“আমার কৃষ্ণকলি” ভিন্নধারার কবিতাটি লিখেছেন ওপার বাংলার কলমযোদ্ধা- সোনালী মিত্র

427
“আমার কৃষ্ণকলি” ভিন্নধারার কবিতাটি লিখেছেন ওপার বাংলার কলমযোদ্ধা- সোনালী মিত্র

আমার কৃষ্ণকলি

                                  সোনালী মিত্র

জন্মের পরে নাকি বাবা মা নাম রেখেছিল মেয়েটির ‘মোতি’
ভালবেসে পড়শীরা ডাকতো কালীমতি।
বহুবার ওকে দেখেছি
আমার আসা যাওয়ার পথে।
গভীর চোখদুটো ভীষন আকর্ষণ করত আমাকে।
একদিন আমার সব প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিল, যে ও সবার কাছে কালীমোতি।
বলেছিলাম, আরে! কালো তো জগতের আলো আর কালী সে তো সর্বশক্তিসম্পূর্ণা।
ওকে আমি বোঝাতে পেরেছিলাম কিনা জানিনা, কিন্তু ওর গভীর চোখে খুশির আলো দেখেছিলাম।
বেশ কিছুদিন যাওয়া আসার পথে মোতিকে দেখিনি
হঠাৎ একদিন বৃষ্টি থেমে যাওয়া গোধূলির আলোয় ওকে দেখলাম।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কিরে! কোথায় ছিলিস বলতো এতদিন?
আমাকে দেখে ওর মায়াবী চোখের কোনে জল চিক চিক
করে উঠলো ।
মনে হলো বৃষ্টি থামলো যেন ওর ঐ দু চোখের কোনে।
কাঁদতে কাঁদতে বললো মুর মা’টা যি মুইরে. গিলো দিদি —
আমি থমকে গেলাম, বললাম
কি? কি করে! কি হয়েছিলো?
জালি লাইরে দিদি,
আমি ওকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললাম, তুই আমাকে দিদি বলিস কেন রে? মাসি বলবি।
লাইরে দিদি তুকে আমি মাসি বুইলব লা,
বললাম কেন রে?মুইর বাপটা ঐ মুইর মাসিটাকে বিহা কুইরলো
আর মুইকে ঘুর থিক্কে বাইরর্ কুইরে দেলো।

আমি ওকে টেনে নিয়ে বললাম
চল কৃষ্ণকলি আমার ঘরে চল।
থমকে গিয়ে আমাকে বললো দিদি তু কি বুললি মুইকে!
আমি হেসে বললাম তুই আমার কৃষ্ণকলি।
সিঠা কি রে দিদি?
সেদিন আমি ওকে একথার জবাব দিতে পারিনি, শুধু বলেছিলাম ও তুই বুঝবি না।
আমি চলে এসেছিলাম
তারপর আবারো বহুদিন ওকে আর দেখতে পাইনি মনে মনে ভেবেছি অনেকবার।
বৃষ্টি থেমে যাওয়া সন্ধ্যায় আমি চলছিলাম আপন খেয়ালে
হঠাৎ আমার শাড়ির আঁচলে টান পড়লো পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার কৃষ্ণকলি।
উজ্জ্বল লালের সমারোহ ঘটেছে ওর কপালে সিঁথিতে, নতুনের বার্তা।
কিছু প্রশ্ন করার আগেই ও বললো দিখ্ দিদি ই আমার মুরদ বটে।
অবাক আমার মন ; আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে যে, পৃথিবীর সব রং মুছে যাওয়া এক অনন্য পুরুষ।
কৃষ্ণকলির কাঁধে ওর হাত।
কিছু বলবার আগেই ও বললো
জালিস দিদি উ ভীষন ভল্লো গাইন কুরে ।
‌বেশ তো একটা গান শোনাও গো_বললাম।
আমার পৃথিবী সেদিন সেই মুহুর্তে দাঁড় করিয়ে দিলো,
যে প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারি নি একদিন কৃষ্ণকলি কে
আজ আমার সময় হয়েছে।
যার চোখে পৃথিবীর অন্ধকার তাঁর কন্ঠের সুরে শুনতে পাচ্ছি
‘সুখের মাঝে তোমায় দেখেছি
দুঃখে তোমায় পেয়েছি প্রাণ ভরে ‘

আমি কৃষ্ণকলিকে বুকের কাছে চেপে ধরে বলেছিলাম তুই আমার সত্যিকারের কৃষ্ণকলি।
চলে এসেছিলাম ওদের দুজনকে আশীর্বাদ করে বলেছিলাম খুব ভালো থাকিস তোরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here