শান্তা সকালে ঘুম থেকে উঠেই কিচেন রুমে সকালের নাস্তা তৈরি করছে। মেয়ের স্কুল শুরু সকাল আট্টায়, তাই সকালের নাস্তাসহ মেয়ের টিভিন তৈরি করতে খুব সকালে তরিঘরি করে কাজ করতে হয়। বাসায় ছুটা কাজের বুয়া এগারোটার পরে আসে। স্বামী ও মেয়ে সারাবেলাকে নিয়েই শান্তার সংসার। টেবিলে নাস্তা দিতে দিতে মেয়কে শান্তা ডাকলেন, সারাবেলা,সারাবেলা কোথায় তুমি তোমার খাবার রেডি দ্রুত এসো স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। সারাবেলা দৌড়ে এসে চেয়ার টেনে বসলো।
শান্তার স্বামী মিলন, তিনিও এসে খাবার টেবিলে খেতে বসলেল। শান্তা মেয়েকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে খাওয়াচ্ছে। হঠাৎ শান্তার মোবাই বাজতে শুরু করলো। একবার কল অনেকখুন বেজে আপনা আপনি কেটেগেল। শান্তা ধরলোনা। মিলন ব্যপারটা লক্ষকরলেন, মনে মনে ভাবতে লাগলেন ,কে কল দিলো আমার সামনে শান্তা ফোন ধরলনা। তবেকি আবির ফোন দিয়েছে। তাহলেকি আমার অগোচরে শান্তা আর আবির সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে? নিজের মনকে নিজের কাটগরায় দ্বার করাচ্ছে মিলন। গতকাল রাতেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে শান্তার সাথে।
শান্তাও মিলনের সন্দেহের কাটায় রক্তাক্ত হচ্ছে দিনের পর দিন। মনের অমিল হওয়া সত্বেও সারাবেলার মুখেরদিকে তাকিয়ে সংসার করে যাচ্ছে। আবার শান্তার মোবাইলে কল বেজে উঠলো। শান্তা কল রিসিফ করে বলে উঠলো,কি সিমা এতোদিন পরে, তোর কিখবর ,ভালো আসিস ? ফোনের ঐ পাশ থেকে ভেসে আসলো, হ্যা আমি ভালো আছি। তোরা সবাই ভালো আছোর? শান্তা শোন আমি ফরিদপুর থেকে ঢাকা রোওয়ানা দিয়েছি, তোদের বাসায় আসতেছি। এখন রাখি বাসায় এসে কথা হবে। এ কথা বলে কল কেটে রেখেদিলো সিমা। এতক্ষণ মিলন মনোযোগ দিয়ে ওদের কথা শুনছিলো। শান্তার চোখে চোখপড়ায় মিলন নিজের চোখের দৃষ্টি অন্যদিকে দিয়েগেল।
মিলন সারাবেলাকে স্কুলে রেখে অফিসে যাবে। তাই সারাবেলাকে সঙ্গে করে বের হচ্ছে। পিছন থেকে শান্তা বলে উঠলো, ফ্রিজে কোন মাংশ নেই শুধু মাছ আছে। ফেরার সময় বাজার করে এসো। আমার বান্ধবী সিমা আসতেছে এ বাসায়। মিলন একবার পিছন দিকে শান্তার দিকে তাকিয়ে চলেগেলো।
শান্তা দরজা বন্ধকরে হাতের কাজ দুরুত শেষ করতে গেলো। দুই বছর পর সিমার সাথে দেখা হবে। বিয়ের পর কলেজ লাইফের কোন বন্ধু বান্ধবীদের সাথে কোন যোগাযোগ হয়না একমাত্র সিমা ছারা। মাঝে মধ্যে সিমার সাথে কথা বলে মনটাকে হালকা করে শান্তা। কাজ শেষে শান্তা বারান্দার বেলকোলনিতে এসে দারায়। বসন্তের আবেদন নিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুটেছে ফুল,তা দেখে আবিরের কথা মনেপরে গেল শান্তার। কলেজের প্রথম দিনেই পরিচয় হয় আবিরের সাথে। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্কটা গড়ায় প্রেমে।
বসন্তের প্রথম দিনে আবির একগুচ্ছো গোলাপ ফুল দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো শান্তাকে। ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূরা গাছ থেকে ফুল এনে গুজে দিয়েছিলো শান্তার চুলে। ফেলে আসা দিনগুলি ভেবে ভেবে এখন চারদেয়ালের মাঝেই দিন কাটাতে হয় শান্তার। মিলন অফিসে থাকলে কিছুদিন আবিরের সাথে ফোনে কথা বলেতো শান্তা। আর নিজেদের চোখের জলে ভিজাতো চোখের পাতা।
আবিরের সাথে শান্তার এখন বেশকিছুদিন যাবত কোন কথা হয়না । আবিরের ফোন সবসময় বন্ধ পায়। প্রতিদিনের মতো আজও ফোন দিতেছিল শান্তা। কিন্তু আবিরের ফোন বন্ধ। শান্তার আগে একটা স্মার্ট ফোন ছিলো সেফোনটাও নিয়েগেছে মিলন।
আবিরের সাথে কথা বলার সুযোগ না পেলেও , ‘অচিন পাখি’ নামে আবিরের ফেসবুক আইডিটা প্রায়ই চেক করতো শান্তা। ‘অচিন পাখি’ নামটা শান্তার খুব প্রিয় । এ নামটা বদলাতে নিশেধ করেছিল শান্তা। আবির সব দুঃখ, কষ্টের কথা সবসময় শান্তাকে বলতে না পারলেও ফেসবুকে স্টাটাস দিতো। আর সে স্টাটাসগুলো সুযোগ পেলেই শান্তা পড়তো।এ রি মধ্যে কলিং বেলের শব্দ শুনতে পায় শান্তা। দরজাখুলে দেখে কাজের বুয়া এসেছে। বুয়াকে দরজা লক করতে বলে নিজের রুমে চলেযায় শান্তা। ফোনটি হাতে নিয়ে বিছানায় বসে সিমাকে ফোন দেয়,কোথায় তুই, তর কতোক্ষণ লাগবে আসতে? সিমা উওরে বলে ওঠে আমার আসতে আরও দুই ঘন্টা লাগবে তুই চিন্তা করিসনা আমি আসতেছি। এই বলে ফোনটা রেখেদিলো সিমা। শান্তা নিজের বাটনআলা মোবাইলটা হাতেনিয়ে ঘুড়াচ্ছে আর ভাবছে , সিমা আসলে ওর স্মার্ট ফোনদিয়ে ফেজবুকে নক করবো আবিরকে। এরি মধ্যে সিমা এসে হাজির। অনেক দিন দুজন দুজনকে পেয়ে আত্মহারা। শান্তা সিমাকে তোয়লে এগিয়ে দিয়ে বলল,তুই আগে হাতমুখ ধুয়েনে তার পর খেতে খেতে কথা বলো। সিমা ফোনটি চার্জে লাগিয়ে ওয়াস রুমে গেলো।
এরই ফাকে শান্তা সিমার ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে ‘অচিন পাখি’ নাম লিখে সার্চ দিলো। হঠাৎ শান্তার চোক বড় হয়েযায় ‘অচিন পাখি’ আইডির টাইমলাইনে কয়েকজন বন্ধুর কয়েকদিন আগে যুক্তকরা আবিরের মৃত্যুর সংবাদ ও ছবি দেখে।
শান্তাকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া আবিরের শেষ স্টাটাসটি ছিলো ,’তোমার চোখ থেকে ঝড়ে পরুক আমার দেখানো স্বপ্ন। বেঁচে থাকো তুমি সাগরের ঐ উত্তাল ঢেউয়ের মত। মানিয়ে নিও তুমি কষ্টকে,বড়ণ গল্পগুজব করে নিও প্রকৃতির মত করে নতুনত্বকে। এরি মাঝে পাবে তুমি বেঁচে থাকার স্বাদ’ শান্তা লেখাগুলো পড়ে মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়।