বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদের বিশেষ আয়োজন সাক্ষাৎকার পর্বের এবারের অতিথি ছিলেন বা.সা.প এর সমাজকল্যাণ বিষয়ক পরিচালক তৌহিদ হোসেন মজুমদার।
উক্ত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর হাসিনা ইসলাম সীমা, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাঈম মাহমুদ মিথেল ও সাধারণ-সম্পাদক জেসমিন জাহান জুঁই।
সাক্ষাৎকার:
প্রশ্ন: ফেইসবুকে প্রায়ই আপনার বেশ কিছু অসাধারণ কবিতা পড়েছি।
এত সুন্দর কবিতা লেখার নেপথ্যে অনুপ্রেরণার বিষয়বস্তু কি ?
উত্তর: আমার জীবনাদর্শ হলো আমার মৃত্যুর পর যেন মানুষ মন থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে লোকটা বেশ ভাল ছিল। আমি সবসময় চেষ্টা করি সমাজ সংসারকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে নিরাপদ রেখে যেতে এটাই আমার মূল অনুপ্রেরণা।
প্রশ্ন: আপনি কখন থেকে লেখালেখির জগতে পা রাখেন?
উত্তর: আমি ছোটকাল থেকে কবিতা লিখতে চেষ্টা করতাম তবে ইউনিভার্সিটি লাইফে প্রথম গুছিয়ে কিছু লিখতে পারি বলে মনে পড়ছে।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম প্রেম কত বছর বয়সে এসেছিলো?
উত্তর: সেই বাল্যকাল থেকে কতো শতো ভাল লাগালাগি হলো, তবে প্রেম আর ঘোরের পার্থক্য আমার সব সময়ই ছিলো। ভাল লেগেছে অনেককে তবে প্রথম প্রেমে পড়ি চাকুরী জীবনের শুরুতে। আমি কখনো টাইম পাসের প্রেমে বিশ্বাসী ছিলাম না।
প্রশ্ন: আপনি কোন কবি বা সাহিত্যকের লেখায় বেশি অনুপ্রাণিত হন??
উত্তর: কবি নজরুল ইসলাম আমার আদর্শ।
প্রশ্ন: আপনার ফেইসবুক পোস্ট ও কবিতায় বেশ সাহসী উচ্চারণ দেখা যায়, এই সাহসের নেপথ্যের কারিগর কে?
উত্তর: আমার রাসুল স: এবং ইসলামের ইতিহাসের শহীদ ও গাজীগন।
প্রশ্ন: আপনাকে দেখে মনে হয়েছে সত্য বলতে পিছপা হন না সত্যিটা বলার জন্য কখনো কী অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে?
উত্তর: অনেক,সেই ২০১২ এর শেষে থেকে আমার ফেসবুক আইডি মনিটরিং এ আছে এবং এখনো আমার আইডি নিয়মিত মনিটর হয়। বিভিন্ন ভাবে হুমকি পেয়েছি এবং নিজ কর্মস্থল অনেক বার সতর্ক করেছে।
প্রশ্ন: এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনিতিতে আপনার বেশ প্রভাব ছিল, বর্তমান ছাত্র রাজনিতিকে কিভাবে দেখেন?
উত্তর: আমরা রাজনিতী করতাম তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে. পদ পদবী, চাঁদা, ফ্রী খেতে নয়। এখনকার ছাত্র রাজনিতী উচ্ছিষ্ট ভোগীদের আড্ডাখানা।
প্রশ্ন: আপনার শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই?
উত্তর: আমি শিক্ষা জীবনে প্রথাগত ভাল ছাত্র না হয়েও ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করেছি. এটা মহান আল্লাহ তায়ালার উপহার. আমার জীবনে ভাগ্য বলে কিছু নেই. সব চাকুরী নিজ যোগ্যতায় পেয়েছি এবং আজকের এ অবস্খান শুধুই কর্মফল আমি শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করলেও এখন একজন ব্যাংকার।
প্রশ্ন: কোন বিষয় নিয়ে লেখা স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন?
উত্তর: সমসাময়িক প্রসংগ, অন্যায়ের প্রতিবাদ ও ধর্ম নিয়ে লিখতে বেশী ভাল লাগে
প্রশ্ন: প্রত্যেক লেখকেরই মৃত্যু চিন্তা থাকা উচিৎ, এ বিষয়ে আপনার অনুভূতির কথা জানতে চাই?
উত্তর: মৃত্যু অনিবার্য সত্য এবং আমি পরকালে বিশ্বাসী. হাশরের ময়দানের পুঁজি সংগ্রহই আমার সমস্ত কর্মের মুল উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন: ভাইয়া,ব্যক্তি হিসেবে আপনি নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
উত্তর: একজন প্রিয় বন্ধু, চমৎকার সহকর্মী কিন্তু বর হিসেবে ভালোনা। তবে বাচ্চাদের প্রিয় বাবা।
প্রশ্ন: স্যার একজন মানুষ এবং একজন কবি হিসেবে আপনি কীভাবে নিজেকে মূল্যায়ন করেন?
উত্তর: মানুষ হিসেবে আমি একজন পজেটিভ সাধারন মানুষ। কবি হতে আমাকে আরো সাধনা করতে হবে।
প্রশ্ন: প্রেমের কবিতা লিখতে গেলে কাকে কেন্দ্র করে লিখেন?
উত্তর: অবশ্যই আমার বউকে। তবে চরিত্র হিসেবে সেই শৈশব থেকে ভালোলাগার নারী চরিত্রগুলোও প্রভাব ফেলে।
প্রশ্ন: স্যার কোন কাজটি করতে আপনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন? এবং কেন??
উত্তর: মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে কিছু করতে কারন জন্মের স্বার্থকতা এর মাঝেই নিহিত বলে আমি বিশ্বাস করি।
প্রশ্ন: ভাইয়া এতো ব্যস্ততার মাঝেও লিখে যাচ্ছেন এরমাঝে ঝামেলা আসলে তা নিয়ন্ত্রণ করেন কিভাবে?
উত্তর: সবচেয়ে বেশী রাগ করে অর্ধাঙ্গিনী. তবে তবে একটানা লেখা আমার অভ্যেস বলে নীরব সময় বেছে নিই।
প্রশ্ন: জীবনে কী হতে চেয়েছিলেন?না পাওয়ার কোনো আক্ষেপ আছে কী? থাকলে সেটা কী?
উত্তর: আমার জীবনে কখনো লক্ষ্য ছিলোনা. আমি অনেকটা জলে ভাসা পদ্ম. তবে একজন ভাল মানুষ হতে চেয়েছি সব সময় আমি বিশ্বাস করি তকদিরে, তাই যে কোন পরিস্হিতিতে আলহামদুলিল্লাহ কারন যেমন আছি তা আল্লাহর ইচ্ছাতে এবং আল্লাহ কখনো অকল্যাণ করেন না।
প্রশ্ন: বর্তমান কবি লেখকদের আপনি কি বার্তা দিতে চান?
উত্তর: কবিতা হোক সমাজ বদলের হাতিয়ার. এখন সময় প্রেম আর প্রকৃতির নয়।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
উত্তর: সমাজ ও রাষ্ট্রকে বদলাতে হবে. সব অনিয়ম দুর করে নিরাপদ পৃথিবী রেখে যেতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে জনকল্যানে সংগঠন করা এবং অরাজনৈতিক প্লাটফর্মে জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো মিডিয়ায় তুলে ধরা।
প্রশ্ন: লেখার ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ লেখক বা কবিকে অনুসরণ করেন কি? করে থাকলে কেনো করেন?
উত্তর: কাজী নজরুল আমার আদর্শ কারন “ এক হাতে মম বাঁকা বাঁশের বাশরী আর আরেক হাতে রণতুর্য” তিনি প্রেমিক, সংগ্রামী, অসাম্প্রদায়ীক ও মানবতাবাদী তবে তিনি ধর্মহীন ছিলেন না এবং রচনা করেছেন অজস্র হামদ ও নাত।
প্রশ্ন: ভাইয়া আপনার নিজেকে একটি কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করতে বললে কি বলবেন??
উত্তর: আমি প্রেমিক, আমি সৈনিক
আমি থাকবোনা শান্ত,
আমি ভাংগবো, গড়বো নতুন
সংগ্রামে অক্লান্ত।
রাতটা যদি কাটে প্রিয়ার বাহুডোরে
দিনটা রাজপথেই হবে ক্লান্ত।
জীবনতো আমার একটাই
তাই মরণেই হবো শান্ত।