“অঙ্কুরিত-মুদ্রা” কবিতাটি লিখেছেন সাহিত্যের অন্যতম সারথি বনশ্রী রায় দাস

547
“অঙ্কুরিত-মুদ্রা” কবিতাটি লিখেছেন সাহিত্যের অন্যতম সারথি বনশ্রী রায় দাস

অঙ্কুরিত-মুদ্রা

                            বনশ্রী রায় দাস

বহুদিন ছোঁয়া না পেয়ে ন্যুব্জ স্বর ,
পশ্চিম মাঠের জুঁই ফুলের চারায়
পেঁচিয়ে উঠেছে রাবণলতা।
আরও অনেক অজানা আগাছার
পেটে ঢুকে রক্ত জলে খাবি খাচ্ছে
কুসুম রঙের নিরাময় ।
শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই না বলে
আগ্রাসী ভঙ্গিতে লতিয়ে উঠেছে
কার্নিশ বেয়ে ভুতুড়ে সময় ।
ওষধি গাছগুলো নষ্ট করে থামিয়ে দিতে চায়
মহাকালের গতি রথ।
দুস্থ ,পরিযায়ী মানুষের জীবন মোহ ,
পায়ে পায়ে পথ হাঁটা ঘরে ফেরা l
সূর্যোদয় থেকে গড়িয়ে নামছে রোদ
রাত বাড়ে পিষ্ট হয়ে স্বপ্ন মরে যায় ।
পেটের আগুনে মানচিত্র দাউ দাউ করে ।
ভালোবাসার রামধনু রঙে
বিবাদের সাতকাহন – – —
আমি ধুয়ে দিতে চাইলে ও মৃত্যু বীজ
মরা বাঁশপাতার মতো
খসে পড়ে আছে যত্রতত্র ।

রোজ আমাদের বিপর্যয়
দেখছে দেয়ালঘড়ি কাল’ মাপছে
ঘন্টা থেকে সেকেন্ডের কাঁটা,
তাল মিলিয়ে ডেকে উঠছে
একটি কালপ্যাঁচা শাসন করে গৃহবন্দি জীবন ।
মহা-ত্রাশ এখন বিশ্ব জুড়ে,
কয়েকটি পিঁপড়ের বিক্ষিপ্ত চলন
কাল-বৈশাখী ডেকে
আনে আমার ঘরের ভিতর ।
মেঘের খিদে পেলে চাতক বোঝে ,
আকাশের ঘুম শরীর এলিয়ে পড়ে
পাহাড়ের কোলে ।
ফুরিয়ে যাওয়া প্রাণশক্তির বাষ্প
বোঝে নদীর পিপাসা
নূপুর খুলে ভাসায় স্বগতোক্তি ।
মধ্যরাতের নদীর জরায়ু থেকে চাঁদ ওঠে
পোড়া রুটির নির্জনতা চিরে
কঁকিয়ে ওঠে শিশুঠোঁট
ক্ষুধার্ত মায়ের শুকনো স্তনে মুখ গুঁজে ।

রাতদিন কর্মহীন
জন্ম যেমনই হোক কর্মই মানুষের ধর্ম ।

জড় ভরত শরীর- মন। আঙুলের ছাঁকনিতে ছেঁকে নিচ্ছে অন্তর্নিহিত জালের খুঁটিনাটি
ভালো অল্প মন্দ অধিক ।
অসহিষ্ণু সময়ের অস্থিরতা রক্তচাপ বিবিধ
হিমেল ঘরে চিকিৎসাবিহীন ।
পচা খানাখন্দ থেকে ছড়ায় দুর্গন্ধ ।
হাতের তালুতে মৃত্যু মেখে যুদ্ধের সৈনিক ,
মৃত্যু রাখলেন কন্ঠায়
তাঁরাই এখন নীলকণ্ঠ ।

সম্পর্কে বিবেক বেঁধে থাক আমাদের
হৃদয়ে শয্যা পাতুক মনুষ্যত্ব ।

অসময়ের জলঝড়ের দৌরাত্ম ,
সাঁতার কেটে গেল চাষির চোখের জলে
শিলা-তীর বিদ্ধ করলো শস্যের গর্ভে
তবে কি প্রস্থানে মাথানত ভঙ্গিতে
দাঁড়াতে হবে
প্রতিটি মৃত্যুর কাছে ?

তৃষ্ণার মতো সূর্য উঠলে
জীবন লোভি হয়ে যায় আবার ও উন্মাদনা স্রোতে অঙ্কুরিত মুদ্রার আহুতি ।
আরেকটু চেটেপুটে নিতে চায়
পৃথিবীর রং রূপের গন্ধ রহস্য ।

বৃষ্টি থামার পর ধুয়ে গেছে নালা-নর্দমা ,
বিক্ষিপ্ত কীটের দল গর্তে ঠাঁই নিয়েছে ।
মরা পুকুরের বুকে
হালিমকমকে কচুপাতার ওপর এখনও
রয়ে গেছে মুক্তো ছড়িয়ে
এক ফোঁটা বিশ্বাসের জলোচ্ছ্বাস ।
অভয় স্বরলিপি, জয়ের শঙ্খধ্বনি ,
জীবন সেতারে সবুজ সংকেত দেখি
পতপত ওড়ে রঙিন ধ্বজা ,
মহাবিশ্বের প্রতি কামরা থেকে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here