ভারত থেকে কলমযোদ্ধা-মেরী খাতুনের নির্বাক অন্তরের গল্প “”কভার স্টোরি””

254
কলমযোদ্ধা - মেরী খাতুনের নির্বাক অন্তরের গল্প“-"কভার স্টোরি"”

-“কভার স্টোরি”
মেরী খাতুন

সকালের হালকা রোদে চা খেতে খেতে খবরে চুমুক দিচ্ছিল সুমন। তখনই, ঠিক তখনই বেজে উঠল মোবাইল। কাগজে চোখ রেখে বিরক্তিতে হাত বাড়াল পাশে। হাতের মুঠোয় ফোন উঠে আসতে কপাল থেকে মুছে গেল বিরক্তির জ্যামিতি। সকালের রোদ, বাতাসের তরঙ্গ ভেদ করে তার কাছে ছুটে এসেছে অনুরাধা। বটমে চাপ দিল সুমন, কী ব্যাপার, এই সময়?
—–ঘুম ভাঙিয়ে দেওয়ার জন্য সরি।
—-সরিটা গ্রহণ করতে না পারার জন্য সরি। কারণ ঘুম থেকে উঠেছি অনেক আগে। আসলে কী করে বুঝব এই সকালে অনুরাধা সংখ্যা হয়ে উড়ে আসবে আমার মোবাইলে! তবুও বলি, এখন আমি কাগজ পড়ছি।
—-ওমা, কাগজের অফিসের লোকেরা কাগজ পড়ে নাকি! তারা কাগজ দেখে,আর খবর বোনে। কাগজ পড়ে জনগন।
আহা, এই মুহূর্তে মুখোমুখি বসে থাকলে হাততালির আওয়াজে ভরিয়ে দিতাম তোমায়।
—–দারুণ একদিন দেখে নিও সেটাই হবে।
—–আচ্ছা এবার বলো, কী এমন অসুবিধেয় পড়ে তুমি এই সকালে সংখ্যা হয়ে উড়ে এলে! তেমন কোনও দরকারে?
—-ঠিক ধরেছো।
—–কোনও ইন্টারভিউ?
—–সেটাও পাচ্ছি কোথায়।
—–তা হলে তোমার বিয়ে?
——উঃ, অসহ্য।
—–আর অন্য কী এমন ঘটতে পারে! আমার মাথায় কিছু আসছে না।
—–ঘটেছে, মশাই ঘটেছে। এবং সেটা খবর হয়েছে আজকের কাগজে। আর, সেই কারনেই ফোন করা।
—–আজকের কাগজে!আমি তো—–
—–তুমি তোমার কাগজ পড়ো? খবরটা ছাপা হয়েছে একটা ইংরেজি কাগজে। ছোট করে। কারও নজরে আসার তেমন কোন কারণ নেই। কিন্তু ব্যাপারটা নজরকাড়া বিষয়। এটার উপর আমি আরও ইনফরমেশন কালেক্ট করে, বড় একটা কভার স্টোরি করতে চাই।
—–খুব ভালো কথা।
—-তাই চাই তোমার সাহায্য।
—–নো প্রবলেম। কিন্তু তুমি কি নিশ্চিত যে খবরটা দারুনভাবে টানবে পাঠককে?
—-এক একটা খবর এক-একজনকে টাচ করে এক একভাবে। আমার যত দূর মনে হয়, এই খবরটা একজন পুরুষের থেকে অনেক বেশি নাড়া দেবে মহিলাদের।
——হতে পারে। তবে খবরটা না জানলে কী করে বলব?
—–ঠিক কথা। আমি কাটিং নিয়ে তোমায় দেখাব আগে। এভাবে ফোনে ঠিকমত বোঝানো যাবে না। তাই তুমি কখন ফ্রি আছো?
——এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। যত কাজের চাপ বাড়ে রাতে। তুমি একটা ফোন করে জেনে নিও পরে।

ছায়ার কোনও গন্ধ থাকে না। তবু টেবিলের উপর ছায়া ফুটে উঠতে সুন্দর গন্ধ পেল সুমন। সেই হালকা সুগন্ধ অনুসরণ করে লেখা থামিয়ে মুখ তুলে তাকাতেই ছায়ার শরীর হয়ে উঠল অনুরাধা।
—–আরে তুমি? ঘড়ি দেখল সুমন। ছটা দশ। ওর আসার কথা পাঁচটায়। মহিলারা কখনওই ঠিক সময় কোথাও পোঁছয় না। এই অপ্রিয় কথাটা বলতে গিয়েও ওর মুখ থেকে পালটে গেল কথা, এত দেরি?
——-অন্য একটা অফিস ঘুরে আসছি। বলতে বলতে ও কাগজে ছাপা একটা কাটিং রাখল টেবিলের উপর। সুমনের দিকে তাকিয়ে কেশে নিল দুবার, তোমায় যে ব্যপারটা বলেছি, এটা তারই কাটিং।
কোন কথা না বলে ও চোখ রাখল কাটিংয়ে। অনুরাধার কাছ থেকে শুনেছে গতকাল। অথচ পড়ছে আজ। অনেক খুঁজেও তাদের কাগজে খবরটা পায় নি।কাটিং থেকে চোখ তুলল সুমন, শুধু প্রেম করার জন্য এই রকম শাস্তি? আমি তো ভাবতে পারছি না।
—–সেই জন্যে ব্যাপারটা নিয়ে তোমার সঙ্গে বসতে চাওয়া। এই ধরনের শাস্তি ভাবতে পারলেও মেনে নেওয়া অসম্ভব।
—-ঠিক তবে সিদ্ধান্ত কিন্তু একজনের। অবাক লাগছে কেউ একজনও প্রতিবাদ করল না?
——-হয়তো করেছে। কে করল কী করল না তার চেয়ে বড় কথা, গোটা গ্রামের এত লোকের সামনে ঘটে গেল এমন একটা দৃশ্য। বলতে বলতে এক সেকেন্ডের জন্যে চোখ বন্ধ করল অনুরাধা।
শুনতে শুনতে চেয়ারে সোজা হয়ে বসল সুমন, আমি ভাবছি ওই ছেলেমেয়েটির কথা। অন্য জাতের ছেলের সঙ্গে প্রেম করার জন্য শাস্তি যদি এই হয়, তা হলে অন্য ধর্মের ছেলের সঙ্গে ভালোবাসা জড়িয়ে গেলে হাত-পা কেটে দিত বোধ হয়!
——-সেটা অনেক ভাল ছিল। এমনকী শাস্তি হিসাবে ঢের ভাল মৃত্যুদণ্ড। তার অবশ্য কারণ আছে। মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির যেহেতু কোনও অস্তিত্ব থাকে না। তাই তার অনুভূতির প্রশ্ন আসে না। কিন্ত এই ধরনের শাস্তির জন্যে বেঁচে থেকে ভয়ংকর এক লজ্জাকে বয়ে বেড়ানো কী যে অসহ্য, বোঝাতে পারব না। বিশেষ করে একজন মেয়ের কাছে।
——বুঝলাম তোমার প্রতিবাদে ফেটে পড়ার কারণ। বলতে বলতে একটু আড়মোড়া ভাঙল সুমন।, এটাই তা হলে তোমার লেখার লেটেস্ট বিষয়?
—–এ ব্যাপারে আর কোনও সন্দেহ আছে?
—–তা নেই। তবে লিখতে গেলে আরও অনেক খোঁজখবর নিতে হবে।
—–নেব। সেই জন্যে তোমার কাছে পরামর্শ চাই। যেভাবেই হোক ওই মেয়েটির পাশে দাঁড়াতেই হবে আমাদের। আমি কালই যেতে চাই। সঙ্গে চাই তোমায়।
—-অ্যাজ ইউ লাইক।
—–কেন জানি না আমি ঘটনাটা ভুলতে পারছি না কিছুতেই। সারা রাত না দেখা একটা মেয়ে ঘুম ভাঙিয়েছে বারবার। তাই আমি কাল সকাল থেকে অপেক্ষা করেছি তোমার কাছে আসার।
——খুব ভালো করেছো। আজ থেকে আমরা দুজনে অপেক্ষা করব সেই না দেখার মেয়েটির কাছে পৌঁছনোর।
ভোরবেলা বেরিয়ে ট্রেন এবং বাস, তারপর পায়ের গোড়ালি ব্যথা হওয়ার দূরত্ব পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া। চাঁদপুর গ্রামে এসে খোঁজ নিয়ে ঠিক জায়গা পৌঁছনো যে এত কঠিন—বুঝতে পারেনি। গ্রামে ঢুকেই প্রাথমিক স্কুল। দরজার পাশে একটা দাড়িওলা লোক এক দৃষ্টে তাদের দেখছে। এভাবে দেখা বড় অস্বস্তির। অস্বস্তি কাটিয়ে সুমন প্রশ্ন করল, মেয়েটির নাম কী যেন?
—–শান্তি। শান্তি বাউরি।
——নাম শুলে হাসল অনুরাধা। যদি জানত শান্তি নামে এমন অশান্তিতে পড়তে হবে, তা হলে ওর মা-বাবা আর যা কিছু করতে না পারলেও অনন্ত এই নামটা রাখত না।
কিছুদূরে তিনজন মহিলা বসে আছেন। একদম ধারে বসে প্রমিলা। এ অঞ্চলের পঞ্চায়েত প্রধান। অনুরাধার সাথে কথা বলতে বলতে দাড়িওলা লোকটা সুমনকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেল। কেন না ছেলেদের কাছ থেকে খবর নেবে সুমন। আর মেয়েদের কাছ থেকে আলাদাভাবে খোঁজ নেবে অনুরাধা নিজে। কিন্তু এই অঞ্চলের পঞ্চায়েত প্রধান যে একজন মহিলা, এটা সে জানত না। এবং সেই প্রধান যে তাকে পঞ্চায়েত অফিসে নিয়ে আসবে বুঝতে পারেনি সে। মাটির মেঝেতে চাটাই পেতে বসে আছে চারজন মহিলা। ব্যাগ খুলে গলায় খানিকটা জল ঢালতে প্রমিলা জিজ্ঞেস করল, কিছু খাবেন?
—–না। ছোট্ট উত্তর দিয়ে অনুরাধার প্রশ্ন আচ্ছা, শান্তি কী প্রেম করত ঐ ছেলেটির সঙ্গে, নাকি নেহাতই বন্ধু ছিল দুজন।
অবাক প্রমিলা, আপনি কী বলছেন!একটা ছেলের সঙ্গে মেয়ের বন্ধুত্ব। এখানে ও সব হয় না।
কী উত্তর দেবে অনুরাধা। তবুও ও বলল, আপনি কী দেখেছেন?
—–আমি নয়, দেখেছে এ গ্রামের অনেকে।
—–যারা দেখেছে তাদের দেখাটা কতটা ঠিক?
—-জানি না। তবে গ্রামের অন্য মেয়েদের নামে তো বদনাম রটেনি।
—–তবে এমনও তো হতে পারে, ওই শান্তির উপর ছিল কারও লোভ। পাত্তা না পেয়ে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে বদনাম। পরিবারের উপর রাগ বা আক্রোশ ও থাকতে পারে। আবার না-ও হতে পারে। বলতে বলতে আবার জল খেল অনুরাধা। তারপর বলে উঠল, আপনাদের কথা মত সব যদি মেনে নিই, তাহলে প্রেম করার জন্যে শাস্তি পেতে হবে—আইনের দিক থেকে মেনে নেওয়া যায় না।আর এই গ্রামে আপনাদের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা তো সম্পূর্ণ বেআইনি।
—–আপনি কী বলছেন! এত বছর ধরে চলে আসছে যে বিচারের ধারা, যাকে মেনে নিয়েছি আমরা সবাই। ভুল হলে তো গ্রামের সব মানুষই মিথ্যে।
——তবু আমি ধরে নিলাম সব সত্যি। সত্যি মেয়েটির প্রেম করা। গ্রামের লোকের চোখে পড়ে যাওয়া। সব, সব কিছু সত্যি। কিন্তু তাতে কি হল! এবং তার জন্যে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাকে, সেটা তো মেনে নেওয়া অসম্ভব। বলতে কোনও অসুবিধে নেই, কারণ এখানে নেই কোনও পুরুষ। এইটুকু অপরাধের জন্য একটা মেয়েকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ঘোরানো হয়েছে গোটা গ্রাম! অদ্ভুত! একটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার লজ্জার গোপন সিন্ধুক খুলে দেওয়া সবার সামনে। আমরা তো ভাবতেই পারছি না।
মুখোমুখি বসে থাকা সবাই চুপ। দীর্ঘ হচ্ছে সময়। বাইরে রোদের তাপ কি কমেছে? ঘড়ি দেখল অনুরাধা। সুমন আছে অন্য জায়গায়। ওকে নিয়ে ফিরতে হবে। ঘর ছেড়ে বাইরে এল। কত দূর আছে সুমন? কতই বা দূর আছে সমাধানের সীমানা।
স্টেশনে এসে টিকিট কেটে অনুরাধা পিছন ফিরে তাকাতে দেখতে পেল না সুমনকে। কোথায় গেল? এখানে তো কেউ চেনা নেই। একটু এগিয়ে এসে চারদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ দেখল, ফ্লাইওভার ব্রিজের পাশে ও কার সঙ্গে কথা বলছে। ও ডাকল। শুনতে পেল না সে। কিন্তু ডাউন ট্রেন স্টেশনে পৌঁচ্ছে ডেকে দিল তাকে। তাড়াতাড়ি ট্রেনে উঠে অনুরাধা জিজ্ঞেস করল কার সঙ্গে কথা বলছিলে?
——সেই দাড়িওলা লোকটির সঙ্গে
——-সে আবার কী বলছে? সবই তো এক দলের।
——আসলে আমরা যেখানে যেতে চাই, পৌঁচ্ছাতে চাই যার কাছে তার কাছেই নিয়ে যেতে এসেছে।
——-তা হলে আমরা ট্রেনে উঠলাম কেন?
——-না উঠে কোনও উপায় নেই বলে। তা ছাড়া রাত হয়ে যাচ্ছে। ফিরতে পারবো না। আমি মেয়েটির বাড়ির রাস্তা জেনে নিয়েছি। তোমাকে সব বলছি চলো।
তার সাথে যাওয়ার জন্য সুমনকে যখন পাওয়া গেল না, তখন একলাই চলে এলো সোজা। দু দিন আগে যেভাবে যতটা এসেছিল। সব গ্রামের মধ্যে একটা মিল থাকে। ছকে বাঁধা কিছু পরিচিত দৃশ্য। গরুর গাড়িতে খড়ের গাদা চলে যাচ্ছে তাকে পাশ কাটিয়ে। খড়ের উপরে বসে লোকটা তাকে দেখছে। হেঁটে যাওয়া দুজন দাঁড়িয়ে পড়ছে তাকে দেখে। সামনে পথের ধারে পুকুরপাড়ে চার-পাঁচটা বাচ্চা খেলা করছে। ও ডাকল শুনতে পেল না।কাদামাখার খেলায় কী যে ব্যস্ত। আবার ডাকল। এবার একবার ঘুরে তাকাতে ও জিজ্ঞেস করল, শান্তির ঘর কোথায়?
——কোনও উত্তর না দিয়ে মুঠো ভরতি কাদা নিয়ে ছুড়ে মারল আর একটা বন্ধুর গায়ে। নাঃ, এদের জিজ্ঞেস করে কোন লাভ নেই। তবু দাঁড়িয়ে থাকল একটু। অনেক দিন পর এমন দৃশ্য দেখছে। দেখতে দেখতে তার মনে হল,বাচ্চারা নিজেরা কাদা মেখে আনন্দ পায়। বয়স্করা অন্যের গায়ে কাদা মাখিয়ে পায় আনন্দ। খানিকটা এগিয়ে পাশাপাশি কয়েকটা টিনের ঘরের সামনে এসে থামল। মাটির দাওয়ায় উবু হয়ে বসে থাকা একজনকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল।
সামান্য ভ্রু কুঁচকে তাকাল, নারায়ণের মেয়ে?
——-কে জানে। শান্তির বাবার নাম তো জানা নেই।
——–বুঝেছি। আপনি ওই তালগাছের পাশ দিয়ে সোজা চলে যান। আমি যাব না
কোনও কথা বলল না অনুরাধা। নির্জন বড় বেশি নির্জন চারপাশ। তালগাছের পাশ দিয়ে আরও ক’টা তাল-তমালের নীচ দিয়ে হেঁটে গেল খেয়াল নেই। একটা বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করে যখন ঠিক বাঁশের গেটের সামনে এসে দাঁড়াল, তখন দুপুর বারোটা।
বাচ্চাটা একজনকে ডেকে আনতে যে লোকটি অনুরাধার সামনে এসে দাঁড়াল, তাকে নাম জিজ্ঞেস করতে নারায়ণ মুহূর্তে কেমন শিলা হয়ে গেল
গোটা পৃথিবীর ভয় কি জমে আছে এই একটা পরিবারে! নিজের পরিচয় দিয়ে শান্তির সঙ্গে দেখা করার কথা বলেই ফেলল। যাকে চোখে দেখেনি কখনও। কাগজে খবর পড়ে একটা স্কেচ তৈরি করেছে ভিতরে ভিতরে। শুধু অন্য জাতের ছেলের সঙ্গে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ার জন্য যার শরীর থেকে শেষ লজ্জার সূতো পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারপর ঘোরানো হয়েছে একটু একটু করে কৈশোর পার করে যৌবনে পা রাখতে দেখা সেই সব লোকের চোখের সামনে। নাঃ, পারছে না। একটুও ভাবতে পারছে না। সেই জন্যেই ডিটেল সব খবর নিয়ে দারুণ একটা কভার স্টোরি করতে চেয়েছে।
ঘরে পা দিয়ে গোটা দৃশ্যটা কেমন গুলিয়ে গেল। দরজার মখোমুখি চৌকিতে বসা এক মধ্যবয়স্কা। তার পাশে ঘোমটা পরা একজন। চৌকির একধারে বসতে ঘোমটা পরা সরে গেল একটু।
আবহাওয়া হালকা করতে নারায়ণ জিজ্ঞেস করল, আপনি যেন কোথা থেকে এসেছেন?
——কোলকাতা।
——-আপনি কি সব জানেন?
——–কিছুটা। আর সবটা জানতে এতদূর আসা। শান্তির মুখোমুখি হতে চাওয়া।
——বিশ্বাস করুন, আমি আগে কিছু জানতাম না। সারাদিন মাঠে খাটি। আমরা আদিবাসী সম্প্রদায়। ছেলেটি একটু উঁচু জাতের। সেই জন্য যত দোষ আমার মেয়ের উপর পড়ল। বলতে বলতে হাত জোড় করে নারায়ণ, শুধু দেখা করা, একটু মেলামেশার অপরাধে এমন উলঙ্গ বিচার? এ কেমন রায়?
——সেই জন্যে এতদূর ছুটে আসা। কথাটা ভাবতে ভাবতে ও তাকাল ঘোমটা পরা মেয়েটির দিকে।ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। অনুরাধার একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা দেখে নারায়ণ একটানে ঘোমটা খুলে দিতে ও স্থির। এই প্রথম দেখল তার সাবজেক্টকে। কিন্তু নেড়া মাথা! বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করার মুহূর্তে নারায়ণ নিজেই রাগে ফেটে পড়ল, সে দিনের ঘটনার পর দিন ওদের দলের কয়েকজন এসেছিল এখানে। সঙ্গে এনেছিল নাপিত।
বুঝতে বাকি থাকে না অনুরাধার। এত চোখের সামনে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে সদ্য কুঁড়ি ভাঙা যৌবনকে,তার পরেও তারা ঘরে এসে কামিয়ে দিয়ে গেছে মাথা। কিন্তু এই শাস্তির কথা তো জানত না। ও আরও কাছে গিয়ে বসে। ধীরে ধীরে কাঁধে হাত রাখে শান্তির। লেখার বিষয় এসে এই ক দিনে সে নিজেই কেমন শান্তি হয়ে গেছে। কাঁধ ছেড়ে ওর মাথায় হাত রাখল অনুরাধা। এখান থেকে কেউ কি প্রতিবাদে উঠে আসবে না। জানে না অনুরাধা। চুল একটু একটু করে জন্ম নিয়ে একদিন ঢেকে দেবে লজ্জা এই জমিতে। শুধু বেড়ে ওঠার অপেক্ষা, কোনও একজনের।।
@copyright মেরী খাতুন।

৩০/০৫/২০২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here