দৈনিক আলাপ ওয়েবডেস্কঃ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ছয় শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় মাদ্রাসাশিক্ষক মঞ্জুরুল কবির মঞ্জুর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। আজ শনিবার রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, ‘শিক্ষককে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁকে লক্ষ্মীপুর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।’
এর আগে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বামনী ইউনিয়নের কাজিরদিঘীরপাড় এলাকা থেকে মঞ্জুরুল কবিরকে আটক করে পুলিশ।
মঞ্জুরুল কবির মঞ্জু হামছাদী কাজিরদিঘীরপাড় আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এবং বামনী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির।
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ‘মাদ্রাসার দাখিল শ্রেণির বেশ কয়েক জন ছাত্রের চুল লম্বা থাকার কারণে তাদের সতর্ক করা হয়েছিল চুল কেটে আসার জন্য। তবে, তারা চুল না কেটে আসার কারণে যে একজন শিক্ষক আরও কয়েক জন শিক্ষকের সহযোগিতায় ছয়-সাত জন ছাত্রের চুল জোরপূর্বক কেটে দিয়েছে বলে একটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। জানতে পেরে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই। সেই সহকারী শিক্ষককে আমরা আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসি। এরপর এক ছাত্রের মা বাদী হয়ে শিশু আইনে মামলা করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এর আগে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল গতকাল জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির মঞ্জুকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা গত বুধবার শ্রেণিকক্ষে পাঠ্য কার্যক্রমে অংশ নেয়। একপর্যায়ে শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির দাখিলের ছয় ছাত্রকে শ্রেণিকক্ষের সামনের বারান্দা আসতে বলেন। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে একটি কাঁচি এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো সবার মাথার টুপি সরিয়ে সামনের অংশের চুল এলোমেলোভাবে কেটে দেন।
পরে শিক্ষার্থীরা লজ্জায় ক্লাস না করেই বেরিয়ে যায়। এ ঘটনার এক মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আজ সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে কয়েক জন ছাত্রকে কাঁদতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে হামছাদী কাজির দিঘীরপাড় আলিম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি রোটারিয়ান রফিকুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘এ ব্যাপারে শিক্ষকদের সচেতন করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীদের কোনো অভিভাবকই আমাদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেননি। শিক্ষককে গ্রেপ্তার না করে, ভবিষ্যতের জন্য সচেতন করে ছেড়ে দেওয়া যেত।’
অভিযুক্ত শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির এ বিষয়ে বলেন, ‘তাদের (ছাত্রদের) সপ্তাহব্যাপী সতর্ক করার পরও বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার জন্য মাদ্রাসা কমিটি, আমিসহ আরও তিন শিক্ষকের উপস্থিতিতে চুল কেটে দিয়েছি। একটি পক্ষ মাদ্রাসার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।’
এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় হয়। অপমান সইতে না পেরে শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন তুহিন ছাত্রাবাসে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে তদন্ত কমিটি ছাত্রদের চুল কেটে দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
এর মধ্যেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হামছাদী কাজীর দীঘিরপাড় আলিম মাদ্রাসায় ছয় ছাত্রের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।