চৈত্র শেষে নতুন বছরের সুর
মহুয়া ব্যানার্জী।
শীতের প্রাবল্য স্তিমিত হতে হতে ফাল্গুনের পায়ের কাছে নতশির হয়ে হার স্বীকার করে। প্রকৃতিতে তখন রুক্ষতাকে সরিয়ে নতুন কচি পাতা ও রঙিন ফুলের আগমন হয়। এ যেন বয়সের ভারে জীর্ণ রূপকে বিদায় দিয়ে নবযৌবনবতী প্রকৃতির আবার নতুন ভাবে সেজে ওঠার পালা। লীলাময়ের এক অন্য লীলা খেলা চলে ঋতুবদলের পালার মধ্যে দিয়ে।
বসন্ত আসে রঙে রসে জারিয়ে দিয়ে মানবমনকে এক অন্যরকম প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে। মনের সমস্ত জটিলতা, ঈর্ষা , প্রেমহীন বিষাদ দুর হয়ে যায় লেবুফুলের সৌরভে, পলাশের রঙে, অশোকের সৌন্দর্যের ছোঁওয়ায়।
বসন্তের অমোঘ টান যেন অনঙ্গদেবের শর। তার ঘায়ে মানুষের মনে এই অনাবিল প্রেমের উদ্ভাস ঘটে। ভেসে যায় সব আবিলতা। হয়তবা এভাবেই বিসর্জন ঘটে পশুত্ত্বের, আগমন হয় মনুষ্যত্বের। জাগ্ৰত হয় শুভ বোধ। হয়ত বা…
শিবমন্দিরের ঘন্টাধ্বনি, ভক্তাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ‘মহাদেবের চরণের সেবা লাগে’ বলে আগুন জ্বালা , কানে কানে বলে যায় – বিদায় বেলা এল যে,
চৈত্রের গাজনের ঢাকের শব্দ মনে করিয়ে দেয় সময় শেষের কথা।গ্ৰামবাংলার প্রতিটি ঘরে চোত পরবের প্রস্তুতি চলে। চৈত্র সংক্রান্তির সেই ক্ষণে একটি বছরকে বিদায় দেওয়া হয়। শুধুই কি বিদায়ের পালা চলে? তা কেন! পুরনো বছরের বিদায়ের সাথে সাথে চলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি। চড়কের মেলায় সন্ন্যাসীদের ঝাঁপান, আগুন ভাঙা ইত্যাদি নানান খেলা আসলে মহাকালের সেই অমোঘ নিয়মেরই অংশ।চৈত্র সংক্রান্তি কেবল একটি বছরের শেষের শেষ নয় তা অন্য একটি বছরের শুরুর শুরু।কালচক্রে প্রতিনিয়ত বিদায়ের পর আগমনের সময় আবর্তিত হয়ে চলে ।
ঝরা পাতার জায়গা নেওয়া নতুন কিশলয় সেই নবীনের জয়গান গায়। দুরে কোথাও প্রাচীন শিবমন্দিরে ঘন্টা বাজে ঢং ঢং ঢং…
বৃদ্ধ বটগাছ সাক্ষী থাকে এক অদ্ভুত ক্ষণের! দুর থেকে সম্মিলিত ধ্বনি ওঠে
‘ মহাদেবের চরণে সেবা লাগে’ । সে শব্দ অতি ধীরে মিলিয়ে যায় সময় সরণীতে।
নিস্তব্ধ সেই উষালগ্নে কারা যেন গেয়ে ওঠে- ‘ এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।
কৈলাশপতি মৃদুহাস্যে ধ্যানমগ্ন হন পুনরায়। কালচক্র মহাকালের নির্দেশে ঘুরে চলে।