ডাক্তার রীতা ওঝা এর প্রেম ও ভালবাসার এক জীবন ধর্মী লেখা “বাঁশির সুরের অমিয় ধারা”

819

বাঁশির সুরের অমিয় ধারা

রীতা ওঝা

.
বাঁশি শব্দটি শুনলেই কানে দোলা দেয় সুরতরঙ্গ, মনে বয়ে যায় আবেগী বাতাস। যুগে যুগে বাঁশি তার সুরের জাদুতে মাতিয়ে রেখেছে মানুষ, প্রকৃতি ও পরিবেশকে।

মনে পড়ে সেই ছোট্টবেলার কথা। মেলায় গেলে বিভিন্ন জিনিস কেনার মধ্যে বাঁশি ছিল অন্যমত। শব্দ হবে না, এমন জিনিস না কিনলে মেলায় আড্ডা জমে না। আর বাঁশি বাজিয়ে বাড়িতে আসার সময় আশেপাশের লোকজনকে বিরক্ত করার আনন্দই আলাদা। বাড়িতে বসে বাজালে বড়দের বকা খাওয়া, বাঁশি নিয়ে মারামারি করা, কারও কানের কাছে গিয়ে ফুঁ দেয়া, লুকিয়ে রাখার মজাটা অন্যরকম। বয়সের সাথে সাথে মনের ভাবনাও পরিবর্তিত হয়। বাঁশির সুরে নেচে ওঠে কারও হৃদয়, কারও মন ভালো হয়ে ওঠে, করো প্রার্থনার ভাব জেগে ওঠে, কারো মনে সুন্দর চিন্তাভাবনা চলে আসে, কবি কবিতা লেখা শুরু করে, গায়কের কণ্ঠ থেকে আসে সুমধুর স্বর, রোগীর হৃদয়ে জেগে উঠতে থাকে সুস্থভাবে বাঁচার স্বপ্ন, কারও হৃদয় নিমগ্ন হয় গভীর অনুভূতিতে, আর প্রেমিক-প্রেমিকার বুকের মাঝে দোলা দেয় আবেগের অবিনাশী ঢেউ।

প্রকৃতিও বাঁশি বাজায় নিজের মতো করে। অপরূপ সৌন্দর্য আর মাদকতায় মুগ্ধ করে রাখে চারপাশ। মৃদুমন্দ বাতাস আর ফুলের মনমাতানো সুগন্ধ, ভ্রমরের গুঞ্জন, প্রজাপতির ডানার ঝংকার, রঙ-বেরঙের ফুলের বাহার, কীটপতঙ্গের নৃত্য ও প্রাণীদের কলকাকলি, বৃক্ষের মাথা নত হওয়া, ঝর্ণার জলধারা, নদীর কলতান, মাঝিদের ভাটিয়ালি গানের সুর সব মিলিয়ে প্রকৃতির মাঝে চলে এক অসাধারণ রূপের অপরূপ বহিঃপ্রকাশ।

বাঁশির সুরে আবার কারও হৃদয় ভেঙে যায়। কিন্তু খারাপ বা ধ্বংসের কারণ না ভাবাই শ্রেয়। বাঁশি বা অন্য কোনো কিছুকেই মোহ, আকর্ষণ ও সংস্কৃতির রক্ষক হিসাবে দেখা ঠিক নয়। বাঁশিকে কখনো বিনাশের অস্ত্র না ভেবে সৃষ্টির সহায়ক ভাবাই উত্তম। কেন না বাঁশি এনেছে প্রেম, জাগিয়ে তুলছে বিশুদ্ধ ভালোবাসা।আর প্রেমই পারে এই সভ্যতার যুগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, মানুষের হৃদয়ে আস্থা গড়ে তুলতে, প্রকৃতিকে ও প্রকৃতির সমস্ত সৃষ্টিকে ভালোবাসতে। প্রেম প্রতিষ্ঠিত করে পবিত্রতার প্রতীক, এনে দেয় শান্তিপূর্ণ জীবন ও হৃদয়ের পরিতৃপ্তি।
আর প্রেম জাগানিয়া উপকরণগুলোর মধ্যে বাঁশি অন্যতম। বাঁশির অমিয় সুরে শুদ্ধতা আসুক ধরণীতে, পরম আনন্দে মেতে থাকুক প্রতিটি হৃদয়।
.
বাঁশি বেঁচে থাক বেঁচে থাকি মোরা
বেঁচে থাক শুভ সুর
পার্থিব সব হতাশা-প্রাচীর
চলে যাক বহুদূর।

লেখকঃ – প্রভাষক ,ফিজিওলজি ও বায়োকেমিষ্ট্রী ডিপার্টমেন্ট , ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, মিরপুর,ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here