দৈনিক আলাপ বিনোদন ডেস্ক: টুকটুক টুকটুক করে পাথরখণ্ড ভেঙে যেভাবে ভাস্কর্য গড়েন ভাস্কর, ঠিক সে রকম করেই নিজেকে বারবার ভেঙে গড়েন জয়া। ধারণ করেন নতুন নতুন রূপ। কিছুটা পথ এগিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা জুড়ে আবার গড়েন নিজের নতুন মূর্তি। আজ তাঁর জন্মদিন। তাঁকে একরাশ শুভেচ্ছা।
জয়া আহসানের প্রথম ক্ষেত্র টিভি। যাঁদের মনে আছে, তাঁরা ভুলতে পারবেন না ‘স্ক্রিপ্টরাইটার’ নাটকের কথা। আরও অনেক নামই নিশ্চয় মনে আসবে—‘সংশয়’, ‘পলায়নপর্ব’, ‘চৈতা পাগল’ বা ‘তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’।
তারপর হঠাৎ একদিন ছোট পর্দা ছেড়ে দিলেন জয়া। আসলে লম্বা একটা রেসের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। ট্র্যাকের নাম বড় পর্দা। ‘ব্যাচেলর’, ‘ডুবসাঁতার’, ‘গেরিলা’, ‘চোরাবালি’র মতো ছবিগুলোর পর তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমাও করলেন। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি টু’, ‘জিরো ডিগ্রি’। ঠিক তখনই আবার বাঁকবদলের কথা মনে হলো জয়ার, ‘আমি আসলে জনপ্রিয়তার রাস্তায় হাঁটতে চাইনি। আলাদা হতে চেয়েছিলাম, গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম নিজের পরিচয়।’
নিজেকে বদলে ফেললেন জয়া। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় অভিনয় শুরু করলেন। একে একে মুক্তি পেল ‘আবর্ত’, ‘রাজকাহিনী’, ‘ঈগলের চোখ’, ‘ভালোবাসার শহর’, ‘বিসর্জন’। নানান প্রতিক্রিয়া, আলোচনা ও সমালোচনা হতে হতেই ‘ভালোবাসার শহর’–এর জন্য দারুণ প্রশংসা কুড়ালেন। ‘বিসর্জন’–এর পরিচালক জয়াকে ভেঙে পদ্মা করে তুললেন। দেখালেন, কীভাবে একজন অভিনয়শিল্পীর ভেতর থেকে চরিত্র বের করে আনতে হয়। জয়াকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হলো না। বরং তাকাতে হলো সামনে, দূরে, বেশ দূরে।
আর এখন তো জয়ার ছবি মুক্তি পেলে পশ্চিমবঙ্গে দেয়ালজুড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ পোস্টার পড়ে, অতিকায় বিলবোর্ডে তাঁর ছবি বলে দেয়, দুই বাংলাতেই ছড়িয়ে গেছেন জয়া। কলকাতায় তাঁর কাজ এত বেড়ে গেছে যে রীতিমতো বাসা ভাড়া করে সেখানকার খণ্ডকালীন বাসিন্দা হতে হয়েছে। একে একে করলেন ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘ক্রিসক্রস’, ‘বিজয়া’, ‘কণ্ঠ’, ‘রবিবার’। পেলেন প্রশংসা, পুরস্কার, সম্মাননা। ক্যারিয়ারের প্রাপ্তিতে যেন বাকি রইল না কিছুই। অথচ জয়া আহসান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু কখনো অভিনয় করব ভাবিনি, অভিনয় করতে চাইনি। আমি যেটা সব সময় চেয়েছি, সেটা হলো মুক্তি। মানুষ তাঁর কাজের মাধ্যমে মুক্তি পায়, নিজেকে খুঁজে পায়। পিংপং বলের মতো এখানে–ওখানে ঠকেছি, ঘা খেয়েছি। অবশেষে বুঝতে পেরেছি, এটাই আমার জায়গা।’
জয়া আহসানের জীবনের আরেক বাঁক ‘দেবী’। অভিনয়ের পাশাপাশি এ ছবির তিনি প্রযোজকও। সিনেমার লগ্নি যখন ফিরে আসে না, সে রকম এক সময়ে জয়া আহসান করলেন ব্যবসাসফল ও প্রশংসিত এক সিনেমা।
ফেসবুকের বদৌলতে জয়া আহসানের আরেক পরিচয়ও ক্রমেই প্রকাশিত হচ্ছে। এখন তো প্রায় নিয়মিত তাঁর লেখা পাওয়া যায়। বাংলার কোনো অভিনেত্রীকে এত সুন্দর গদ্যে লিখতে দেখা গেছে কি না সন্দেহ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা থেকে কক্সবাজারে অনাহারে ঘোড়ার মৃত্যু—সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোয় চুপ থাকছেন না জয়া, নির্ভীকভাবেই নিজের অবস্থান তুলে ধরছেন। প্রাণী অধিকার বিষয়েও ভীষণ সোচ্চার জয়া। আবার ইনস্টাগ্রামে তাঁর নতুন ছবি বলে দেয় ফ্যাশন দুনিয়ার সর্বশেষ ট্রেন্ডটির বিষয়েও তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সেখানে জয়ার তরুণ অনুরাগীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
প্রথম আলোর সৌজন্যে