১১ই জুলাই ১১ এর স্মৃতিচারন
আনজানা ডালিয়া
২০১১ সালের ১১ই জুলাই মিরসরাই স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল ম্যাচ শেষে বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থীবাহী মিনি ট্রাকটি খাদে পড়ে ৪৫ জন শিক্ষার্থী অকালে ঝরে যায় আবুতোরাবের ৪ টি গ্রামের।দেখতে দেখতে ১২ বছর পুর্ণ হলো মিরসরাই ট্রাজেডির। কেঁদেছিলো মিরসরাই,কেঁদেছিলো বিশ্ববাসী।৪২ জন ছাত্র,দুই ফুটবল প্রেমী ও এক অভিভাবকসহ ৪৫ টি প্রান হারিয়েছি আমরা। আমি মিরসরাইবাসী ।আবার একজন সেবাকর্মী।স্মৃতিচারন করতে গিয়ে আজো চোখ ভিজে উঠে।বাচ্চাগুলোকে প্রথম মাতৃকা হাসপাতালে আনা হয়।প্রতিটা বাচ্চাকে ছুঁয়েছি ।নিষ্পাপ মুখগুলো অক্সিজেনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো।কোন বাচ্চা পানি ভেজা চুপচুপে ,কোন বাচ্চা নাকে মুখে কাদা ঠাসা।মিরসরাই এর সর্বস্তরের মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে বাচ্চাগুলো তুলে আনে একের পর এক।দেখেছি লাশের পর লাশ। দেখেছি স্বজনের আহাজারি।সারাজীবন ভুলতে পারবোনা ১১ ই জুলাই এর স্মৃতি। সব বাচ্চা যে মৃত পেয়েছি তা নয় কিছু বাচ্চার কথা পেয়েছি,বাবার নাম বলেছে, গ্রামের নাম বলেছে, অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার দিয়েছে। তারপর ধীরে ধীরে অবস্থা খারাপ হয়েছে ওদের।যাদের একটু আশা ছিলো তাদের চট্রগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।লাসের স্তুপটা থানায় স্থানান্তর করা হয়।কাজ করেছি ঘোরের মধ্যে ।সেসময় শুধু শোকের মাতম ছিলো সবার মাঝে। ঘোর কাটলে ভাবলাম এসব কি দেখলাম!এতো লাশ একসাথে কখনও দেখিনি।যা আজো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে।কত যন্ত্রনা ওদের স্বজনরা বুকে ধারন করে আছে। আজো সে কান্না থামেনি।
আজো তাঁড়া করে ফিরে আমাকে সেদিনের নির্মম ভয়াবহ স্মৃতি। তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্মৃতিস্তম্ভ অন্তিম হয়েছে।অন্তিম দাড়িয়ে আছে সেই সর্বনাশা খাদের বুকে।
কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম অন্তিম এর কাছে। অন্তিম এ হাত ছোঁয়াতেই মনে প্রশান্তি এলো।মনে হলো সেদিনের মতো কচি প্রান গুলোর গায়ে হাত বুলাচ্ছি।কামনা করি সন্তান হারা মা বাবা অন্তিম এ এসে প্রশান্তি পাক।অন্তিম এ লেখা নাম গুলোতে হাত বুলিয়ে সন্তানের ছোঁয়া পাক মনে মনে।কামনা করি ভালো থাকুক খালি বুক গুলো। ঠিক তেমনি কামনা করি ওপারের নিষ্পাপ আত্মা গুলো ভালো থাকুক।