মা দিবসকে উদ্দেশ্য করে ” বুড়িমা” গল্পটিতে একটি সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে লেখক সৈয়দা কামরুন্নাহার শিল্পী এর লেখনীতে ।

504

বুড়িমা

 সৈয়দা কামরুন্নাহার শিল্পী।

ও বুড়িমা চেঁচাচ্ছ কেন?
কি, তুই ও বলিস ;আমি চেঁচাই? বেশতো, চেঁচাবো আর‌ ও চেঁচাব! তবে শোন কেন চেচাই?

বল ,শুনবো জন্যই তো এগিয়ে এলাম !
তবে বাছা তোকেও বলি, তুই বাইরে কেন? আমি চেঁচালে তোর কি! তুই শিক্ষিত ছেলে এই কি তোর কাজ হল? তুই বাইরে কেন?

তুমি চেঁচালে আমার ভালো লাগেনা, তাইতো বেরিয়ে এলাম! কি হলো তোমার ?
কি আবার হবে রে নতুন করে, কি বলব আর ভুল-বোঝাবুঝি সংসারে !
আমাকে জড়িয়ে কথার পর কথা আর শুনতে ভালো লাগে না এই বয়সে ।
আরে বাবা সে কথাটাই তো শুনতে এলাম বলো, আসল কথা বলো; কি হয়েছে?
বেশতো বলি ,তবে লকডাউন বলে না কি বলে, এর ভিতর তুই বাইরে কেন রে ,তোর বাইরে কি?

বললাম তো বুড়ি মা তোমার চেঁচামেচিতে বাইরে এলাম তোমার কাছে।
আরে কি আর বলবো দুঃখের কথা ,আমাকে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা !ভাগ বাটোয়ারা!!
কে আবার ভাগ বাটোয়ারা করতে চায়?
সে কথা বাদ দে, এই সংসার আমার এখানে সব জায়গায় তার নিঃশ্বাসের শব্দ পাই। ছায়ার মতো সে আমার সঙ্গে থাকে। তাকে ছাড়া আমি অন্য কোথাও ভালো থাকতে পারি? তুই বল !
এই যে গুটি গুটি আম গুলো দেখছিস ,কাঁঠালের মুচি গুলো দেখছিস ,সুপুরি গাছে সুপুরি গুলো ওরা সব আমার সঙ্গে কথা বলে !
গাছের কাঠবিড়ালি ,পাখিগুলো কে কথা বলে না বল !আর কার সঙ্গে আমি কথা বলি না, কোন দিকে আমার নজর নেই!

ওরা কখনও আমাকে ভুল বোঝে না ,আমার কথা শোনে। ভোর হলে কে ঘুম ভাঙ্গায় রে ,ওই পাখি গুলোই তো!!

বেশ তো, আমিও তো তোমার কথা শুনি না কি ?
শুনিস তো ,তবে বল এসংসারে একা একা কষ্ট করে এবেলা যাই করি না কেন ;ছেলের সংসারে গিয়েও কি আমি করে খাব নিজের টুকু ?
আমাকে কি একটুও যত্নআত্তি করবে না! আমার খাওয়ার দিকে নজর রাখবে না !আমার কি বয়স হয়নি?
সেই যে এতোটুকু বয়সে তোর দাদা নিয়ে আসলো তারপরের থেকে কি নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় পেয়েছি রে !
বাদ দে ,বাদ দে ভালো লাগেনা এসব বলতে। ঘিন্না হয়, ঘিন্না হয় নিজের উপর নিজের ঘেন্না হয়!

কেন করবে না? কি বল তুমি !

না ,ওদের নাকি বউদের সময় নেই। ছেলে হয়ে যদি বলে, তবে বউরা সুযোগ পাবে না, তুই বল?
আর তোকে বলে কি ?তুই ও তো তাই করবি!
যাতে না করি, তোমার দুঃখগুলো যাতে বুঝতে পারি তাই জিজ্ঞেস করছি ।
জানতে চাই ,আর সবাইকে এক ভাবো কেন?
কেনই বা ভাববো না বল ,যে ছেলেমেয়েকে এখনো দুধ ঘন করে মাথার উপর দাঁড়িয়ে জোর করে খাওয়াতে চাই । কে কি পছন্দ করে তার জন্য কষ্ট করে শরীর না চললেও রান্না করে টেবিলে দেই।
সেই ছেলের বাড়িতে কি আমার কোন আশা থাকতে পারে না! ওরাও আমাকেও একটু যত্ন করুক!
জিজ্ঞাসা করিস তো, কেউ জানে না কি, আমারও খাওয়ার বেলায় কিছু পছন্দ অপছন্দ আছে কিনা ?কোনদিন বুঝতে দিয়েছি কি ওদের?
সারা জীবন তো ওর বাপ আর ওদের পছন্দ নিয়েই চললাম! খাওয়ালাম যত্ন করলাম আর আমার বেলায়—??
বাদ দে এসব কথা বলতেও ভালো লাগে না পাপ, পাপ মনে হয়।
জীবনের এবেলা এসে মনে হয় একটাকেও মানুষ বানাতে পারিনি রে, সব অমানুষ বানালাম।
কিসের মা হলাম রে, জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়?

না, না যা ভাই; তুই যা তো এবেলা। আমার ভালো লাগছে না , আর কথা বলতে ভালো লাগছে না ।
অনেক কথার দরকার কি? ওদের মতো ওরা থাক, ভাল থাক ।আমাকে নিয়ে যাওয়ার এত টানা হ্যাচরা কেন?
একেকটা একেক রকম কথা বলে। আর আমার শুনতে ভালো লাগে না ।আর কত সইবো রে!
তুই যা বাবা, বাড়ি যা আর বের হোস না ।
আমি আর একা একা কথা বলবো না দেখিস !বলবোনা; আর যদি বলি, মনে মনে বলবো। তবু তুই বাড়ি যা ,বের হোস না।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here