কলমযোদ্ধা অ ল ক জা না র ঈদ এর লিখা মন বিষয়ক নিবন্ধ “মনন মহেঞ্জোদারো ”

756
কলমযোদ্ধা অ ল ক জা না র ঈদ এর লিখা মন বিষয়ক নিবন্ধ “মনন মহেঞ্জোদারো ”

মনন মহেঞ্জোদারো

               অ ল ক জা না

পৃথিবীতে এমন কী বিস্ময় আছে যা মানুষের মনের থেকে সর্বাধিক জটিল অজ্ঞাত আকর্ষণীয়। প্রতি মুহূর্তে নানাবিধ পরিবর্তনের রূপরেখায় থাকে চমকে দেওয়ার যাদুময়তা। তো হতবাক না হয়ে সত্যিই থাকা যায় না। হাজার উদাহরণ বা ঘটনা জড়ো করলেও অথৈজলে তার নির্দিষ্ট করে কোন কিনারা পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। সবই তো সীমারেখার ওপাশে ছিল এতকাল হঠাৎই বন্ধ চোখ খুলতেই দেখা গেল স্থিরনম্র নিকট নাগালে, হাত বাড়ালেই অতি সহজে ছুঁয়ে ফেলা যায়। দীর্ঘ পরমায়ু খরচের পর বলতেই হয় স্বয়ং নিজের মনকেও বহু ক্ষেত্রেই অপরিচিত লাগে। অন্যকে চেনা তো অতীব অসাধ্য ব্যাপার।

প্রতিটি মন, মৃতের স্তূপ মহেঞ্জোদারোর চেয়ে কমকিছু নয়। একজীবনে নানান সম্পর্কের মৃত্যু এবং নতুন ভাবে জন্ম একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
জটিল কিংবা সরল যাই পরিস্থিতি হোক না কেন সম্পর্কের জন্ম এবং মৃত্যু নিরন্তর চলতেই থাকে। সময়ের তাগিদে কত মুখ, মুগ্ধ-প্রসন্নতা নিয়ে হাজির হয়। শতেক দায় দায়িত্ব নিয়ে সেজে ওঠা মুহূর্ত যেন তাসেরঘর। প্রতীক্ষালয়ের মতো মনন ছুঁয়ে যাত্রী সকল যে যার গন্তব্যে চলে যায়। ঋতুভিত্তিক বৃষ্টিভেজা রোদ, জ্যোৎস্না ধারাবাহিক ভাবে যায় আসে। মৃত অসমাপ্ত সম্পর্করা ক্রমশ জমা হয়। একা মনন একা প্রতীক্ষালয় একা পৃথিবীর মতো চিরন্তন পথের যাত্রী।

লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, স্যানিটাইজার, মাক্স ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায়, কিছু দাওয়াই সেবন, গুণযুক্ত খাবার গ্রহণ সবই চলছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কবল থেকে মুক্তির সুরাহা আশানুরূপ নয়। তবুও অস্তিত্ব রক্ষার দায় সকলের। তাকে সবার আগে মান্যতা দিয়ে আগামী দিনের পথ চলা অধিকতর সচেতনতার সঙ্গে হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাতে নিজেকে রক্ষার সাথে সাথে অপরকেও রক্ষা করা যেতে পারে। প্রতিকূলতা চলার পথে থাকবেই, তবেই না চলার আরাম। তাকে পরাস্ত করে এগিয়ে যাওয়ার নামই প্রকৃত অস্তিত্বের জন্য লাড়াই। আর সেটাই সকলের কাছে এখন একমাত্র হাতিয়ার ও লক্ষ্য হোক।

এসবের মধ্যেই পৃথিবীর অজস্র পরিবার সদস্য শূন্য হয়ে গেছে, হচ্ছেও। শোক কান্নার মতো সহজাত বিকারগুলো কত আর লুকনো যায়। বাঁধভাঙা বিরহী জলের মতো একদা সবকিছু তছনছ করে তোড়ে বেরিয়ে আসে। বিপন্ন পৃথিবী, বিপন্ন সমগ্র মানব সভ্যতা। সবকিছুই নির্ধারিত সময়সূচী থেকে এখন বিচ্যুত। কোন কিছুই কার্যত আর নির্ঘণ্ট মেনে করা যাবে না এ মুহূর্তে। তবুও আত্মপ্রত্যয়ে প্রতিটি ভোরের জন্য অপেক্ষা। মন সেজে উঠতে চায়। মন ভার হয়ে ওঠে। স্মৃতির জলতরঙ্গের সুর বিবিধ রাগরাগিণী উদাসে বেজে যায়, বেজে চলেছে অনন্ত সময়।

উদারতাকে চাঙা করতে হাজির হয় এক একটি উৎসব বা আয়োজন। কোটি টাকা ব্যায়ে ফুটে ওঠা আলো সকলের অন্ধকার ঘোচাতে পারে কী ? তবুও বছরে একটি বার এই কয়েক প্রহর উজ্জ্বল উপস্থিতির জন্য হাজার স্বপ্ন হাজার পরিকল্পনা হাজার নিরাময়ের ছবি তৈরি করে মন। এত লাশের স্তূপ। এত অশ্রু। এত বিপন্নতা। আনন্দ এখন সব ঘরেই বাড়ন্ত। নতুন সাজ আর আনন্দের সুঘ্রাণে মানসিক আরোগ্যের প্রথা অনেকটাই এখন ম্লান। মননে জমে ওঠা মৃত মহেঞ্জোদারো আর চিরন্তন প্রথা এবারের মতো আন্তরিক আলোকে উজ্জ্বল হয়ে উঠুক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here