নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব
মহুয়া ব্যানার্জী
‘তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা
মন জান না’
মন, এক অবাক বিস্ময়। এ যেন গভীর এক সমুদ্র। যার তল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যার গর্ভে লুকিয়ে আছে অপার রহস্য। মানুষ সবসময়ই মন বস্তুটিকে প্রাধান্য দেয়। অথচ সেই মনের হদিস জানা নেই আমাদের। বিজ্ঞান বলে , মস্তিষ্কের নির্দেশেই আমাদের শরীরের যা কিছু অনুভব! হরমোন মস্তিষ্কের সেই নির্দেশ মেনেই আমাদের হাসায়, কাঁদায়, আবার ভালবাসতে শেখায়। কি অদ্ভুত না? মর্ডান সায়েন্স এর যুগে এ তথ্য সকলেরই জানা। তবুও, আমরা মন নামক এক অলীক বস্তুকে নিজেদের আপন করে নিয়েছি।মন আমাদের অপর স্বত্ত্বা।
মন কোথায় থাকে তা জানা নেই , হৃদয়কেই মন বলে আজন্মকাল বিশ্বাস করে আসা। মন যেন এক বিরাট উঠোন। যার মধ্যে অনেক ঘর, ঘরের ভেতর গোপন কুঠুরি। সেই ঘরে কতজনের বাস তা মন নিজেই জানে না।
ফ্রয়েডের কথায়, মন আর মস্তিষ্ক এক। চেতন আর অবচেতনের মাঝে কেবল বিভিন্ন ইমোশনের যাওয়া আসা অবিরত।
কিন্তু সবই কি বিজ্ঞান দিয়ে , তথ্য দিয়ে বিচার করা যায়? কে জানে! বিজ্ঞান সত্য। কিন্তু মনের খেলাও যে সত্য।
এই যে বসন্ত এলেই মনের ভেতর ফুরফুরে এক হাওয়া বয় ,প্রেমে বিরহে মন উথালপাথাল ঝড় ওঠে। মনে হয় সব এলোমেলো হয়ে যাক। এ সব কি এক কথায় ব্যখ্যা করা যায়! মনের ঘরে যত্ম করে রেখে দেওয়া সেই সব গোপন কথা, গোপন ভালোবাসার ছবি, চাহিদা গোপনই থাকে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতেই পারে না। বড় মজার এই মনের ঘর। ব্যাঙ্কের ভল্টের থেকেও নিরাপদ।
আবার না পাওয়ার যন্ত্রণা গোপন মন কুঠুরিতে বন্ধ থাকতে থাকতে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। সেই হিংসার বিষ অন্য মানুষকে, সমাজকে তিলে তিলে ধ্বংস করে। পৃথিবী জুড়ে সেই ধ্বংসের খেলা চলছে অবিরাম।
অথচ এখনও ফুল ফুটছে। চাঁদ ,সূর্য , এই প্রকৃতি অনাবিল সৌন্দর্য্য নিয়ে সময়ের সাথে প্রবহমান। এই রূপ দেখে এক মন মুগ্ধ হয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করছে, শিল্পকলায় ধরে রাখছে এই সৌন্দর্য । আবার সেই মনই ধর্ম নিয়ে, জাত নিয়ে অথবা নারীদের কুক্ষিগত করে রাখার প্রচেষ্টায় উত্তপ্ত।
সমুদ্রে অনবরত ঢেউ ভাঙা ও গড়ার মতই মনের ভেতর ভাল মন্দের যুদ্ধ চিরকাল। অনবরত ভাঙাগড়া চলছে সেখানে। নিত্য দ্বন্দ। সেই যুদ্ধে কখনো ভালোর জয় আবার কখনও মন্দের। তাই বোধহয় মনের খেলা বোঝা সহজ নয়। আজও মন এক রহস্যময় অজানা দ্বীপ হয়েই রয়ে গেছে।