চোখতীর্থ
——————————
অ ল ক জা না
পরমায়ুর শরিক একজোড়া চোখও তো হয়। তাদের বয়স সমান ভাবেই বাড়ে। কতটুকুই বা চিনে ওঠা যায় ? কাছে দূরের দৃশ্যরেখা। একটা অজ্ঞাত অন্ধত্ব আজন্ম চোখের ভেতর পাকাপাকি ভাবে সাংসার পেতে বসে আছে যে ! সেজন্য তীক্ষ্ণধার চোখের দৃষ্টির সহায়তায় পরিচিত জগতের পরম দৃশ্য আপ্লুত করে বইকি ? রামকৃষ্ণ অ্যারিস্টটল প্লেটো প্রমুখের চোখের ভেতর দিয়েই মহাবিশ্বের বস্তু জগতের নানান ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত বোধ ও দৃশ্যসুখে অবশ্যই আমাদের সামিল করে।
এখান থেকেই চোখের মান মূল্যায়ন তর্জমা করার সপক্ষেই ইচ্ছে হলো আজ কিছু প্রতিবন্ধকতা লিখি। রবীন্দ্রনাথের চোখ দিয়ে কতকিছুই না প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দেখা হয়েছে। তার বিরামও নেই আজতক। শ্রীকৃষ্ণের চোখের দৃশ্য সবটা না মানলেও অজান্তে অনেকটাই লালন পালন একান্তে চলতেই থাকে। তাই হয়তো কাওকে অনর্থক কষ্ট দেয়ার আগে নিজে কষ্ট পাওয়ার কথা বেশি মনে পড়ে যায়।
সবাই সবার দৃষ্টি ধার নিয়ে হাঁটছি, দেখছি ভাবছি সতর্ক হচ্ছি তো আমরা একবাক্যে স্বীকার করবোনা কী সবাই আমরা জন্মান্ধ কিংবা এর ওর কাছে দৃষ্টি ধার করি ? তার প্রতি নির্ভরতা মানেই তার দৃষ্টিপথের আমি নিরলস যাত্রী। এক্ষেত্রে একজন কেউ কিংবা নির্দিষ্ট কেউ নাও হতে পারে। হতে পারে একাধিক আলোর রেখা। আসলে কে কবে একক আশ্রয়ে বেঁচে ছিল, না আজও বেঁচে আছে ?
কেউ চিনিয়েছে পাহাড় কেউ নদী কেউ আবার গিরিঘাত। সুখ-দুঃখ হিংসা-ভালোবাসা ঘিরে থাকা করতল সবই তো কারো না কারো চোখের আলোয় একদা দৃশ্যমান হয়েছিল ? তারপর এভাবেই নিজের চোখ একদিন হয়তো জানতে পারলো মানুষ ও মানুষাকারের পার্থক্য। সূক্ষ্ম ভাবে দেখলে সবাই প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন রকম ফেরে। সবটা সব সময় দেখা যায় না বা দেখা সম্ভবও নয়। আমি সত্যিই জন্মান্ধ। আমার মতো হয়তো অনেকেই এটা সমর্থন না করে পারবেন না যে তিনিও আমার মতোই।
ফলত আমাদের পরিক্রমার আলো এক নয় একাধিক। সে যদি কৃপণতায় আলো আড়াল করে আমিও বিকল্প চোখের দৃশ্যের জন্য প্রার্থনা সাজাই। কারণ একা বাঁচা যায় না যে ! দু চোখের দৃষ্টি একটা গোটা জীবন কাটানোর জন্য সত্যিই যথেষ্ট নয়। তাই তুমি যদি স্বেচ্ছায় কখনো অজ্ঞাত নির্বাসনে যাও আমিও অন্য কোন সুহৃদের দৃষ্টি নিয়ে বাঁচবো, কারণ চোখ আসলে এক তীর্থ স্বরূপ। হয়তো দেখবে, জেনেও যাবে আমি নতুন করে হাঁটতেও শিখে গেছি !