সাম্য দর্শনের কবি রূপকথা লিখেছেন “কাল পরিক্রমা ”

463
সাম্য দর্শনের কবি রূপকথা লিখেছেন “কাল পরিক্রমা ”

কাল পরিক্রমা

                                 রূপকথা

একঝাঁক দাঁড়কাক যে বাড়ির উঠোন জুড়ে দাঁড়িয়ে, সারাটা সকাল গলা সাধে, সেই বাড়িটা আমার ছিলো।
সেই বাড়ির দাওয়ায় বসে আমার মা আউসের দিনে চিড়ের মোয়া বানাতেন।

প্রাচীরের গাঁ ঘেসে ছিলো পাবদা গাছ, চালজুড়ে কুঁমড়ো লতা আর পুঁইশাক।
কলের বাড়তি পানি নিষ্কাশনের যে জলাটি ছিলো, সেখানেই চাষ হতো দেশি মাগুর মাছ।

উঠোন জুড়ে, আম, কাঠাল, পেয়ারা আর আনার গাছ ছিল,
উঠোনের এক কোণে ছিলো আমার সাধের সন্ধ্যা মালতির ঝাড়।
তার সাথেই ছিলো লাল গাঁদা গাছ কয়েকটি।

ফাগুনে আম্রমুকুলের ঘ্রাণে উল্লসিত হতো পাড়া ।
মা স্বপ্ন বুনতেন চোখে, ধান লাগানোর দিনে।
আমাদের ছোট সংসারে প্রাচুর্যতা ছিলোনা, ছিলো একরাশ নির্মল আনন্দ আর প্রশান্তি।

শনি আর মঙ্গলবারে বিলপাড়ের হাট থেকে বাবা বাজার করে আনতেন,
আমাকেও সাথে নিতেন মাঝে মাঝে।
দেরি হলে যে ঘরে ফেরার জন্য তখন কাঁন্না করতাম
সেই ঘরের বারান্দা জুড়ে চরম শূন্যতা এখন।

সেই বাড়ির উঠোন জুড়ে শূন্যতা, লোনা ধরতে ধরতে ধ্বসে গেছে প্রাচীর।
পরিচর্যায় ঘাটতির কারনে গাছগুলোও নেই।
কেউ আর চিঁড়ে, মুড়ির মোয়া বানিয়ে রাখেন না।
পুঁইশাক নেই এখন চালের পরে।
আর আমার সাধের মালতি!!!

নেই, নেই! কিচ্ছু নেই আর আগের মতো,
বাবা হাটে যান এখনো, গুড়ের মুরালি হয়তো আনেন না আর। কে খাবে?
সেদিনের খুকু নেই, খোকাও সংসারী।
বাবার যে অবসর।

আমাদের সে বাড়ি নেই আর, নেই ঘরে ফেরার আনন্দ,
যে ভিটেতে বসবাস এখন উই আর পিপীলিকাদের
সেই ভিটেতেই একদিন আমরা থাকতাম।।
সেই ঘরগুলোর কি যে যত্ন ছিলো একদিন।।

সেই দিন হয়েছে গত,
কিচ্ছু নেই, কিচ্ছু নেই আর আগের মতো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here