শব্দহীন কর্মস্থল
——————সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ আজ নীরব!
শ্রেণিকক্ষে ঝুলছে তালা,
গৃহবন্দি হয়েছে পড়াশোনা,
শিক্ষার্থীরা আজ মুক্ত পাখি,
শিক্ষক হয়েছে ঘর বন্দি।
শিক্ষার্থীশূন্য সারি সারি বেঞ্চগুলো!
অযত্ন আর ধুলোবালির স্তর জমে একাকার।
টেবিল,চেয়ার,লেখার বোর্ড, ঝাড়ু,
ঝুড়ি আর বেলচা—
আছে সব শ্রেণিকক্ষের কোণে কোণে।
অব্যবহৃত চক,ডাস্টার,মার্কার আর বেত
পড়ে আছে সব আলমিরার কোণে—দীর্ঘদিন।
নেই কোনও শাসন-বারণ!
নেই কোনও পড়ার চাপ!
নেই কোনও বিরতি!
নেই কোনও পরীক্ষার চিন্তা!
নেই কোনও হাজিরা আর কোলাহল!
নেই কোনও কান্না আর হাসির শব্দ!
ঢং ঢং ঢং—বাজছে না ছুটির ঘন্টা।
অভিযোগ বাক্সে!
দিচ্ছে না কেউ কোনও নাম জমা,
চলেছে এখন দীর্ঘবিরতি…।
প্রিয় কর্মস্থল আজ প্রানহীন,
সৃষ্টি আজ বড় অসহায়,
প্রানগুলো সব আজ বৈঠক খানায়।
প্রকৃতি তার হিসেব নিচ্ছে বুঝে,
ছোট্ট জীব করছে নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীকে।
পৃথিবী যখন সুস্থ হবে;
ঝুলিয়ে কাঁধে থলে…
আসবে তোমরা দলে দলে,
কথা বলব তোমাদের সাথে,
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ উঠবে আবার মেতে
তোমাদের কোলাহলে।
খুলব সব বন্ধ তালা,
খুলব কক্ষের দরজা ও জানালা,
উড়বে আবার জাতীয় পতাকা,
উঠবে বেজে সমাবেশের ঘন্টা,
দাঁড়াবে লাইনে হয়ে সোজা,
গাইবে আবার সমস্বরে…
‘আমার সোনার বাংলা‚
আমি তোমায় ভালোবাসি—’
আমাদের সুমধুর জাতীয় সংগীত।
কারও হাত সোজা, কারও হাত বাঁকা কারও পায়ে ধুলো, কারও চুল এলোমেলো
কার নখ লম্বা, কার দাঁত হলদে,
কার পোশাক সাদা, কার আজ ময়লা
দেখব যখন জনে জনে…
হাসবে কেউ কলকলিয়ে,
বলবে কথা ফিসফিসিয়ে,
তখন,
আমি বলব চোখ রাঙিয়ে!
যে জন বলবে কথা,কান ধরে উঠ-বস;
করবে সে জন।
খেলবে তোমরা মনের আনন্দে,
তেতুল আর আম গাছের তলে তলে।
ক্লাসের ফাঁকে, পানি খাওয়ার অযুহাতে
দস্যি ছেলে-মেয়ে, বের হবে বাহিরে,
উঁকি দেবে অফিস রুমের দ্বারে।
বলবে, স্যার-ম্যাডাম!
আমাদের ছুটি কখন/কবে হবে?
আমি বলব হেসে,
হবে ছুটি খানিক পরে এখন যাও ক্লাসে।
কতদিন হলো শুনি না সেসব কথা!
ম্যাডাম, আজ আনিনি আমি বই আর খাতা, আনিনি কলম, শিখিনি পড়া।
কতদিন কান টেনে বলি না তাদের,
“বাড়ির কাজ কই?”
কতদিন দেখি না তাদের দূরন্তপনা!
দেখি না তাদের ক্লাসঘর থেকে হই হই করে বেরিয়ে যাওয়া।
প্রিয় শিক্ষার্থীদের পড়ছে মনে, অপেক্ষার প্রহর গুনছি এখন,
শেষ হবে যখন;এই ক্রান্তিলগ্ন,
প্রানগুলো সব আসবে আবার ফিরে, তাদের প্রিয় শিক্ষাঙ্গন।