“তাসমিয়াহ” ধর্ম দর্শনের লিখা লিখেছেন শারমিন সিদ্দিকী

1552
“তাসমিয়াহ” ধর্ম দর্শনের লিখা লিখেছেন শারমিন সিদ্দিকী

তাসমিয়াহ

              শারমিন সিদ্দিকী

“তাসমিয়াহ” শব্দটি আরবি শব্দ। এটি একটি বাক্যের নাম। আর এই বাক্যের মধ্যে অনেক কল্যাণ নিহিত আছে। সেজন্য একে “নাম বাক্য” বা ” কল্যাণ বাক্য” বলা হয়। তাসমিয়াহ বাক্যের উচ্চারণ হচ্ছে ——– “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”।
যার অর্থ — পরম করুনাময় আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।

তাসমিয়াহকে কুরআনের মুকুট বলা হয়। এই আয়াত দ্বারাই সর্বপ্রথম কুরআন অবতীর্ণ হয়।হযরত নবী করিম (স) বলেছেন — ইহা কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত। এই আয়াতের মধ্যেই লুকায়িত আছে আল্লাহপাকের পবিত্র দুটি নাম রহমান ও রাহীম। আল্লহ পাকের পবিত্র এই নাম দুটি সংযোজিত আছে বলেই এর মর্যাদা অসীম। আর ফজিলতও অনেক বেশি। আল্লাহ পাকের জাত নাম “আল্লাহ” র সাথে এই গুণবাচক নাম দুটি সংযোজিত আছে বলেই একে “তাসমিয়াহ” বলা হয়।
তাসমিয়াহ মুসলমানদের ধর্ম ও কর্ম জীবনের বিভিন্ন অবস্থায় আল্লাহ পাকের অসীম দয়া ও করুণা বর্ষিত করে। এমনকি মানুষের জাগতিক ধ্যান ও সাধনাকে জাগিয়ে রাখতে শিক্ষা দেয়। দুনিয়ার সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহ পাকের হুকুমে হচ্ছে। তার হুকুম ব্যাতীত কোন কাজ বা বস্তুর অস্তিত্ব লাভ হয় না। এজন্য কোন কাজ শুরু করার আগে আল্লাহ পাকের করুনাময় নাম স্মরণ করে তার দয়ার আশ্রয় নিতে হয়। হযরত নবী করিম (স) বলেছেন — কোন ভালো কাজ শুরু করার আগে “তাসমিয়াহ” পড়ে শুরু না করলে তা বরকত শূন্য হয়ে যায়। তাসমিয়াহর ফজিলত অনেক ঊর্ধ্বে। যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। তাসমিয়াহতে আল্লাহ পাকের দয়া ও অনুগ্রহের নিদর্শন আছে বলে পাক কুরআনে সূরা “তাওবা”র প্রথমে তাসমিয়াহ দেয়া হয়নি। কারণ সূরা তাওবায় শুধু জিহাদের বর্ননা দেয়া আছে।

হযরত নবী করিম (স) যখন মেরাজ গমন করেন, তখন তিনি আল্লাহ পাকের কাছে নিবেদন করলেন — বেহেশতে হাউজে কাওছারের উৎস কোথায় তা জানার জন্য। তখন আল্লাহ পাক আদেশ দিলেন, হে রাসুল! তুমি নহরটির পাড় ধরে এর উৎসস্থলের দিকে এগিয়ে যাও। আল্লাহর নির্দেশ মতো নবী করিম (স) নহরটির পাড় ধরে হাটতে শুরু করলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তিনি অনেক দূর যাওয়ার পরও হাউজে কাওছারের উৎসস্থলের সন্ধান পেলেন না। পুনরায় নবী করিম (স) আল্লাহ পাকের নিকট আরয করলেন, হে আমার আল্লাহ! আপনি দয়া করে হাউজে কাওছারের উৎসস্থল আমায় দেখিয়ে দিন। তা না হলে আমার পক্ষে ইহা দেখা সম্ভব নয়। তখন আল্লাহ পাক বললেন, হে রাসুল! তুমি ” বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম” বলে অগ্রসর হও। তখন নবী করিম (স) “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বল্য সামান্য পথ অতিক্রম করতেই দেখতে পেলেন, একটি বিরাট বাক্সের মধ্য হতে হাউজে কাওছারের নহর প্রবাহিত হচ্ছে। নবী করিম (স) আল্লাহ পাকের নিকট আরয করলেন, হে পরওয়ারদিগার! এই বাক্সের ভিতর কি আছে আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে। আল্লাহ পাক বললেন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে তুমি বাক্সের দরজায় আঘাত করো। নবী করিম (স) “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম” বলে বাক্সের দড়জায় আঘাত করলেন আর বাক্স খুলে গেল। তিনি দেখতে পেলেন ঐ বাক্স ভিতরে শুধু বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম লিখা আছে। বিসমিল্লাহর মীম অক্ষরের প্রান্ত হতে হাউজে কাওছারের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হচ্ছে। আর হযরত মুহাম্মদ (স) এর মুহাম্মদ নামের প্রথম অক্ষর মীম দ্বারা লিখিত। এতে স্পষ্ট ভাবে বুঝা যায়, হাউজে কাওছারের ঝর্ণাধারা নবী করিম (স) এর সাথে সম্পৃক্ত।

এবার তাসমিয়াহ বাক্যের কিছু ফজিলত তুলে ধরছি —

১. হযরত নূহ (আ) এর সময় যখন মহাপ্লাবন হয়,তখন তিনি বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম বলেই রক্ষা পেয়েছিলেন।

২. ফেরাউন তার স্ত্রী বিবি আসিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় রাগান্বিত হয়ে ফেরাউন তার স্ত্রীকে ফুটুন্ত তেলে নিক্ষেপ করেন।কিন্তু বিবি আসিয়া এই তাসমিয়াহ শরীফ পাঠের বরকতে ফুটন্ত তেলের মধ্যে নিরাপদে ছিলেন।

৩. নমরুদের মেয়ে বিবি রহিমা এই তাসমিয়াহর গুনে ভীষণ আগুন হতে রক্ষা পেয়েছিলেন।

৪.ফেরাউন যখন বুঝতে পেরেছিল যে, এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই এবং তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত অনিবার্য। তখন তিনি নিজের প্রাসাদের দড়জায় পবিত্র তাসমিয়াহ শরীফ লিখে রাখায় বহুদিন পর্যন্ত তিনি আল্লাহর আযাব হতে নিরাপদে ছিলেন।

৫. একদা রোমের সম্রাট মাথা ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। কোন চিকিৎসকই তার মাথা ব্যাথা কমাতে পারেননি। তখন হযরত ওমর (রা) শুধু তাসমিয়াহ লিখিত টুপির দ্বারা রোমের সম্রাটের মাথা ব্যাথা আরোগ্য করেছিলেন।

৬.হযরত খালিদ (রা) একজন অগ্নি পূজকের প্রস্তাব অনুসারে ইসলামের গৌরব প্রতিষ্ঠার জন্য তাসমিয়াহ পাঠ করে বিষ পান করেছিলেন। আর এই বিষে তার কোন ক্রিয়া করে নাই।

৭.প্রত্যেক দিন বেশি বেশি তাসমিয়াহ পাঠ করলে রুজি বৃদ্ধি হয় এবং পাঠকের চেহারা চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল হয়।

৮.হযরত জাবের (রা) হতে বর্ণিত, যখন তাসমিয়াহ বাক্য বা বিসমিল্লাহ আয়াত নাযিল হয়, তখন মেঘ প্রবল বেগে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে গমন করতে থাকে। বায়ু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।সাগরের পানিতে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। আর সমস্ত প্রাণী উহা নিরবে শ্রবণ করতে থাকে। শয়তান পলায়ন করে। আল্লাহ পাক তার নিজের মর্যাদা ও শক্তির শপথ করে বলেন, যে ব্যাক্তি কোন কাজ আরম্ভ করার পূর্বে তাসমিয়াহ পাঠ করবে,আমি অবশ্যই ঐ কাজের বরকত দান করবো।

উপরের ফজিলত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে,প্রত্যেক মুসলমান ব্যাক্তিরই তাসমিয়াহ বাক্য পাঠ করা উচিৎ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here