শুভ জন্মদিন
—– উৎপল বাগ
আজকে তোমার জন্মদিন চারিদিকে ঝলমলে আলোয়
প্রতিটি অভ্যাগত তোমায় ঘিরে জানাচ্ছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ —
আমি নিঃস্ব ভিখারি একগোছা বনফুল হাতে গিয়েছিলাম তোমার দ্বারে
তোমাকে দেবো বলে জন্মদিনের উপহার ,
এগুলোর দিকে কেউ কোনোদিন তাকায়নি ফিরেও
সবাই উচ্ছিষ্ট বলে দূর ছাই করে চলে গেছে যে যার মতো
আভিজাত্য আর স্ট্যাটাসের অহঙ্কারে।
সবার অলক্ষ্যে তোমাকে দেবো বলে
সযত্নে এনেছি তুলে ভালোবাসার রামধনু অনুরাগে ,
কিন্তু সামনে যে অসংখ্য হাই ফাই মানুষের ভিড়
তাদের সকলের হাতে সুদৃশ্য মোরকবন্দী দামী দামী উপহার
সবাই যখন বনফুল দেখে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে —
ছোটো হয়ে যাবে তুমি সকলের কাছে ।
অথচ সাধ ছিলো সাধ্যে কুলায়নি তোমার কাছে যাওয়া
দারিদ্রতার পরিহাসে ফেরার পথ ধরলাম বিষন্ন হৃদয়ে
পিছন থেকে মারা গাড়ি ধাক্কায় সযত্নে তোলা ভালোবাসা
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো রাস্তায় !
মনে হলো আমার সমস্ত হৃদয়কে দলে পিষে চলে গেলো মুহূর্তেই —
উদভ্রান্তের মতো ছুটে চললুম সেই সুদৃশ্য গাড়ির পিছনে পিছনে
হঠাৎ তোমার দরজার কাছে থমকে দাঁড়ালাম বিস্ময়ে
গাড়ির ভিতর থেকে একজন কোট প্যান্ট পড়া হ্যাণ্ডসাম মানুষ নামতেই
তুমি ছুটে এলে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে এক গুচ্ছ গোলাপ হাতে ;
অথচ আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সেই মানুষটির পিছনেই
তুমি একবার আড়চোখে দেখেই মুখটা কেমন করে ফিরিয়ে
চলে গেলে ঘরের ভিতর বুকের পাঁজর ভেঙে ।
অথচ একদিন তুমি ছুটে আসতে যে কোনো অজুহাতে
এসেই দু’বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরতে নিজের বুকে
তারপর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে আলাপে প্রলাপে
মাতিয়ে তুলতে আরণ্যক নেশায় —
আজ তোমার চারিদিকে ঝলমল করছে আলোর রোশনাই
কত জ্ঞানী গুণী ধনকুবের তোমাকে জানাচ্ছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা
আমি রয়ে গেলাম অপাংক্তেয় দলে !
মনে পড়ে সেই যে সেদিন বৃষ্টি ঝরা রাতে আমার কোলে মাথা রেখে
শুনিয়েছিলে সাত সমুদ্র তেরো নদীর গল্প
তুমি নাকি সেই পাতালপুরীর রাজকন্যা
যার রূপের আলোয় আঁধার রাতে আলোকিত হতো সরোবরে জল
সেই যে পাতালপুরীর গল্প মধুমতীর মতো
তুমিও নাকি রেখেছিলে ব্রত শুধু আমাকে ফিরে পাবার আশায় !
আজকে কি তোমার পড়ে না মনে সেই নির্জন বকুল তলে
আমরা দুজন মিশে গিয়েছিলাম বনফুলের মালা গলায় দিয়ে পরস্পরে
ভালোবাসার অনুরাগে আপ্লুত হয়ে বুকে মাথা রেখে কথা দিয়েছিলে
জীবনে কখনো ছেড়ে যাবে না আমায় —
জানো আজকে তোমার জন্মদিনে হারিয়ে যাওয়া ছবি
সন্ধ্যাকাশের তারার মতো একে একে উঠছে ফুটে হৃদয়াকাশে ;
মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সব পুরানো দিনের রূপকথা গল্প
যা ছিলো তোমার আমার একান্তই ব্যক্তিগত
আজকে হয়তো চিনতে পারোনি আমার দারিদ্রতার কারণে !
আবার হয়তো ভুলে গেছো মন থেকেই
মুছে ফেলেছো চিরতরে সমস্ত নেলপলিশের দাগ
আমার সেই পাঞ্জাবিটায় এখনো তোমার লিপিস্টিক জ্বলজ্বল করছে
মুছে ফেলিনি সযত্নে তুলে রেখেছি আলনায় ।
আর মুছে ফেললেই বুকের মাঝে যে দাগ রয়ে গেছে চিরতরে
তাকে মুছে ফেলবো কোন ডিটারজেন্টে ?
সেই দিনটি সত্যি ছিলো একথা অস্বীকার করি কি করে বলো ?
তোমার আমার কাছে ভালোবাসার দাগ কি মুছে যাবে
নাকি মুছে ফেললেই মন থেকে মুছে যাবে সেই সব স্মৃতি
যেগুলো রয়ে গেছে বিভিন্ন ক্ষণ পল মুহূর্তে ?
ফিরে এলাম চারিদিকে শূন্য চরাচর কাল পেঁচার বিকট কলরব
ঘরে ইঁদুরের উৎপাত আরশোলা টিকটিকি একসাথে কটাক্ষ করে
আমার দারিদ্র্যেতাকে নিয়ে উপহাস করে ভাঙা আয়না !
তবুও অন্তর থেকেই জানাই তোমাকে তোমার জন্মদিনের শুভেচ্ছা
ভালো থেকো বন্ধু সুখে থেকো এই দিনটি ফিরে ফিরে আসুক বারংবার
জ্বলে উঠুক আলোর রোশনাই
তোমার অন্তরের সুগন্ধী ছড়িয়ে পড়ুক চারিধারে —