কলমযোদ্ধা আওলিয়া খানমের ঈদ এর একটা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখা গল্প “করোনা ঈদ ”

671
কলমযোদ্ধা আওলিয়া খানমের ঈদ এর একটা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখা গল্প “করোনা ঈদ ”

করোনা ঈদ

                    আওলিয়া খানম

নাজমা বেগম মনে মনে ভাবছে রোজা প্রায় শেষের পথে, তবু নেই জাকাতের কাপড় দেওয়ার তোরজোড়। নেই ঘরে ঘরে মার্কেটে যাওয়ার ধূম।
গতবছরও নাজমা বেগম গ্রামের বাড়ীর গরীর আত্নিয়দের জন্য জামাকাপড় শাড়ী কিনেছিল এবং তানিকে নিয়ে দু/তিনটা টা মার্কেট ঘুরে তবে তার জন্য জামা পছন্দ করেছিল।এবার জামা থাক দুরের কথা, মার্কেট মাত্রই খুললো । তানি মাকে বলার সাহস পাচ্ছেনা।তানি অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী।
একদম বাইরে যাওয়া তানির বারন। সেই যে ১৬মার্চে স্কুল বন্ধ হলো,তারপর থেকে সে ঘরেই আছে । তানি বাবা মার একমাত্র সন্তান। তানির বাবা মার বিয়ের দশ বছর পর তানির জন্ম। সে হিসাবে তানি অত্যন্ত আদরের ।তানির বাবা একটা বেসরকারী প্রতিষ্টানে উচ্চপদে কর্মরতঃ কিন্তু এখন অফিসবন্ধ। তবু মাঝে মাঝে যায়। যাওয়ার সময় বার বার তানিকে বলে মা,তুমি কিন্তু কোথাও যাবেনা। সাথে ওর মাকেও বলে,তোমার কিছু প্রয়োজন হলে দারোয়ানকে বলো এনে দেবে ।
কদিন যাবত কাজের মহিলটা গজর গজর করছে আর বলছে, কি রোগ আইলো দেশে, ঘর থেইক্যা বাইরন যায়না। এইটা আবার কেমন অসুখ ।
যে অসুখ চোখে দেখা যায়না,এটা কোন অসুখ হইলো, তানির মা বলে জমিলা, যা বোঝনা তা নিয়ে কথা বল কেন?
তোমার স্বভাবটাই এমন কাজ না থাকলেই গজ গজ করতে থাকো।
কি করুম খালাম্মা কন? জমিলাটা পোয়াতী,সামনের মাসেই বাচ্চার মা হইবো। কন তো দেখি আমি কেমনে যাই ।
তানির মা নাজমা বেগম বলেন,সামনের মাস আসুক। তখন গাড়ী চললে তুমি যাবে ।আর যদি না চলে,তুমি তো বোঝই কারো জন্য কোন কিছু আটকে থাকেনা।তারা নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করবে ।
ওখানে তো তোমার ছেলেও আছে ছেলের বও আছে ।
ঐ বওয়ের কথা কইয়েন না খালাম্মা । একটা নচ্ছার মাইয়া । ওর জন্যই তো আমি এইখানে পইড়া আছি ।
জমিলা তুমি কিন্তু খুব ভালো আছো, তুমি মাসে মাসে মেয়েকে টাকা পাঠাচ্ছো, নিজে জমা করছো, ছেলের কাছে থাকলে কি তা করতে পারতে?মাঝে মাঝে ছেলেকেও তো দাও।তাইনা।
এইটা ঠিক কইছেন খালাম্মা।খালি ঝগড়া ফ্যাসাদ করন লাগতো।
এইটা চিন্তা করলে মনে হয় আমি বেহেশতে আছি ।
আর আপনেরা তো খুব বালা মানুষ ।আমার উপরে সব ছাইড়া দিয়া রাখছেন ।
মার্কেট খুলছে,। আমি তানিকে নেবোনা।একাই যাবো। কিছু কেনাকাটা তো করতে হবে।
তোমার খালু আগামী কাল অফিসে যাবেনা্ আমরা দুজনে যাবে।জমিলার মা তোমার কি কি লাগবে,বলো তানি লিখে দেবে ।তানি তুমি তোমার নিজেরটাও লিখো ।
মা আমি যাবো ।
না মা, বাবা রাগ করবে।আর কয়টা দিন বাসায় থাকো মা । দুর্যোগ কি বেশীদিন থাকে । আগামী ঈদ আমাদের অনেক ভালো হবে।তুমি টিভি দেখো না হয় ল্যপটপে গেইম খেলো।
গেইম খেলতে আমার আর ভালো লাগেনা।
আমি বাইরে যাবো তোমার সাথে ।মাক্স আর গ্লাভস পরেইতো যাবো। আর ছোটদেরতো করোনা হয়না মা।
ঠিক আছে তোমাকে নিয়েই যাবো ।তোমার বাবা আসুক।
তানি খুশীতে ঝকমকিয়ে উঠলো ।
ওর মা তাকিয়ে দেখলো।
জমিলাও বললো, বাইরে যাওনের কথা শুইন্যা আপামনি কি খুশীডাইনা হইছে ।
মা এই ঈদে বাসায় মামা চাচা ফুপু খালা ওরা কেও আসবেনা। কি জানি এখনো জানিনা আসবে কিনা বা আসতে পারবে কিনা।
মা কারোতো করোনা হয়নি।তবে আসতে সমস্যা কি?
আচ্ছা মা এসব নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো।

তানি মাকে ডেকে বললো, মা দেখো, আমাদের পাশের বাসার আন্টি সাবা ও তুবাকে নিয়ে মর্কেটে যাচ্ছে । মা দেখো , ওদের মা বোরখা পরেছে, কিন্তু সাবা আর তুবা কিছুই পড়েনি।
যেতে যেতে ওরা দুজন মাকে বলছে মা আমরা যে মাক্স পরলামনা , কি হবে , ওর মা বললো, বাইরে গিয়েই আগে তোদের দুজনের জন্য মাস্ক কিনবো। তারপর দোকোনে যাবো।
মা এটা কি বললে তুমি, আগে মাক্স কিনবে, মাক্স কি রাস্তা থেকে কিনবে ।
দোকান থেকে কিনবো। তবে যে তুমি বললে পরে দোকানে যাবে ।
বেশী পাজি হয়েছো, খালি কথায় ভূল ধর ।
দুজন হেসে কুটি কুটি ।
রাস্তায় একটা ঔষধের দোকোনে গাড়ী থামিয়ে আগে এক বক্স মাস্ক, হ্যান্ড স্যনিটাইজার ও গ্রাভস কিনে নিলো। মেয়ে দুটোকে বললো,এবার পড় মাস্ক পর, হাতে স্যানিটাইজার লাগিয়ে নিয়ে তারপর গ্লাভস পর।
এখন শান্তি হয়েছে ।মেয়ে দুটো আবার হাসতে শুরু করলো । সামনে থেকে ড্রাইভার মুখ ঘুরিয়ে বলছে আপুরা এত হাসছে কেন?
মাহমুদা বেগম বললেন, এই মোখলেস মাথা ঘুরিয়োনা। সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ী চালাও।
একটু পরেই ধানমন্ডি তে একটা মার্কেটের সামনে গাড়ী থামালো,। গাড়ি থেকে নামতে নামতে মাহমুদা বেগম মেয়েদেরেকে বললো, শোন বেশী ঘুরাঘুরি করতে পারবোনা। দ্রুত ড্রেস পছন্দ করে ফেলবে ।
দুজনই লক্ষি মেয়ের মত ঘাড় কাত করলো।
কিছুক্ষনের মধ্যেই তাদের দুজনেরই দুটো করে ড্রেস কেনা হয়ে গেল ।মার্কেট থেকে বেরুবার সময় মেয়েরা বললো,মা চলনা, ষ্টার কাবাব থেকে ইফতারী কিনে নেই ।
গাড়ীতে উঠতে উঠতে বললো আচ্ছা ঠিক আছে । ষ্টার কাবাব এর কাছে ্আসতেই দেখলো ওরে বাপরে ইয়া বড় লম্বা লাইন ।
মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললো, দেখছিস, কিনবি? মেয়ে দুটারই মন খারাপ হয়ে গেল।
তখন ড্রাইভার বললো, খালাম্মা আমার এখানে একটা ছেলে পরিচিত আছে ।কি কি কিনবেন যদি বলেন আমি দেখি একটু পারি কিনা।
ওর হাতে একহাজার টাকা দিয়ে বললো, ঝাল ফ্রাই, পরোটা, আর যা ভাল আছে দেখে শুনে নিস ।
আশ্চর্র্য আধা ঘন্টার মধ্যে চলে আসলো দু’হাত ভর্তি করে কিনে নিয়ে আসলো।
সাবা তুবার মুখে হাসির ঝিলিক।
মাহমুদা বেগম তাকিয়ে দেখলেন । তার নিজেরও খুব ভাল লাগছে ।
ওরা বিকেল পাঁচটার মধ্যেই বাসায় ফিরলো। তানি বারান্দায় দাড়িয়েই ছিল। ওদেরকে বললো এই তোমাদের তো যাওয়ার সময় মুখে মাক্স ছিলোনা।মার্কেট থেকে কিনে পরেছো বুঝি।
ওর বললো ,হ্যা মা কিনে দিল। তখনই ও মুখ ফিরিয়ে তানি মাকে ডাকলো,আর বললো মা ও মা দেখে যাও ।
তানির মা দৌড়ে আসেলো।এরই মধ্যে মাহমুদা বেগম উপরে তাকিয়ে বললেন কেমন আছেন ভাবী ।
উত্তরে বললেন, আর থাকা, কোনরকমে বেঁচে আছি ।
এরকম কার ভাল লাগে ।
বাসায় থাকতে থাকতে একবারে বোর হয়ে যাচ্ছি ।
ভাবীএকটু ঘুরে আসেন মার্কেটে যান ভাল লাগবে ।

পরদিন তানির বাবা মা তানিকে নিয়ে শপিং এ গেল। এমার্কে সে মার্কেট ঘুরে সবার জন্য কেনাকাটা করলো,তানিও নিজের পছন্দ প্লাস তার বাবামার পছন্দ মিলিয়ে ৩ সেট জামা এবঙ তার সাথে মিলিয়ে স্যান্ডেল কিনে নিলো ।
গাড়ীতে উঠেই বললো, কিছু ইফতারী কি কিনে নেবো ?
সাথে সাথেই তানি বললো,হ্যা বাবা ,কিনে নাও । এবার রোজই বাসায় বাবানো ইফতারী খেতে হচ্ছে ।একদিনও বাইরের ইফতারী খাইনি।
পছন্দমতো একটা ইফতারীর দোকান দেখে ওর বাবানেমে পড়লো। প্রায় আধাঘন্টা পরে ফিবলো ইফতারী নিয়ে ।
তানিরা যখন বাসায় ফিরছে,তখনই দেখেলো ,সার তুবা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । ওরা দুবোন দেখেই চিৎকার করে উঠলো, এই তুবা দেখ তানিও ওর বাবা মার সাথে মার্কেটে শপিং এ গিয়েছিল ।
উপর থেকেই জিজিঞেস করলো, এই তানি তুমি কটা ড্রেস কিনেছো ।তানি তিনটা আংগুল দিয়ে দেখারো,আর মুখে বললো তিনটা।
ওরা বললো,জুতা কিনেছো, হুম তাও কিনেছি ।আচ্ছা আমরা এবার ড্রেস পরে কই যাবো।তানিই বললো ঘরেই বসে থাকবো।
তুমি আমাদের বাসায় এসো, আমরাও তোমাদের বাসায় যাবো।
বললো ও তোমরা জানোনা,এবার কোথাও যাওয়া যাবেনা।
এটা আবার কেমন ঈদ হবে তাইলে ।
এটা করোনা ঈদ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here