সাম্য দর্শনের লেখক- শাহিদা ইসলাম এর সাধারণ মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ লিখা গল্প “জীবনের গল্প ”

570
সাম্য দর্শনের লেখক- শাহিদা ইসলাম এর সাধারণ মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ লিখা গল্প “জীবনের গল্প ”

জীবনের গল্প

                         শাহিদা ইসলাম

সারাটা দিন একই চিন্তা করল রাজন,একটা চাকরি খুবই দরকার। বোনের মুখে, বাবার মুখে আহার দেবে কিভাবে?
বাড়ি ওয়ালার ভাড়া এই মাসেও দিতে না পারলে এবার বাড়ি থেকে জিনিস পত্র ছুড়ে ফেলে দেবে বাড়ি ওয়ালা, ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের করবে।
বাবার চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটবে,অবসর প্রাপ্ত স্কুল টিচার বাবার ইগোতে আঘাত হানবে।সততা নিষ্ঠার সাথে পথ চলা মানুষ, না খেয়ে থাকলেও মানুষের কাছে ছোট হবে না।
স্কুলের জন্য প্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন,বাবার চাকরির শেষের দিকে মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ল।
রুনুর ১৯ আর রাজনের ১৫ দুজনাই পড়ুয়া। বাবার অবসরের পর অফিস হিসাব চুকিয়ে দিল,
এদিকে মায়ের পিছনে টাকা যাচ্ছে নদীর স্রোতের মত, টাকাও শেষ মায়ের প্রাণও শেষ। সব লেনাদেনা চুকিয়ে মা চলে গেলেন সবার উর্দ্ধে।
একা বাবার জীবন যেন ঝরে পরা শুকনো পাতা,নির্জীব প্রাণ,ঘুরে বেড়ায় একটু শান্তির আশায় বনে বাদাড়ে।
মাকে হারিয়ে অপ্রকৃতস্থ হয়ে গেছেন বাবা। মায়ের পছন্দ ছিল প্রকৃতি ফুল,বাবা সেই শখ পূরণ করতেন,মাঝে মাঝেই অফিস ফেরার পথে ফুল নিয়ে আসতেন
মায়ের হাতে দিয়ে বলতেন, আমি দরিদ্র স্কুল টিচার,মনটা কিন্তু রাজার মত বিশাল,
চাই দিতে অনেক কিছু,ক্ষুদ্র আয়ে তা সম্ভব হয় না।
মায়ের মুখে শান্তির হাসি,চোখে মুখে ভালোবাসার তৃপ্তি।
বাবার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা বিশ্বাস, ভালোবাসা ছিল,মিষ্টি হেসে বলতেন,তুমি তো বল দারিদ্র্য আমাদের অহংকার, তবে কেন মিছে ভাব,আমরা অনেক সুখি মনের দিক থেকে।
একটা মানুষের বেঁচে থাকতে যা লাগে,তা আমাদের আছে,
বিলাসবহুল অট্টালিকায় সুখ নাই,রাতে সিডিল খেয়েও ঘুম আসে না।
রাজন তার দিদির জন্য একটা চাকরি বা ভাল সন্মান যুক্ত কোন কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছে,
দুজনার আয়ে হয়ত চলে যাবে। চাকরির বাজার খারাপ,এই কথাটা শুনছে যুগে যুগে,তাহলে ভাল ছিল কবে?
এসব ভাবতে ভাবতে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এ কেমন অদ্ভুত খেলা করছেন আল্লাহ।কখনও তাকে ভিক্ষাপাত্র হাতে বসিয়ে দিচ্ছেন,আবার পরক্ষনেই তার সামনে ভোগবিলাসের এক অপর্যাপ্ত ভান্ডার খুলে দিচ্ছেন,এ কি নেহাতই তাঁর লীলা,নাকী তাকে পরিক্ষা করছেন? এমন গল্প সে অনেক শুনেছে মা খালার কাছে, মানুষ রাতারাতি রাজা হয়,সকালেই ভিকারী হয়,এমন অজব গল্প সেই কালে শুনে অবাক হলেও এখন হয় না,এসব গল্পেই শোভা পায়।
হঠাৎ হাতের ভেতর কম্পন হলো নিজেই চমকে উঠল রাজন।ফোনের আওয়াজ কানে গেলে বাবার ঘুমের ডিস্টার্ব হয়,তাই ভাইব্রেট দিয়েছে। হঠাৎ ডাক্তার কাকুর ফোন,হ্যালো রাজন,তুমি কি আজ ফ্রি আছ? আমার চেম্বারে আসতে পারবে? কেন না বলে আগেই রাজন বলল,কাকু আমি একদম ফ্রি,কাজ নেই,অবশ্যই আসব।।আরে পাগল কাজের জন্যই ডাকছি আয়।
রাজন কি ঠিক শুনছে?
নাকি স্বপ্ন দেখছে? ভুল শুনেছে?
মায়ের সাথে রাজনের একটা ছবি বাঁধিয়ে রেখেছে ঘরে,ছবির সামনে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল,মাগো তোমার দোয়া আমার সংগে আছে। রাজনের চাকরি হবে না এটা সত্য কারণ যেখানেই যায় এক্সপিরিয়েন্স জানতে চায়,মিনিমাম চার বছরের। আমাকে কেউ চাকরি না দিলে এক্সপিরিয়েন্স কিভাবে হবে? বিছানায় শুয়ে বাচ্চা শিশুর মত অঝোরে কাঁদতে লাগল। দিদি রুনু ঘরে ঢুকে ছোট ভাইয়ের কান্না শুনে হতবাক,যে ভাই ছোট হয়েও বড়র দায়িত্ব পালন করছে,সংসার কিভাবে চালায় বুঝতেও দেয় না,বাড়িভাড়া বাকি পরেছে,হয়ত সেই জন্য চিন্তা করে কান্না করছে। রাজন দিদির পায়ের আওয়াজ টের পায়,দ্রুত চোখ মুছে উঠে বসে,কিরে দাদা তুই কাঁদছিস কেন? মায়ের কথা মনে পড়েছে।বোকা ছেলে আমি বাবা আছি তো তোর পাশে। জানিস রাজন,একটা সুখব আছে, আমার একটা চাকরির অফার আছে, ডাক্তার কাকু তোরে নিয়ে যেতে বলেছে।
রাজন এবার হো হো করে হেসে দিয়ে বলল,আমার সুখবর আর তোর সুখবর একই,চল যাই দেখি কি বলেন।
আসলে কাকু আমাদের রক্তের কেউ নন,উনি বাবার বন্ধু,অথচ আমাদের নিয়ে ভাবেন।
দু ভাই বোন ডাক্তার কাকুর চেম্বারে হাজির হলেন। কাকু রোগী দেখছেন এসিস্ট্যান্ট বললেন।ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষার পালা চলছে,রুনু বি, এ, পাশ করেছে, পড়াশোনা করার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য ছিল না।
বেল বাজল,শুনে দুজানাই বুঝল এবার কাকু ডেকে পাঠাবে।
হ্যা আপনারা আসুন,এসিস্ট্যান্ট এসে জানালো।
ভিতরে ঢুকেই দুজনা কাকুর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল,আরে বোস বোস সালাম লাগবে না।
বাবার কুশল জানতে চাইল,
এবার কাজের কথায় আসি, কাকু শুরু করল, শোন তোদের চাকরির দরকার , কিন্তু কোন এক্সপিরিয়েন্স নেই,রাজন একটু রাগান্বিত স্বরেই বলল,কেউ চাকরি না দিলে এক্সপিরিয়েন্স হবে কিভাবে?
রুনু বলল কাকু মায়ের চলে যাবার পর গোটা সংসার পরিচালনা করছি,ভাইকে মানুষ করেছি,আর বাবার সেবা যত্ন করছি,এটাও কি কম এক্সপিরিয়েন্স।
ডাক্তার কাকুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখল রুনু তার চোখ জ্বলজ্বল করছে।
রুনু এই কারণেই আমি তোমাকে ডেকেছি, আমার বড় ভাই বয়স ৮০ হবে,তার জন্য একজন সেবিকা + সহধর্মিণী প্রয়োজন, বিনিময়ে তুমি সব পাবে,বেতন পাবে,তোমাকে অভিনয় করতে হবে তুমি তার প্রিয়তমা, কারণ তার স্মৃতি শক্তি নেই।
রুনু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল।এ কেমন চাকরি? তার চেয়েও ৩০/৪০ বছরের একটা মানুষের পাশে শুয়ে থাকতে হবে,যার কোন জৈবিক চাহিদা নেই। তাহলে তো কোন সিস্টার কে নিয়োগ দিতে পারেন।
ডাক্তার কাকু হয়ত আমার যোগ্যতা অনুসারে এই চাকরির ব্যবস্থা করেছে।
পরক্ষণেই কুলকুল করে ঘেমে নেয়ে উঠল,
শিরদাঁড়াটা সোজা করে উঠে বসল রুনু,তার মনে হল এটাই হয়ত ভবিতব্য।
ঈশ্বরই হয়ত ডাক্তার কাকুর রূপ ধরে এসেছেন।একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
বাবা ভাইকে নিয়ে পথে বসতে হবে না।
রাজন চেম্বারেই চিৎকার করে উঠল। দিদি তুই কি পাগল হয়েছিস? তোর মাথা খারাপ?
আমার জায়গায় তুই নিজেকে বসিয়ে ভেবে দ্যাখ,বাবার ওষুধ, চিকিৎসা আর বাড়ি ভাড়া না হলে কি হবে?
রাজন নিজেকে অপরাধী ভাবতে লাগল।ভাই থাকতে বোনের জীবনে এত বড় ত্যাগ, রুনু ডাক্তার কাকুর কাছে কিছু সময় চাইল,বাড়িতে এসে বাবার কাছে রুনু আনন্দের হাসি দিয়ে জানালো বাবা আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ডাক্তার কাকু।
বাবা কড়া স্বরে জানিয়ে দিলেন,রাজন থাকতে তুমি কেন এটাই বুঝলাম না। বাবা রাজন এই কাজ পারবে নাহ,উনার দায়িত্ব নিতে,ভুল করেই সত্য বের হল মুখ থেকে,আসলে সত্য চাপা থাকে না, বাবাকে বিস্তারিত বলল রাজন,এত দিনে বাবার বিষন্ন মন মলিন হয়ে গেল, একজন সৎ মহৎ মানুষের মন ভেংগে খান খান হল। আজ বাবার সামনে মেয়েকে অবিবাহিত থাকতে হচ্ছে,সমাজ সংসারে কেউ কার নয়,এই সততার মুল্য দিতে গিয়ে না খেয়ে বীনা চিকিৎসায় মরতে হচ্ছে। এবার আমার বিদায়ের পালা, বাবার মুখে এখন কথা শুনে রাজন সামনে থেকে সরে গেল। বাবা খুব বিনয়ের সাথে বলল,রাজন এক কাজ কর এক বোতল poison এনে দাও,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here