ইলমে মারেফাত
শারমিন আ-ছেমা সিদ্দিকী
ইলমে মারেফত কি?
মারেফাত আরবি শব্দ। ইসলাম ধর্মে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের দ্বিতীয় স্তর।
বর্তমান সময়ে ইলমে মারেফাত আবশ্যক না অনাবশ্যক সে সম্বন্ধে নানারকম মতভেদ শোনা যায়। কিছু সংখ্যক আলেম মারেফাত কিছু সংখ্যক মুস্তাহাব আবার কিছু সংখ্যক মুস্তাহাবও বলেন না বরং বেহুদা বলে থাকেন।এমন কি কেউ কেউ গ্রীস বা পারস্য দেশের দর্শনশাস্ত্র হতে মারেফাতের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করে থাকেন। এর কোনটি সত্য তা বোঝা মুশকিল।
এখন জানা প্রয়োজন যে, মারেফাত আবশ্যক ও অনাবশ্যক সম্বন্ধে কোরআন হাদিস ও মো’তেবর কিতাবে কোন উল্লেখ আছে কিনা?এবং বিচার করে দেখা উচিৎ কোন শ্রেণীর লোক কি বলে আর আমাদের কোন মদ গ্রহণ করা আবশ্যক।
পবিত্র কুরআন, হাদীস ও বহু মো’তাবের কিতাবে এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তাই ইলমে মারেফাত আবশ্যক।
ইলমে মারেফতের ব্যাখ্যা:
একটু চিন্তা করলেই দেখা যায় যে, যারা শুধুমাত্র ইলমে জাহের শিক্ষা করেছেন তারাই মারেফাত কে মুস্তাহাব ও বেহুদা বলে আসছেন।আর যারা শরীয়ত, মারেফত, তরিকত, ও হাকীকত এই চারটি বিদ্যায় বিদ্যায় বিদ্বান তারা মারেফতের ফরজ বা অত্যাবশ্যক বলেছেন।
জাহেরী বিদ্যার আলেমগণ বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) সকল সাহাবীদেরকে মারেফাত শিক্ষা দেন নাই তা সত্য বটে, কিন্তু তার কারণ হচ্ছে তরিকতের বুঝ বা ভাবার্থ খুব দুরূহ ও ইহার সাধনা অনেক কঠিন বলে সাধারণ নবীদীক্ষিত মুসলমানদেরকে সেই আধ্যাত্মিক বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়নি। বিশেষত: তৎকালের আরব জাতি ঘোর বর্বরতা, পৌত্তলিকতা ও জাহেলিয়াতে পতিত ছিল। ঐসকল আধ্যাত্বিক বুঝের শিক্ষা গ্রহণ করার ক্ষমতা তাদের ছিল না। তখন মুনাফিকের সংখ্যাও ছিল অধিক। কুরআন শরীফের বহু স্থানে বহু বার তাদের বিষয় উল্লেখ আছে।ওই প্রকার সাধারণ লগের দীক্ষিত মুসলমানদেরকে বাতেনের বুঝবা ভাবার্থ শিক্ষা দিলে তারা বুঝতে না পেরে কাফেরদের নিকট ওসব কথা বিকৃতভাবে ব্যক্ত করে ফাসাদের সৃষ্টি করতে পারে ——এরূপ সম্ভাবনা ছিল। সেজন্য ওই বাতেনী শিক্ষা সাধারন মুসলমানদের দেয়া হয়নি। কিন্তু যারা পৌত্তলিকতা ওজাহেলিয়তা ভুলে ইসলামের বুঝ বা ভাবার্থ পেয়েছিল এবং রাসুলুল্লাহ (স)এর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ভক্তি জন্মেছিল তাদেরকেই রাসুল (স) ইলমে মারেফত শিক্ষা দিয়েছিলেন।
এই ইলমে মারেফাত গ্রহণকারীদের আসহাবে সোফ্ফা বলা হতো।তাদের দ্বারা রাসুল (স) এর পরবর্তী সময়ে সুফি দল বৃদ্ধি পেতে থাকে ও প্রাধান্য লাভ করে এবং সুফি মত প্রকাশ হয়ে পড়ে।
হযরত মুয়াবিয়া (র) ইন্তেকালের পর এজিদ সমস্ত মুসলিম জাহানের খেলাফত দাবি করেন।মারেফত পন্থীগণ তখন এজিদকে খলিফা হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং বলেন ——- “এজিদের মারেফতের জ্ঞান নাই।সুতরাং এজিদকে খলিফা নিযুক্ত করলে ভবিষ্যতে মারেফাত স্বীকার করবে না বরং মারেফাতকে নষ্ট করে দেয়ার চেষ্টা করবে। আর মারেফাত না থাকলে শ্বাস শূন্য ফলের ন্যায় হবে। সুতরাং ভবিষ্যতে ইসলাম নষ্ট হয়ে যাবে।
তাই মারেফাত পন্থীগণ আহলে বায়াতের দিকে অধিক আকৃষ্ট হয়ে পরে এবং এজিদকে খলিফা স্বীকার করতে ও তার অধিনস্ত ও বশ্যতা বা বায়াত গ্রহণ করতে অসম্মত হন।
তারা হযরত ইমাম হাসান (র)ও হযরত ইমাম হোসেন (র) তরিকতের ইমাম ও তাদের দলের দলপতি সাব্যস্ত করে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।
যারা মারেফাত কে নববিধান গ্রীস বা দর্শনশাস্ত্র হতে ইসলামে প্রবিষ্ট হয়েছে বলেছেন —-তাদের ভাবার্থের ভুল হয়েছে। কেননা রাসূল স্বয়ং নিজে বহুসংখ্যক সাহাবাকে মারেফত শিক্ষা দিয়েছেন।
এমনকি পুরুষ ও মহিলাদের বেশি ভিড় হওয়ার কারণে মহিলাদের জন্য দিন ভাগ করে দিয়েছিলেন তাদের দ্বারাই রাসুল(স) পরবর্তী সময় বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আস্তে আস্তে সুফি মত প্রকাশ হয়ে পড়ে।
তাসাউফের বিষয়গুলো কোরান হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে।যারা শরীয়ত মারফত তরিকত হকীকত এই চারটি বিদ্যায় পারদর্শী তারা নিশ্চয়ই আলী আল্লাহ ।তাদের অন্তর চক্ষু খোলা—–। অলী আল্লাহদের প্রশংসা কোরআন ও হাদিসের বহুস্থানে উল্লেখ আছে।