“প্রতিদান” ছোটগল্পটি লিখেছেন কবি ও সাহিত্যিক তাইম শেখ

874
প্রতিদান-ছোটগল্প-কবি-সাহিত্যিক-তাইম-শেখ- doinik-alap-art-literature-bangla-story
লেখক: কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক তাইম শেখ
কালের মৃদু আলোর ঝলকানি চোখে এসে ঘুম ভেঙে দিল। টেবিলের ওপর রাখা ঘড়িটা কোনোরকম হাতিয়ে খুঁজে পেলাম। ঘড়িতে ৯টার বেশি বাজে, তাই ক্লাসে যাওয়া হলো না। মায়ের বকুনি শুনতে শুনতে নাস্তা খাওয়া শেষ করলাম। নিজের রুমে গিয়ে মোবাইলে ডাটা অন করতেই একটা এসএমএস এলো।
প্রফাইলে নামটা ছিল অভাগী। নামটা যে আমার অচেনা তা নয়, পরিচিত। শুধু পরিচিত বইকি খুবই পরিচিত। তিন বছর আগের কথা। দু’জন দু’জনকে না দেখে একদিনও থাকতে পারতাম না। দু’জন দু’জনকে খুব সহজে বুঝতে পারতাম। মেয়েটির ডাক নাম ফোঁটা।
একদিন হুট করেই ফোঁটার বিয়ে হয়ে যায় অন্য ছেলের সঙ্গে। অনেক চেষ্টা করেছি যোগাযোগ করার; কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। দিনগুলো কতই না বেদনার ছিল সে কথা কাউকে বোঝানো যাবে না।

এসএমএস পাওয়ার পর আমিও উত্তর দিলাম। ও আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। আমিও কোনো কিছু চিন্তা না করে সম্মতি দিলাম। আজ বিকেল ৫টায় লাভ রোডে আসবে ও। আমি ৫টার আগেই সেখানে পৌঁছলাম। আগে ও আমার জন্য অপেক্ষা করত আর আজ আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছুই না পরিবর্তন হয়। আগের ঘটে যাওয়া কত কথাই আজ মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। আজ ওর সঙ্গে দেখা করতে, ওর প্রিয় গোলাপি রঙের শার্ট পরে এলাম।

আরো পড়ুন: “অচিন পাখি” ছোটগল্পটি লিখেছেন তরুণ লেখক তাইম শেখ

আমি অপেক্ষা করছিলাম। ৫টার বেশি বাজে। কিন্তু কাউকেই দেখছি না। হঠাৎ দেখলাম ব্লু রঙের জামা পরে একটি মেয়ে দুই বছরের একটি বাচ্চাকে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার কাছে এলে অবাক হলাম। মেয়েটিকে দেখে আমি হতবাক! ভাবতে লাগলাম কে এই মেয়ে? এর আগে তাকে দেখেছি বলে তো মনে হয় না। মেয়েটি আমাকে বলল কেমন আছেন? আমি আমতা আমতা করে বললাম, জি ভালো। আপনি? আপনি কে? মেয়েটি উত্তর দিল আমি ফোঁটার বান্ধবী পুষ্প। ফোঁটা কোথায়? ফোঁটা আসেনি? আমি জানতে চাইলাম।

মেয়েটি কিছু না বলে একটা চিঠি হাতে দিল। কাগজটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।

সাজু, কেমন আছ জানি না, আর কেমন আছ একথা জিজ্ঞাসা করার অধিকারটুকু আমার আজ নেই। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কখনও কেউ সুখি হতে পারে না। আর তার প্রমাণ জীবনের শেষ দিগন্তে এসে বুঝলাম, যখন আর করার কিছুই নেই। একদিনের মধ্যেই ছেলেপক্ষ আমাকে দেখে পছন্দ করে বিয়ে পাকা করে ফেলে। সবার কঠোর সম্মতির চাপায় সেদিন আমার মতামতের কোনো মূল্যই ছিল না। নিজের ইচ্ছাকে গলাটিপে হত্যা করে ঘর বেঁধেছিলাম অন্য একজনের সঙ্গে। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও যার সঙ্গে ঘর বাঁধার কথা ছিল সেও আজ না ফেরার দেশে চলে গেছে। আর আমিও যেতে বসেছি। জানি না তোমার সঙ্গে আর দেখা করার সুযোগ হবে কি-না। অনেক দিন হলো আমি ক্যান্সারে ভুগছি। হয়তো তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই আজ আমার এ অবস্থা।
আমি তো চলে যাব; কিন্তু আমার মেয়ে নিধির কী হবে? ও যে এতিম হয়ে যাবে। ওর আর পৃথিবীতে কেউ থাকবে না। তাই আমি তোমার কাছে ওকে রেখে গেলাম। আমার প্রেমের প্রতিদান হিসেবে না হয় ওকে তোমার কাছে রেখো।

চিঠিটা পড়ার পরে অশ্রু ধরে রাখতে পারিনি। এরই মধ্যে পুষ্পের গলার আওয়াজ আমার কানে এসে পৌছালো। ফোঁটা আর নেই। এই চিঠিটি অনেক আগেই আমাকে দিয়েছিল।

Content Protection by DMCA.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here