডু টাউনশিপের বাসিন্দা।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঐ এলাকায় অভিযান শুরু করার পর প্রাণ রক্ষার্থে তিনি পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং সীমান্ত অতিক্রমের পর আশ্রয় নেন কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে।

কক্সবাজারের সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন বাস্তুচ্যুত এই রোহিঙ্গাদের জন্য সেসময় একজন গ্রহণযোগ্য নেতার অভাব ছিল। গত কয়েক বছর ধরে সে অভাব পূরণ করেছিলেন মি. মুহিবুল্লাহ।

“তিনি মানুষের সাথে কথা বলতেন খুব গুছিয়ে, মানুষকে বোঝানোর শক্তিটা তার খুব প্রবল ছিল। আরাকানের মূল সমস্যা, রোহ্ঙ্গিাদের জাতিগত সমস্যা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়গুলো সবই তিনি রোহিঙ্গাদের মাঝে বুঝিয়ে বলতে পারতেন।”

রোহিঙ্গা মহাসমাবেশ ২৫শে অগাস্ট ২০১৯
ছবির ক্যাপশান,মি. মুহিবুল্লাহর ডাকে ২০১৯য়ে আয়োজিত রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে মহাসমাবেশে যেখান রোহিঙ্গারা বলেন নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিতের দাবি পূরণ হলেই কেবল তারা মিয়ানমার ফেরত যাবেন

রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল যখন বাংলাদেশে আসে, তখন আন্তর্জাতিক সংস্থার যেসব প্রতিনিধি ও কর্মকর্তা রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে গিয়েছিলেন, তখন “তাদের সাথে কথা বলার মত একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন তিনি, এবং তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা।”

২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার গণহত্যা বিরোধী যে মহা সমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। তার ডাকেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই বিশাল সমাবেশ।

গণহত্যা বিরোধী ওই সমাবেশ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিল। ওই সমাবেশের লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয় এবং তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাবার ক্ষেত্রে শর্তগুলো বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য রাখার জন্য ২০১৯ সালে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন মি. মুহিবুল্লাহ। সেসময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের জন্য হোয়াইট হাউসেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাকে।https://bbc.com/ws/av-embeds/cps/bengali/news-58758059/p09xc9fv/bn

Content Protection by DMCA.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here