সুরের পাখি রুনা লায়লার জন্মদিন আজ

432
দেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা

দৈনিক আলাপ ওয়েবডেস্ক: কণ্ঠের জাদুতে দীর্ঘদিন ধরে সবাইকে মুগ্ধ করে যাচ্ছেন সংগীত জগতের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা। তাঁর গান মানেই যেন শ্রোতাদের মনোজগতে অন্যরকম এক ভালোলাগার দোলা। কয়েক দশক ধরে খ্যাতির চূড়ায় অবস্থান করা উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কণ্ঠশিল্পীর ৬৭তম জন্মদিন আজ। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

রুনা লায়লার বাবার নাম এমদাদ আলী ও মায়ের নাম অনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা। সংগীতময় পরিবেশে বেড়ে ওঠেন রুনা। তাঁর মা সংগীতশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। বিখ্যাত সংগীতশিল্পী সুবীর সেন রুনা লায়লার মামা।

বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে যাত্রা শুরুর পর এই রুনা লায়লা এখনো ছড়িয়ে যাচ্ছেন কণ্ঠের মায়াজাল, মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখছেন কোটি শ্রোতাকে। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, বালুচ, অ্যারাবিক, ফারসি, মালয়, নেপালিজ, জাপানিজ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৮টি ভাষায় গাইতে জানেন গুণী এই সংগীত শিল্পী। শুধু গান নয়; তাঁর সাজসজ্জা, পোশাক, গায়কী ঢং থেকে শুরু করে সবকিছুকে অনুসরণীয় মনে করেন নানা প্রজন্মের অনুসারীরা।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই রুনা লায়লা চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় ও পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। এ ছাড়া চলচ্চিত্রের গানে পাঁচ দশক ধরে কণ্ঠ দিয়ে যাচ্ছেন। রুনা লায়লার গানের রূপ, রস, গন্ধ সব বয়সী শ্রোতাকে মুগ্ধ করে। আর তাঁর গানের তালে তালে নৃত্য, হাতের ভঙ্গিমা ও ফ্যাশনে তিনি তৈরি করেছেন স্বকীয়তা। ছোটবেলায় কত্থক, ভরতনাট্যম ও কথাকলি নাচ শিখেছেন।

রুনা লায়লার শৈশব কেটেছে পাকিস্তানের করাচিতে। ১৯৫৫ সালের মার্চে রুনার যখন আড়াই বছর বয়স, তখন তাঁর বাবা রাজশাহীর এমদাদ আলী বদলি হন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে। সেখানেই বড় হয়ে ওঠা তাঁর।

পাঁচ দশকের সংগীতজীবনে লোকজ, পপ, রক, গজল, আধুনিক—সব ধাঁচেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন রুনা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষায় তাঁর কণ্ঠে গান শোনা গেছে। এ পর্যন্ত গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।

নব্বইয়ের দশকে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি সুরকার নিসার বাজমির সুরে একদিনে ১০টি করে তিন দিনে ৩০টি গানে কণ্ঠ দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান রুনা। সিনেমায় প্লেব্যাক করে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয়বার। সিনেমাগুলো হলো—‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘যাদুর বাঁশী’(১৯৭৭), ‘অ্যাকসিডেন্ট’(১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪), ‘তুমি আসবে বলে’ (২০১২) এবং ‘দেবদাস’ (২০১৩)।

বাংলাদেশের ছবিতে রুনা লায়লার গাওয়া প্রথম গান গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সুবল দাসের সুরে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’। লাহোরে থাকাকালেই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে চলে আসার পর প্রথম তিনি গেয়েছেন সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে। এতে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন খন্দকার ফারুক আহমেদ। তাঁর গাওয়া কাওয়ালি সংগীত ‘দামা দাম মাস্ত কালান্দার’ এখনো তুমুল জনপ্রিয়। এই গানে তাঁর হিরন্ময় গায়কি, ভঙ্গি কেবল ভক্ত নয়, সংগীত সমালোচকদেরও ব্যাপক প্রশংসা কুড়োয়।

বলিউডের বেশ কয়েকটি ছবিতে গান গেয়েছেন রুনা লায়লা। সর্বশেষ গেয়েছিলেন ১৯৯০ সালে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘অগ্নিপথ’ ছবির ‘আলিবাবা মিল গ্যায়া চল্লিশ চোর সে’ গানটি। বলিউডে তাঁর গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘ও মেরা বাবু চেইল চেবিলা’। পাকিস্তানের ‘মান কি জিত’ (১৯৭২) ছবির এ গানটি ব্যবহার হয় বলিউডের ‘ঘর দুয়ার’ (১৯৮৫) ছবিতে।

রুনা লায়লা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি ‘শিল্পী’ নামক বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন রুনা লায়লা। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ পুরস্কারে ভূষিত করে। সংগীতের জন্য তিনি নিজের দেশের গণ্ডি বিদেশেও নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। রুনা লায়লা ভারতে ‘সায়গল পুরস্কার’ পেয়েছেন। পাকিস্তানে দুবার নিগার পুরস্কার, দুবার গ্র্যাজুয়েট পুরস্কার এবং ‘জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here