শিশুকালে যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি যা আজো মনে রেখাপাত করে–লেখক ,কবি নাসরিন জাহান মাধুরী এর এক অনন্য সুন্দর সৃষ্টি প্রবন্ধ “আমার দেখা একাত্তর ”

632
শিশু চোখে দেখা একাত্তর
লেখক ,কবি নাসরিন জাহান মাধুরী

আমার দেখা একাত্তর_

                   নাসরিন জাহান মাধুরী

১৯৭১,তখন সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি। চপলভাই আর আমি একসাথে স্কুলে যাই। কি পড়তাম খুব একটা মনে নেই।কিন্তু কিছু দিন পরেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল, কারণ যুদ্ধ শুরু হয়েছে। অবশ্য তখন যুদ্ধ কি জিনিস তা জানার কথা না
পর্ব:১
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছোট একটা শহর। ঐ শহরের কান্দিপাড়ায় একটি বেশ বড় বাডি আমাদের। বাড়ির উঠান জুড়ে মাটি কেটে তৈরী করা হল ইংরেজি Z আকৃতির বিশাল গর্ত। তার উপর টিনের আচ্ছাদন দিয়ে উপরে মাটি বিছিয়ে দেয়া হল।অবাক হয়ে লক্ষ করছিলাম ছোট আমি। আম্মাকে জিজ্ঞেস করলে বললেন এটা বাংকার। পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান মাঝে মাঝেই হানা দিচ্ছে শহরে।বিমান আক্রমণের আগের মুহূর্তেই বেজে উঠে সাইরেন। বাড়ির সব সদস্যরা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ি বাড়ির সবাই Z আকৃতির সেই বাংকারে। আশেপাশের হিন্দুপরিবারের সদস্যরাও ঠাঁই নিত বাংকারে।
একদিন হল বিপত্তি।আমি আর ছোট বোন জোনাকি যে তখন খুব ছোট ও আরো কয়জন দুপুর বেলা খেলতে খেলতে বাসার সামনের মাঠে চলে গেলাম।আর ঠিক তখনই বেজে উঠল সাইরেন।আতংকিত আমি জোনাকিকে কোলে নিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে দৌড় লাগালাম।পাশেই এক আত্নীয়র বাসায় গিয়ে ওদের উঠানের বাংকারে গিয়ে ঢুকে পড়লাম।ভয়ে থরথর করে কাঁপছিলাম । বিমান চলে যাওয়ার পর দৌড় লাগালাম বাসার দিকে। বাসার গেটেই পেয়ে গেলাম চিন্তিত, ভয়ার্ত আব্বা আম্মাকে। আম্মা আমাকে কষে এক চড় লাগালেন। তারপর দুই বোনকেই পরম মমতায় জড়িয়ে ধরলেন।
আব্বা তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কুলের সুপারিন্টেনডেন্ট।এটি একটি ট্যাকনিক্যাল স্কুল, যেখানে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হত। এখনো স্কুলটি আছে। আমার বড় ভাই এখন সুপারিন্টেনডেন্ট। আব্বা, ব্রাহ্মণ বাড়িয়া সরকারি কলজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ইকবাল স্যার এবং আরো কয়জন মিলে একটি বেতার কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন যা থেকে স্বাধীণ বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হত।একদিন বিমান থেকে বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়া হল সেই স্কুল, তিতাস গ্যাসফিল্ড সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

পর্ব: ২
বিশাল এক নৌকায় উঠেছে একান্নবর্তী পরিবারের সব সদস্য। আব্বা, বড় কাকা, সবাই বেশ চিন্তিত। আগের দিন শহরে বোমা হামলা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূরণ স্থাপনা, গ্যাসফিল্ড সব ধংস করে দেয়া হয়েছে।শহরে পরিবার পরিজনদের নিয়ে থাকা নিরাপদ মনে হচ্ছেনা। পাকবাহিনী ঘরে ঘরে গিয়েও আক্রমণ চালাচ্ছে। তাই আমরা চলেছি গ্রমের বাড়ি সায়দাবাদে। সব মানুষ শহর ছাড়তে শুরু করেছ।
আমি বড়ভাই, চপলভাই,পিয়াল আর জোনাকি আব্বা আম্মার সাথে। সাথে দাদী আর বাকী সদস্যরা।এত বড় নৌকা আমরা দেখিনি। প্রথম নৌকায় চড়া। ওরা আমরা ভীষণ আনন্দিত। বিশাল নৌকার ছৈ। সবাই ছৈএর নীচেছড়িয়ে ছিটিয়ে বসলাম।নৌকা গোকর্ণ ঘাট ছেড়ে যখন ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল ছোটরা সবাই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম।এক সময় নৌকামেঘনা নদীতেপড়ল। নদীর দুই তীরের মনোরম দৃশ্য, পানির কূলকূল শব্দ। ভালই লাগছিল তাদের। মাঝিরা অবিরাম নৌকা বেয়ে চলছিল, কখনো পাল তুলে,কখনো গুণ টেনে। খাবার বলতে তেমন কিছু ছিলনা।বাসা থেকে দাদির আনা কিছু পান্তাভাত আর নৌকার মাঝিদের রাখা কিছু মিষ্টি আলু। তাই সবাই ভাগ করেখেলাম। বড়রা কিছু খেয়েছে বলে মনে পড়েনা।সারাদিন ধরে নৌকা চলছিল।ধীরে ধীরে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এল।নৌকা এসে তীরে ভিড়ল।অন্ধকার, সব অচেনা।আম্মার হাত ধরে অন্ধকারে, আর সবার সাথে গ্রামের পথ ধরে হাটতে লাগলাম।সামনে কেউ একজন আলো নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল।সবাই তাকে অনুসরণ করছিলাম।হাটতে কষ্ট হচ্ছিল।হোচট খেয়েপড়ে যাচ্ছিলাম বারবার।জোনাকি আম্মার কোলে, আর সবার হাতেই কিছু না কিছু মালপত্র ছিল। দীর্ঘক্ষণ হাটার পর আমরা একটা বাড়ির উঠানে পা রাখলাম।জানলাম এটা আমাদের গ্রামের বাড়ি। বিশাল উঠান, উঠানের চার দিকে চারটা ঘর। অন্ধকারে কেমন যেন ভয় করছিল।তারপর কিভাবে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হল মনে পড়েনা।

পর্বঃ৩
ঐ বিশাল বাড়িতে আমরা আছি। আমাদের যে এমন একটা বাড়ি আছে জানা ছিলনা। জানার মত বয়স হয়নি। যতদূর মনে আশেপাশের বাড়ি গুলো লাগোয়া ছিল। ছিল সবার ঘরে অবাধ যাতায়াত।এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়াতামসব ভাইবোন মিলে। আব্বা আমাদের নিয়ে যেতেন নদীতে গোসল করাতে।কিযে আনন্দ! দিন আনন্দে কেটে যাচ্ছে আমরা ছোটদের।যুদ্ধের বিভীষিকা বুঝে ওঠার বয়স তখনো হয়নি আমাদের।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেখতাম জমজমাট বাড়ির উঠোন। আশেপাশের বাড়ির সব পুরুষেরা ভিড় জমাতেন সবাই।আব্বার ফিলিপস রেডিওটা চালানো হতো।স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান শুনতে সবাই বসেছে।দেশাত্মবোধক গান,মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উদ্দীপনামূলক বক্তব্য প্রচার হত।বিশেষ আকর্ষণ ছিল এম আর আখতার মুকুলের চরম পত্র পাঠ।পাকিস্তানী শাসকদের ব্যঙ্গ করে মনোজ্ঞ, রসাল ভাষায়। এভাবেই কাটছিল দিন।
এরমাঝে আমরা ফিরে এলাম শহরে, প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে নৌকায় মেঘনা নদী পারি দিয়ে ট্রেনে ওঠলাম আমরা ভাইবোন আর আব্বা আম্মা।ট্রেনে টহল দিচ্ছে পাকিস্তানি মিলিটারি। ভয়ে সবার অন্তরাত্মা খাঁচাছাড়া। আম্মাকে দেখি দোয়াদরুদ পড়ছেন বিরবির করে।ফিরে এলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।আমাদের বাসাটা পরিত্যক্ত একটা ভুতুড়ে বাড়ির রুপ ধরেছে।উঠোনে ঘাস জন্মে লম্বা ঝোপঝোপ হয়ে আছে।পিচ্ছিল সবুজ শ্যাওলা জমে উঠেছে উঠোন জুড়ে।আম্মা আব্বা মিলে কিছু সাফসুতরো করে রান্না খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। শহর পাকিস্তানি মিলিটারির নিয়ন্ত্রণে।বাধ্য হয়ে আমাদের প্রেস, পপুলার প্রেস খোলা রাখতে হচ্ছে। বড় কাকা বসেন প্রেসে,আব্বাও যান মাঝেমাঝে। আব্বা ছিলেন ওদের নজরদারীতে।বাধ্য হয়ে মাঝেমাঝে বসতে হতো। আশেপাশের হিন্দু বাড়িগুলো দখল করে নিয়েছে রাজাকাররা।রাজাকারদের দৌরাত্ব শহর জুড়ে।যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে জন্ম নিল আমার একটি বোন।

পর্ব ঃ৪
তখন মুক্তিবাহিনী ধীরেধীরে সংগঠিত হয়ে চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্ছে,এগুলো আব্বা আম্মার কাছে এত শুনেছি যে মনে হয় আমার নিজের চোখেই দেখা।তবে হিন্দু বাড়িগুলো বেদখল ছিল চেনা অচেনা কিছু মানুষের হাতে সেটা মনে আছে।যুদ্ধের মঝেই ঈদ এল।নিরানন্দ ঈদ।সারা বাড়ি জুড়ে শুধু আমরা কজন আর বড়কাকা। বাকিরা গ্রামের বাড়িতেই রয়ে গেছে।শহর জুড়ে চাপা ভয়।লোকজন নেই তেমন।
একদিন রাতে জুড়ে শুরু ভেসে আসছিল বোমা বর্ষণের শব্দ।রাতভর চলল বোমার প্রচন্ড শব্দ।শব্দের আঘাতে দরজা জানালা কেঁপেকেঁপে উঠছিল।সাথে আমাদের বিনিদ্র আতংকিত রাত আর ফুরায়না।আব্বা আম্মা আমদের আগলে বসে আছেন ভোরের প্রতীক্ষায়।
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম, পালাতে হবে শহর ছেড়ে।মুক্তি বাহিনীর সাথে পাক বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে তখন,সাথে যোগ দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এখানে থাকা নিরাপদ নয়।আব্বা কয়টা রিক্সা খুঁজেপেতে নিয়ে আসলেন।
আম্মা শুধুমাত্র কিছু কাপড় গুছিয়ে নিলেন তাড়াহুড়োয়।এর মধ্যে আমার জামায় খোঁচা লেগে কিভাবে যেন ছিড়ে গেল। ঝুলে আছে জামার বর্ডার। আম্মাকে বললাম বদলে দিতে। আম্মা ধমকে উঠলেন।বললেন এখন আর সময় নেই,এভবেই যেতে হবে।ছেড়া জামা পড়েই চললাম।
পথে মানুষের সারি। সবার হাতেই বুচকা পুঁটলি। শহর ছেড়ে পালাচ্ছে সবাই।কেউ রিক্সায়, কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ গরুরগাড়িতে বোঝাই হয়ে।সবাই শহরের উত্তর দিক দিয়ে এগিয়ে চলেছে।
আমাদের গন্তব্য ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপকন্ঠে সরাইলের একটি গ্রাম, বিশুতারা।আব্বার সহপাঠি বন্ধুর বাড়ি।গ্রামের লম্বা সরু মাটির রাস্তা দিয়ে আমাদে রিক্সা বহর এগিয়ে চলেছে।এর মাঝেই এল এক বিপদ।যুদ্ধ বিমান একটাকে আরেকটা তাড়া করছে। ভারতীয় আর পাকিস্তানি বিমান।আমাদের রিক্সা থেমে গেল। সবাই নেমে গিয়ে রাস্তার পাশে মাটিতে শুয়ে পড়লাম।বিমান ধাওয়া করে চলে গেল। বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত শেল পড়ল আমরা যেদিকে যাচ্ছিলাম সেদিকেরই একট বাড়িতে। আগুন জ্বলছে ওই বাড়িতে। নারীপুরুষের চিৎকার ভেসে আসছে।
ভয়ে আমি ঠকঠক করে কাঁপছিলাম।আবার সবাই রিক্সায় উঠে রওয়ান দিলাম ঐ বাড়ির উদ্দেশ্য। যাওয়ার পথে ঐ বাড়িটার সামনে দিয়েই গেলাম। তখনো আগুন জ্বলছিল। মানুষের ভীড় বাড়িটাকে ঘীরে।একটা ছোট খালিগায়ে দৌড়াচ্ছে,তার পেটে ছোট ছোট ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে।
আমরা পৌঁছালাম আব্বার বন্ধুর বাড়িতে।অনেক বড় বাড়ি।গিয়ে দেখি আমরা একা নই, ঐ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে আরো অনেক নামিদামি পরিবারের মানুষজন।আমাদেরকে একটা ঘর দেয়া হলো থাকার জন্য।
বাড়ির বিশাল উঠোন এর এককোণায় চুলা জ্বলছে, মাটির চুলা চারমুখো।বাড়ির মহিলারা রান্নার যোগাড় যন্তর করছেন এতসব মানুষের জন্য।সব অচেনা মানুষ কিছুক্ষণের মধ্যে আপন হয়ে উঠল।
শেষ পর্ব
পর্বঃ৫
আমাদের যে ঘরটা দেয়া হলো সেটা পার্টিশন দিয়ে দুই ভাগ করা ছিল,মাঝখানে দরজা, সহজেই আসা যাওয়া যায়। ঐ পাশে আর একটি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করা হলো।আমাদের ভাগটাতে একটা খাট ছিল সেটাতে আম্মা, আমি, দাদি, আর আমার বোন আমরা ঘুমাতাম। তখন বেশ ঠান্ডা ছিল।মাটিতে খড় বিছয়ে তার উপর চাদর দিয়ে আব্বা বড়ভাই,চপল ভাই আর পিয়াল ঘুমাতো।
নতুন অচেনা পরিবেশ, কিছুই চিনিনা। আম্মার পিছনে পিছনে ঘুরি আমরা।এতগুলো মানুষ ঐ বাসায় আশ্রয় নিলাম ওদের আপ্যায়নের কোন ক্রুটি ছিলোনা। দিনের বেলায় আমরা ভাইবোনেরা ঘুরতাম আশেপাশে।সুন্দর গ্রাম, অনেক দূরে নদীর একটা রেখা দেখা যায়।আর বাড়ির উঠোনে ধান ছড়ানো।বকেলে ঘুরতাম আশেপাশে খুব চমৎকার পরিবেশ।
তখন সম্ভবত যুদ্ধের তোড়জোড় চলছে। কিছক্ষণ পরপর বিমানের ধাওয়া বেড়েই চলছিল। যে বাড়িটাতে আমরা থাকতাম তার সামনে দিয়েই একটা উচু পথ চলে গেছে সামনের দিকে,একদিন হঠাৎ দেখি সেই পথ দিয়ে লাইন ধরে চলে যাচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।দীর্ঘ সময় ধরে অসংখ্য সেনা এই পথ অতিক্রম করে গেল।আমরা সবাই উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম তাদের।
পরের দিন সকালে দেখি আব্বা বড় এক টিন ভর্তি বিস্কুট আর কলসিতে করে পানি আর গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ঐ পথের ধারে। আমরাও আব্বার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।আব্বা ঐ হেটে যাওয়া সেনা সদস্যদের পানি আর বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করছিলেন। আমরা মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলাম।দুই তিন দিন ধরে অসংখ্য ভারতীয় সেনা ঐ পথ অতিক্রম করে গেল।
এর মাঝে শুরু হলো প্রচন্ড বোমার শব্দ থেকে, আর বিমানের দৌরাত্ব। ভয়াতংকে বুক দুরুদুরু করতো।কয়েক দিন কেটে গেল এ অবস্থায়।সবার মধ্যেই আতংক।কি হবে না হবে ভেবে।তারপর সব শব্দ থেমে গেল। কিন্তু কেউ জানিনা কি হলো।
একদিন হঠাৎ দেখি বড়কাকা হেঁটেহেঁটে আসছেন।বড়কাকা আমাদের পাঠিয়ে দিয়ে শহরে থেকে গিয়েছিলেন।তিনি এলেন খুব আনন্দিত হয়ে। বললেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্বাধীন হয়ে গেছে, তাই তোমাদের নিতে এসেছি, এখন আর কোন ভয় নাই।এটা সম্ভবত ১৬ই ডিসেম্বরের আগের ঘটনা।চারিদিকে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।সবাই উল্লসিত বিজয়ের আনন্দে।
দেশের বিভিন্ন অংশে তখন মুক্তিযোদ্ধা আর ভারতীয় সেনাদের সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাদের হটিয়ে দেশ দখল মুক্ত করছিল।
আমরা ঐদিনই শহরে ফিরেএলাম।শহরের মানুষ জন ধীরে ধীরে ফিরে আসা শুরু করলো। চারিদিকে পোড়া আর ধ্বংসযজ্ঞ।
তারপর এলো ১৬ ই ডিসেম্বর আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের শুভক্ষণ।
আমার বড়কাকা, আব্বা, দাদি সহ আরো অনেকে আজ নেই। এই লিখাটা লিখতে গিয়ে ওদের কথাও খুব মনে পড়ছে।ওদের যে দেশপ্রেম ছিল তা আমাদের রক্ত ধারায়ও প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মেও দেশপ্রেমের এই ধারা বয়ে যাবে যুগেযুগে।ওদের মধ্যে চির জাগরুক থাকুক মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের মহান চেতনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here