কলমযোদ্ধা কবি_অলক জানা জীবন বোধের তাড়না থেকে করোনা নিয়ে লিখেছেন কবিতা “মাছিজন নাব্যতা ও অন্তরীপ ”।

620
কলমযোদ্ধা কবি_অলক জানা

মাছিজন নাব্যতা ও অন্তরীপ

                                      অলক জানা

  ১ . হোমার ও ধৃতরাষ্ট্র

এক নিশীথ সূর্যের নাম কবি হোমার
চির অন্ধত্বে তাঁর কোন অভিমান ছিল না
ইলিয়াড ওডিসি তাই এত রোদমগ্ন।
ধৃতরাষ্ট্র জীবনে একটিও কবিতা লেখেননি
নেতৃত্ব দিয়েছেন, চেয়েছেন নিষ্কণ্টক সিংহাসন
প্রতিহিংসার প্লাবন আল টপকালে
কুরুক্ষেত্র অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

  ২. ঐশ্বর্য

বেঁচে থাকার অনুষঙ্গে প্রিয় মুখ কত জরুরি
শ্মশান সঙ্গত মহামারী তুচ্ছ হয়ে যায় ——-
গৃহবন্দী সতর্কতার ভেতর কাঁসরঘণ্টার আর্তস্বর,
বইতে থাকে বিশল্যকরণী বাতাস,
যতখানি পুড়ে যাচ্ছি, সমান মাপে তুমিও নিরন্তর
ছাইবিকারে শোকস্থাপত্য আমাজন।

  ৩. আরোগ্য

মাছিজন নাব্যতার অন্তরীপে বসে আছে
অসহায় এক চাঁদ, বিকারগ্রস্ত ——-
সমূহ নিষেধ প্রাকার ভেঙে এগিয়ে যায়
সমান্তরাল সেবায়ত দুটো হাত, সেই সব
সযত্ন সুরে অস্থিমজ্জায় জাগে
প্রাতঃভ্রমণের স্বাদ, বাঁচার লোভ।
শুশ্রূষা কানায় কানায় একাকার হয়ে গেলে
গাছে গাছে আরোগ্যতীর্থ বসন্ত লিখন।

  ৪. বিছিন্ন

দূরত্ব
মুক্তি,
দীর্ঘ বিরতি চাইলে,
একটা উপেক্ষাই যথেষ্ট।
অলিখিত নিষেধমগ্ন উপত্যকায়
যমদূত কাকেরা কেমন
নির্ভয়ে ঠোকরাতে থাকে
বিচ্ছেদভগ্ন সম্পর্কের হাড়গোড়।

৫.সেনিটাইজার

সেনিটাইজারে স্নান সেরে দুটো হাত
কত বিশ্বস্ত, বিশুদ্ধ রেখার স্রোতে
ডুবে যাচ্ছে ভয়ার্ত চোখ মুখ।
মস্তিষ্কের ভেতর সূর্যাস্তের গান ভেসে বেড়ায়
কী হবে এত অন্ধকার ——
সেনিটাইজার মেশা রোদ
মুক্ত করুক সমস্ত বিভীষিকা পারদ।

  ৬. মাক্স

আড়ালে ঢাকলাম এই মুখ,মুখরতা
অবিশ্বাসী আলো বাতাসে
ঘুরছে ভয়, মৃত্যু।
অনেক কাজ পড়ে থাকল বাকি
প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় চলন-গমনে
লুকনো মুখোশ
বাইরে বেরিয়ে এল বলেই না,
এবার সকলের ভালো হওয়ার পালা।

৭. লকডাউন

অসূর্যম্পশ্যার দেশ ফিরে এলো
তার মধ্যেই মোবাইল সৌজন্যে
বিনিময় হচ্ছে স্পর্শকাতরহীন কথাবার্তার জট
এত ধ্যান, মৃত্যু উপত্যকায় বইতে থাকে
প্রাণের স্পন্দন, শেষ অন্তরীপ টুকুর দায়
সবাই ভাগ করে নিলে
ইষ্ট তর্পণের জন্য,
নিজের আবাসনই মোক্ষমভূম।

৮. অন্তরীপ

মাছিজ্যোৎস্না নাব্যতায়
আটকে থাকা চরাচর ভুগছে এখন,
কত দোষ্যিপনাই অঙ্কুরেই হেরে গেছে
এবারও বিরামহীন নিশ্চিহ্ন হবে সমস্ত অসুখ।
আমি তুমি যে যার পথে আবার হাঁটবো
হেঁটে যাবো কাঙ্ক্ষিত অন্তরীপ উদাসে।

    ৯. মাছিজন নাব্যতা

মৃত্যুহীন, ফুলমগ্ন নাব্যতার জন্য
আমার ব্যস্ত কৈশোর, যৌবন চেয়েছিল
পুরুষ নারীকেই ভালবাসে,
মিলিত দুই স্রোত, অখণ্ড বাক্য এক
কৃষ্ণসারদায় নির্মিত হ্রদের মুগ্ধতা
বাতাসে মিশে গেলে নিরাপদের দেয়াল
ঘেঁষে আকাশে ভাসতে থাকে পূর্ণিমার চাঁদ
কবিতার পৃথিবী সুখকর জ্বর চেয়ে
বাতি নেভাতে একদা প্রস্তুত হয়।

১০.যাদুকর

আতঙ্কজোট ভাঙার জন্য
রুদ্রাক্ষের এক চোখই যথেষ্ট,
সেই বিশল্যকরণী দিশায়
নেমে আসে ধানশিষ ভোর
এখন সেই আশ্চর্য যাদুকরের জন্য
আমাদের সমান্তরাল অপেক্ষা নিরুপদ্রব

Content Protection by DMCA.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here