আমার ঈদ আনন্দ
শারমিন সিদ্দিকী
আমি তখন নতুন বউ। বৈদ্যুতিক হিটারে রান্না করার অভ্যাস কোন কালেই আমার ছিল না। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে প্রথম ঈদ।আমি মোটামুটি ভালই রাঁধতে পারতাম, তাই রোস্ট ও গরুর রেজালা রান্নার দায়িত্বটা আমার ওপরেই পরলো। যদিও আমি শ্বশুর বাড়ির সেজ বউ। যাই হোক, নতুন বউ বলে কথা।শাশুড়ি কাজের বুয়াকে দিয়ে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় মশলা গুলো গুছিয়ে দিলেন।এবার আমার পালা।শুরু হয়ে গেল রান্না যুদ্ধ।
রোস্টের মুরগির সব প্রস্তুতি শেষ। এবার ভাজতে হবে। আমি ফুরফুরে মুডে একটা বড় কড়াই বৈদ্যুতিক হিটার এর উপর চাপিয়ে দিলাম। কড়াই গরম হলো, এবার তেল ঢালার পালা।
আমার শাশুড়ি বৈদ্যুতিক হিটার এর পাশাপাশি কেরোসিনের স্টোভ ও ব্যবহার করতেন,তাই বাসায় গ্যালন ভরা কেরোসিন তেল ও থাকতো। কিন্তু ঐদিন সয়াবিন তেল ও কেরোসিন তেল পাশাপাশি দুটি গ্যালনে ছিল , গ্যালন দুটি দেখতে একই রকম ছিল এবং ঈদ উপলক্ষে দুটোই ভরা ছিল।
বেশি মজা করে রোস্ট করার প্রস্তুতি নিতে আমার মোটা বুদ্ধি একটুও মাথা খাটিয়ে দেখলো না কোনটি কেরোসিন তেল আর কোনটি সয়াবিন তেল।
আমি মহা আনন্দের সাথে কড়াইয়ে তেল ঢাললাম আর সাথে সাথে কড়াই এর উপর আগুন ধরে গেল।আমি মা বলে চিৎকার দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। শাশুড়ির দৌড়ে এসে দেখল তার আনাড়ি ছেলের বউ কড়াই এ কেরোসিন তেল ঢেলে দিয়েছে।তাড়াতাড়ি বৈদ্যুতিক সুইচ অফ করে দিয়ে বলল “তুমি আমাকে একটু জিজ্ঞেস করতে কোনটা সয়াবিন তেল? আল্লাহ অল্পের জন্য বাঁচাইছে।”
অতঃপর আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে পুনরায় রান্না শুরু করলাম কিন্তু ভিতরের ভীতি না কাটায় রান্নাও আর মজাদার হলো না। ঈদের সেই ভয়ানক আনন্দটা আজও মনে পড়ে