নোঙ্গর
**নাসরিন জাহান মাধুরী
নাবিক এখানে নোঙ্গর করোনা তোমার তরী
এ দ্বীপ তোমার জন্য নয়–
এখানে নেই পানশালা
নেই কোন রঙ মহল
তুমি পাবেনা এখানে রূপবতী মৎসকুমারী
পাবেনা আলো ঝলমলে বিনোদন কেন্দ্র
পবেনা প্রমোদ বালা পায়ে পায়ে..
বড় বেশি প্রাচীন এ দ্বীপ আর দ্বীপের মানুষগুলো।
হ্যা,আছে, এদের আছে ভাষার ঐতিহ্য
যা তারা পেয়েছে ৫২র সুবর্ণ বন্দরে
তাই তাদের গর্ব
আছে স্বাধীন ভূখন্ড–
৭১এর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অর্জন করেছে
এ দ্বীপের কৃষক,শ্রমিক, দিনমজুর,গৃহবধু,
বুদ্ধিজীবি, লেখক,ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,
আবাল বৃদ্ধ বণিতা আর
তরতাজা অসীম সাহসী কিছু তরুণের রক্তে–
এখানে নোঙ্গর করলে তুমি পাবে
রিক্সার টুংটাং
ফেরিওয়ালা হকারের হাকডাক
জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়ার সুরধ্বনি।
রাখালিয়ার বাঁশির সুর–
পাবে জারি সারি ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি,ধামাল আর কীর্তনের
শুদ্ধতম সুধা–
আছে রবীন্দ্র, নজরুল, জীবনান্দ,বিভূতি, মানিক,রোকেয়া, সুফিয়া,
শামসুর আর আল মাহমুদ আরো কত গুণী জন।
অমর অক্ষয় বংগবন্ধুর বজ্রকন্ঠ।
আছে নকশিকাঁথার মাঠ
আছে সোজন বাদিয়ার ঘাট
শেষ বিকেলের মেয়ে,জ্যোৎস্না ও জননী,
আছে হাঙ্গর নদী গ্রেনেড —
আছে কিছু প্রদীপ্ত তারুণ্য
তোমার আগে আরো কতো নাবিক এসেছিলো
মৃগনাভীর লোভে–
নষ্ট করতে চেয়েছে জাতির বিশুদ্ধতা
ভাঙতে চেয়েছে গরিমা আর অহংকার।
পারেনি–
ফিরে গেছে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে।
এই দ্বীপ এই রুপসী বাংলা জেগে রবে চিরকাল
ফিরে যাও নাবিক ফিরে যাও।
আর যদি নোঙ্গর করতেই চাও–
এসো তবে মুক্তমনে–
এ বদ্বীপের মানুষেরা বড় অতিথিবৎসল —
আসো যদি সংস্কৃতির আদানের নামে
অপসংস্কৃতির বর্জ্য নিয়ে–
পারবেনা যেনো–
এই সরল মনের মানুষেরাই রুখে দিতে জানে তা।
মনে যদি থাকে কোন কুমন্ত্রণা
যেতে পারো অন্য কোথাও অন্য বন্দরে।