“কুয়াশা ” ছোট গল্পটি লিখেছেন ওপার বাংলার কলমযোদ্ধা- কাকলি ভট্টাচার্য্য মৈত্র

566
“কুয়াশা ” ছোট গল্পটি লিখেছেন ওপার বাংলার কলমযোদ্ধা- কাকলি ভট্টাচার্য্য মৈত্র

কুয়াশা

             কাকলি ভট্টাচার্য্য মৈত্র

কুয়াশা দু’হাতে জাপটে ধরেছে রাত্রিকে।টুপটুপ করে বড়ো গাছটা থেকে শিশির ঝরে পড়ছে, কচু পাতার উপর। আর সেখান থেকে ঝরে পড়ছে ঘাসের মাথায়…
সরকার দম্পতি খুব ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন, তাদের একমাত্র মেয়ে ঈশার খাওয়া হয়নি। সারারাত রাস্তায়। ছোট্ট আড়াই বছরের মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ভোরবেলায় ঘুমিয়ে পড়েছে। রাস্তার পাশে একটা ছোট্ট চায়ের দোকান আছে… সেটাও বন্ধ।
বড়ো বড়ো ট্রাক, দূরপাল্লার বাস দূরন্ত গতিতে ছুটে চলে যাচ্ছে…কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
— নাঃ, আর পারা যাচ্ছে না.. মেয়েটাকে কিছু খাওয়াতে হবে তো… ওর একটু চিকিৎসা দরকার….
— কিছু একটা করো না…
আকুল কান্নায় ভেঙে পরলেন মিসেস সরকার।

— কি যে করি… কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। কেউ তো আমাদের দেখেও থামছে না। এই যায়গাটা খুউব খারাপ। গ্রামও অনেক দূরে.. বললেন, অসহায় মিঃ সরকার।
—হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন মিসেস সরকার।
এবার আমার মেয়ের কি হবে? যদি কোন খারাপ লোক নিয়ে যায়!!

চুপ করে দাঁড়িয়ে ভাবছেন মিস্টার সরকার। এমন ভোরবেলায়, এখানে কেউ দাঁড়াবে না। অপেক্ষা করতেই হবে। কিন্তু..
—আর বেশিক্ষণ…
হঠাৎ নজর পড়লো..উনাদেরই দলের অন্য বন্ধুদের গাড়ি এগিয়ে আসছে..
উত্তেজনায় চিৎকার করে স্ত্রীকে ডাকলেন..
—সোমা…সোমা…
— কি গো! কিছু!!…
—ওই যে… উদয়, সুমিতাদের গাড়ি…
তাই না!!

গাড়ি দুটো দেখে এগিয়ে যায় সরকার দম্পতি।
নাঃ … পরিচিত কেউ নন তারা।
এমন সময়, অত্যন্ত ভদ্র দম্পতিকে দেখে… গাড়ি থামিয়ে জিগ্গেস করে,
—কি হয়েছে? আপনাদের। লিফ্ট চাইছেন কি?
—না না, আমরা প্রায় সারারাত গাড়িতে আটকে আছি। আমাদের মেয়েটা খুবই ছোট। সারারাত কিছু খায়নি, ওর চিকিৎসার দরকার। অনেক গাড়ি চলে গেছে, কেউ দাঁড়ায় নি… জায়গাটা খারাপ তো….

দয়া করে আমার মেয়েটাকে একটা সরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দিন… আমরা খুবই কৃতজ্ঞ থাকব…
— কোথায়? কোথায় আপনাদের মেয়ে?
—আসুন এই তো রাস্তার পাশে…
আগে আগে সরকার দম্পতি, পেছনে পেছনে সেই গাড়ির চালক ও ভদ্রলোক…

গাড়ির কাছে এসে দাঁড়াতেই আঁৎকে উঠলেন, ভদ্রলোক।
—একি!! এইতো সেই দম্পতি!! তবে….
দু’পা পিছিয়ে এসে, চালকের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।
আবেগে আপ্লুত হয়ে, বলে উঠলেন…
— বাবা-মায়ের…সন্তানের প্রতি টান, বুঝি রয়েই যায়…

গাড়ির স্টিয়ারিং-এ মাথা রেখে বসে রয়েছেন মিস্টার সরকার… বাইরে হাত ঝুলছে মিসেস সরকারের…
এরমধ্যে,চালক গাড়ির কাঁচ ভেঙে বাচ্চামেয়েটাকে বের করে এনেছে..
নিঃসন্তান ভদ্রলোক বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে, ঈশ্বরের কাছে ওই দম্পতির আত্মার শান্তি কামনা করে… বললেন,
— হে ভগবান, এভাবে সন্তান দিলে!! তবুও দিলে…

তখনো গাড়ির গা চুঁইয়ে চুঁইয়ে, টুপ টুপ করে রক্ত ঝরে পড়ছে ঘাসের উপর…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here