সৃষ্টি স্নান
সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য
শ্রাবণ মাসের বাদল দিনে
মেঘ ডাকে শোনো ঐ রে!
বাদলের ধারা ঝরছে অঝোরে,
মাঠ-ঘাট জলে থৈ থৈ করে।
টলমল পুকুরে জল!
হাসছে যেন আকাশ দেখে।
বলছে আসো বৃষ্টি স্নানে,
ভিজব আজ মনের আনন্দে।
কদম,কেয়া,দোলনচাঁপা
বেলি,জুঁই,হাসনাহেনা
কত ফুল নাম না জানা,
ফুলে ফুলে পূর্ণ শাখা।
বৃষ্টির দিনে একলা বসে
ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ে,
চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে,
বৃষ্টি দেখি চুমুক দিয়ে।
মনের চিলেকোঠার আড়ালে,
কাল্পনিক ভাবনা উঁকি মারে।
বৃষ্টির ফোঁটায় হাত লাগে,
হৃদয় মাঝে সুখের বিণ বাজে।
শনশন বাতাসে বয়ে চলে,
ছুঁয়ে দিল নরম গালে।
বাতাসে ঘ্রাণ যে ভাসে,
জুড়ালো প্রাণ সুবাসে।
ঝুমুর ঝুমুর বৃষ্টি নামে,
মাছগুলো সব ডাঙায় আসে।
বৃষ্টির ফোঁটা মাথায় নিয়ে,
মানুষ সকল মাছ ধরে।
পুকুর মাঝে লম্ফ দিয়ে,
আদুল ছেলে সাঁতার কাটে।
মাছেরা খেলার ছলে,
বেঁধে ঝাঁক চমকে ছোটে।
গুরুগম্ভীর বিকট আওয়াজ!
নদীতে এসেছে প্রবল জোয়ার।
পাল তোলা নৌকা নদীতে,
মাঝি নেই ঘাটে!
নৌকা বাঁধা সারে সারে…,
দুলছে নৌকা ঢেউয়ের তালে।
ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে,
খালি পায়ে নেমেছি মাঠে।
মন ছুঁয়ে যায় নরম ঘাসে,
সবুজ ফসল মাঠে মাঠে।
বর্ষণে রূপ-যৌবন ফিরে,
মরা নদী জেগে ওঠে।
শুষ্ক ধরণী সিক্ত হয়ে,
প্রাণ ফিরে বর্ষার আহ্বানে।
ছাতা নিয়ে পিচ্ছিল পথে,
কৃষক যায় কাঁচি হাতে।
ডুবন্ত ফসল তুলে আনে,
অনবদ্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে।
দিঘীর ঐ স্বচ্ছ জলে,
আলো-ছায়া খেলা করে।
আকাশ ঘেরা মেঘে মেঘে,
হলদে পাখি গায় ডালে।
টিনের চালে সেতার বাজে,
পথে ব্যাঙ লাফিয়ে চলে।
ব্যাঙগুলি সব ডোবার মাঝে,
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ সদায় ডাকে।
টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে,
দুষ্টুরা সব খেলছে মাঠে।
ফসলের মাঠগুলি মিলে মিশে,
বিল-ঝিল-হাওর-বাঁওড় গড়ে তোলে।
বর্ষা অশান্তিকে দূরে ঠেলে-
শান্তির বার্তা পৌঁছে দেয় ঘরে ঘরে।
বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে দেয় ধরণীকে,
রহস্যময় আবেগ তৈরি করে মানবমনে।
তারিখ: ২৬.০৭.২০২১ খ্রিষ্টাব্দ