ভারত থেকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সারথি-মনীষা কর বাগচীর কথোপকথন—৪ ও ৫

114

কথোপকথন—৪
বাঁচব তোমার সাথে


—আকাশ অন্ধকার। ফিসফাস- ফিসফাস। সো- সো । ভয়ঙ্কর হাওয়া, সাথে বজ্রপাত। ভয়ে কুঁকড়ে যাই। এমন দিনে একটি মুখ হাতড়াই।
—-মিথ্যে কথা।
—-একটুও মিথ্যে নয়। তুমিই আমার একমাত্র আশ্রয়স্থল। বাকি সব ডালপালা। সেদিনের কথা খুব মনে পড়ে নীলাঞ্জন। মাটির দেওয়াল, উপরে টালি। ভয়ঙ্কর কালবৈশাখী ঝড়। তছনছ চৌদিক। গাছ পড়ছে। টালি ভাঙছে। মানুষ চিৎকার করছে। গরু করছে হাম্বা হাম্বা । আমি কাঁপছি বাঁশপাতা যেমন। কোথা থেকে দৌড়ে এলে, বুকে টেনে নিলে। প্রাণপণ জাপটে ধরলে প্রাণের সাথে। মুহূর্তে উধাও হল ভয় ডর। নীরব নিথর শরীর নিশ্চিন্তে পড়ে আছে যেন দেবতার পায়…!
—-সত্যি কি নিশ্চিন্ত হতে পেরেছিলে?
—বিশ্বাস হয় না বুঝি? এক একটি শব্দ সত্য। আকাশের মতো সত্য। চাঁদের মতো সত্য। সূর্যের মত সত্য। তুমিই আমার জীবনের চরমতম সত্য।
—তাহলে ভয় পেও না। অনুভব করো আমাকে। চোখ বন্ধ করে দেখো পাশেই আছি, ছুঁয়ে আছি তোমায়…
—-আমি জানি তুমি আছো। আজ আমার জন্য নয় তোমার জন্য ভয়। বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ভয়, অবলা প্রাণীর জন্য ভয়। জলমগ্ন চারিদিক। ভাসছে গরু, ভাসছে গাড়ি, ভাসছে মানুষ। গাছপালা ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার। ভেসে গেল সব। ডুবে গেল সব।
আর দূরে নয় কাছে এসে ধরো হাত। মরি যদি মরব তোমার হাতে বাঁচি যদি বাঁচব তোমার সাথে।

(কথোপকথন—-৫)
কেন ভালোবাসি
মনীষা কর বাগচী

—অনেক দিন ধরে একটা বিষয় চিন্তাভাবনাগুলোকে কেমন তোলপাড় করে দিচ্ছে। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিনা। কত ভালোইনা ছিল উচ্ছলতায় সিক্ত দিনগুলি। উন্মুক্ত নীল দিগন্ত ছিল হাতের মুঠোয়। মেঘেদের সাথে ছিল মিতালী। পাখা মেলেছি মনের সুখে। কখনো বলাকা, কখনো নদী, কখনো ঝর্ণা হয়েছি। ‘কে বাঁধে রে আমায়’।
—তারপর?
ভালোই লাগছে তোমার গল্প।
— তার আর পর নেই। মুক্ত গগনের পাখি বন্দি করলে খাঁচায়। ছুঁয়ে দিলে তার লাল পুঁটুলি।

—কি সর্বনাশ!
—সর্বনাশ‌ই বটে।
—-রাগ করোনা লক্ষ্মীটি আমার। সেওতো দিন ছিল। পালক পালক সকাল। আগুন আগুন দুপুর। প্রজাপতি প্রজাপতি বিকেল। রামধনু রঙা গোধূলি।
— হুমমম। তোমাকে ছুঁয়ে থাকা প্রতিটি পল রবিঠাকুরকে ছুঁয়েছি❤️। জসিমউদ্দিনকে চিনেছি। বিদ্রোহী কবিকে ভালোবেসেছি। রঙিন হয়েছি দিন রাত। রাঙিয়ে দিয়েছিলে আমার বর্তমান, ভবিষ্যত, দুচোখে লেগে থাকা এক পৃথিবী স্বপ্ন। তারপর এলো সেই ঘুটঘুটে কালো রাত্রি। সব রঙ ধূসর হলো সানাইয়ের কান্নায়।
— ক্ষমা করো। আর পারছি না। বিশ্বাস করো এমনটি হবে আমি ভাবতেও পারি নি। রাজকন্যার জন্য রাজমহল তৈরী করেছিলাম। তার হাত ধরে গৃহপ্রবেশ করব ভাবছি। এমন সময় হঠাৎ উঠল ভয়ঙ্কর ঝড়। ভেঙে গেল রাজমহল। হারিয়ে গেল রাজকুমারী। চোখ মেলে চেয়ে দেখি সব শেষ। পরিস্থিতির চাপে আমার নদী পরিবর্তন করেছে তার দিশা। ভিখারি হয়েছি আমি।
—কষ্ট পেওনা নীলাঞ্জন। ভালোবাসা মানেই কষ্ট। তবুও আমরা কেন যে ভালোবাসি….!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here