পুঁইমাচা ও মাটির উনুন
আশিস মিশ্র
আমাদের পুঁইমাচা ও মাটির উনুনের আজ খুব জ্বর।
তুমি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কলকাতা হয়ে
রাধানগর গ্রামের তালপুকুরে এসে রাস্তা
হারিয়ে ফেলেছো।
সূর্যপুরুষ, দেখতে পাচ্ছো?
আমাদের পুঁইমাচা ও মাটির উনুন ছাড়া শরীর বাঁচে না;
আজ তাদেরই শুধু বুক দিয়ে
আগলাচ্ছি আমরা।
শোন, সব রাস্তা যখন ঘরের দিকে যাচ্ছে
তার একটি ধরে নিয়ে চলে যাও, চলে যাও…আবার এসো, হারিয়ে যেও না।
সূর্য পুরুষ, আমাদের পুঁইমাচা ও মাটির উনুনের পাশে বসে
তুমিও মাঝে মাঝে শুনে নাও
রবীন্দ্রনাথ থেকে বেটোফেন।
প্রবল জ্বরেও লিরিকের স্বাদ পাওয়া যায়?
তখনও কি তুমি মালার্মের কবিতা পড়বে?
তখনও কি তুমি দখিনা হাওয়ায় বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে
ডাকবে কি তোমার কিরণমালার অন্তরাকে?
সে কি এসে ঝাঁপ দেবে তোমার বুকে?
সে কি তোমার অহংকারহীন ওষ্ঠে
ছোঁয়াবে তার হৃদয় -সূর্যমুখী?
এসব আজ শুধু কল্পনা –গোধূলির মতো বিষণ্ণতা।
তোমাকেও তো রাষ্ট্র জানে–তুমি তো অপদার্থ নও
মাটিজীবি আর মৃতজীবি, এই দুটি রূপের সঙ্গে
তারও চিরকালিন বসবাস বুঝেও
তোমার বিদির্ণ বক্ষের আর মেরামত করলো না সে।
তুমি তাই মনে মনে ভাবছো,
প্রেমিকা চলে গেলে যেমন অবস্থা হয় —
তেমনি পুঁইমাচা ও মাটির উনুন মরে গেলে
সাত মহাদেশের চোখ ভিজে যায়…
আনিস মিশ্রর কবিতা বরাবরই মন কাড়ে। এবারের কবিতা অন্য মাত্রা। অনেক অভিনন্দন।