জলপাঠ
———————
অ ল ক জা না
পৃথিবীর মতোই মানুষ। তিনভাগ জল একভাগ মাটি। এই স্থলভাগটুকু আমাদের আশ্রয়। নিরন্তর কোলাহলের মধ্যে একটু স্বস্তি একটু নিশ্চয়তা খুঁজতে সবাই কেমন প্রতিজ্ঞাপাঠে মগ্ন। আমাকে কেউ ত্যাগ করেছে। আমিও এই পন্থানুসরণে অভ্যস্ত। কারণ কিছু কিছু সম্পর্ক ও সম্পর্কের মানুষ ত্যাগে লাভ হয় পরম শান্তি ! স্মৃতি বিস্মৃতির দোলাচলে কিছু প্রহর মনন-রোয়াকে আপনা থেকেই গচ্ছিত থেকে যায় ক্লান্তিহীন অবিকৃত। ও থাকবেই, বামন গ্রহের মতো। দিনযাপনের চলমানতায় ভূমিকাহীন নিষ্ক্রিয়।
মনের যা কাজ মনে পড়া, তাও একদা গা সওয়া হয়ে যায়। এখন বেঁচে থাকতে হবে প্রয়োজনকে সঙ্গে করে এটাই এখন দিনরাত্রির মতো চরম সত্য।
আসলে অবধারিত ব্যাপার হলো ভিড়ভাট্টার মধ্যেও একা হয়ে পড়াই পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম।
মনখারাপের ব্যাধি সঙ্গে করেই প্রতিটি দিনের রোজনামচায় প্রিয়মুখ প্রিয় মানুষের উপস্থিতি অস্বীকার করা না গেলেও নীরব অবিকৃত থাকাও একদা অভ্যস্ত হয়ে যায়।
মাড়নযন্ত্রে একটি জীবন্ত মানুষকে পিষাই করলে তিনভাগ দলাপাকানো তরল আর একভাগ হাড়মাংস পাওয়া যায়। পৃথিবীর মতো, এক পৃথিবী মানুষ। এবার প্রশ্ন হলো জল ও মাটির ধর্ম, মানে প্রকৃতি। সমচ্চশীলতা, আকারহীন, তাপে বাষ্পীয় রূপ আর শীতলতায় বরফ হওয়া। মাটি তো মাটিই জল পড়লেই গর্ভবতী। বীজ চাই। ফসল উন্মুখ।
পরিস্থিতি মোতাবেক আমারা জলের ধর্মই মেনে পার হই। আবার মানতেও চাইনা মাঝেমধ্যে। কে কী ভাবে নেয় নিতে পারে ? অথবা কার মধ্যে কে কতখানি বসত করে আছে ? সবকিছুই পরিবর্তনশীল সময় সাপেক্ষে। এখন তোমাকে আর দোষ দিই না। কারণ তুমি যথার্থই জলের ধর্ম পালন করেছো।
আমি বরফ হয়ে গেছি আর তুমি বাষ্পীয় আদলে একেবারে নাগালের বাইরে থেকে গেছো। এটাও সত্যি যে নিপাতন রীতিতে কখনো সখনো আমি, তুমি অথবা সমগ্র জীবজগৎ স্ববিরোধীতায় অনন্তকাল ভুগছে। যদি সেই শুভক্ষণ আসে মানে জলের ধর্ম অস্বীকার করে আমাদের মুখোমুখি দেখা হয়ে যায়, বিদ্বেষ অভিমান নয় কেবল দৃষ্টি সুখেই না হয় আমাদের পুনর্জন্ম হোক।