জীবনধারা কালের পরিক্রমায় লেখক -হামিদা আনজুমান লিখেছেন বাস্তবধর্মী ছোটগল্প কবিতা “খন্দকারভিলা”

760
লেখক -হামিদা আনজুমান

খন্দকারভিলা

                  হামিদা আনজুমান

এক ছোট্ট মফস্বল শহর খানপুর এ বেসরকারী ব্যাংকে চাকরি নিয়ে আসে জাকির।মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।পড়াশুনা শেষ করে বেশ কয়েক বছর চেষ্টা চরিত্র করে তবে এই চাকরি টা জোটাতে পেরেছে।প্রথম পদায়ন হয় এখানে।ছোট্ট শহরটির একেবারে প্রান্তেই বলা যায় একটি পুরানো একতলা বাড়ি “খন্দকার ভিলা”। বাড়ির পেছনে বিরাট বড় পুকুর। ছাদের ঘরে একটা কক্ষ ভাড়া নেয় সে।একাই থাকে। একজন কাজের মহিলা আছে শরীফা নামের।সে এসে রান্না করে দিয়ে যায় দুবেলা।একেবারে খারাপ না।চলে যায় মোটামুটি।

মাঝে মাঝে শরীফার শরীর খারাপ বা অসুবিধা থাকলে তার ১২ বছরের মেয়ে রুমা কে পাঠায় কাজে।রুমা ও রান্নার কাজ পারে মোটামুটি। চলছে এভাবেই।জাকির শরিফাদের বিপদে আপদে বেশ সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে ঋণ দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে।

একদিন শরীফা অসুস্থ। যেতে পারবে না বলে রাতের রান্না করার জন্য রুমাকে বিকালে পাঠায় জাকিরের বাসায়।সেদিন জাকিরের ছুটি ছিল।সে ও সারাদিন বাসায় বসে কাজ করছে।
জাকিরের বাড়িওয়ালা অর্থাৎ নিচের অংশে থাকেন যারা, তারা কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে গেছেন আত্মিয়ের বাড়িতে।

রুমা সেই যে গেল, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতে চললো তবু ফিরছে না দেখে চিন্তায় পড়ে শরীফা।রুমার বাবা রিকশা চালিয়ে ফিরে এলে তার মোবাইল থেকে ফোন দেয় জাকিরকে।কিন্তু জাকির জানায় রুমা তো বিকালে আসেনি।আর তার রাতের খাবার রান্না ও হয়নি এখনো।

শুরু হয় চারদিকে খোঁজ। মসজিদের মাইকে মাইকিং করা হয়।নাই তো নাই একেবারেই।জাকির এসে ওদের বাড়িতে কথা বলে।সে ও খোঁজ করে যাথাসাধ্য।টাকা দেয় শহরে মাইকিং এর জন্য।
দিশেহারা শরীফা আর তার স্বামী কি করবে ভেবে পায় না।আশে পাশে গ্রামেগঞ্জে যেসব আত্মীয় স্বজন আছে খোঁজ নেয়া হয় পরের দিন ই।কিন্তু কোন খবর নেই রুমার।শরিফা চোখের জল ফেলে সারাদিন।।রুমার বাবা রিকশা চালায় রাস্তায় রাস্তায় আর মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই অনেক দূরে দূরে যাত্রী নিয়ে যায়, মনে মনে খোঁজে রুমাকে।

এ ঘটনার পর অনেকদিন গত হয়।সবাই প্রায় ভুলেই গেছে রুমাকে।ঝুমা, রুমার যময। সে এতোদিন নানাবাড়িতে থাকতো।রুমাকে হারানোর পর ঝুমাকে শরীফা নিজের কাছে নিয়ে আসে।এখন থেকে তার কাছেই রাখবে।এক মেয়েকে হারিয়েছে, তাই ঝুমাকে আগলে রাখে সবসময়।

ছয়মাস পর…

একদিন জাকিরের লাশ পাওয়া গেল তার ভাড়া থাকার চিলেকোঠার ঘরে।পেছন থেকে ঘারে বটির একটা মাত্র কোপ!
রক্তে ভেসে গেছে পুরো ক্ক্ষটা।এমন খুনে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো শহর। পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায়।ময়নাতদন্ত হলো।পুলিশের বিশেষ টিম জোড় অনুসন্ধান চালালো। কিছুই মোটিভ বের করতে পারলো না।রহস্যের কুলকিনারা হলো না এ খুনের।

শুধু জাকিরের খুন হওয়ার দিনটিতে রুমার যময বোন ঝুমার গায়ের জামাতে লেগেছিল ছোপ ছোপ তাজা রক্তের দাগ, যা দেখে শরীফা কাঁদতে কাঁদতে হেসেছিল পাগলের মতো।আর তারপর ঝুমা গোসল করে এলে মা, মেয়ে যায় খন্দকার ভিলার পুকুর পাড়ের লাউমাচার নিচে। হাঁটুগেড়ে বসে ঝুমা রুমাকে জানায় তার উপর পাশবিক নির্যাতন আর খুনের বদলা সে নিয়েছে।
শরীফা কান্নাভেজা চোখে রুমার আত্মার শান্তি কামনা করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here