বিশ্ব ছবি দিবসে এক ছবিয়ালের সঙ্গে আড্ডা
অজন্তা প্রবাহিতা
ছবি তোলা ব্যাপারটা আজ ছেলেখেলার মতোই সহজ । ছয় থেকে ছেষট্টি সবার হাতেই ঘুরছে এন্ড্রোয়েড ফোন। জীবনের যেকোন বিশেষ মুহূর্ত অনায়াসে বন্দি হচ্ছে মুঠোফোনের একটা ক্লিকে। আজকের এই সহজ ক্লিকের গল্প শুরু হয়েছিল ১৮১৬ সালে প্রথম ইমেজ ট্রেসিং ক্যামেরার হাত ধরে। তারপর প্রযুক্তির হাত ধরে এগোতে এগোতে ১৮৫৯ সালের ৯ জানুয়ারী ফোটোগ্রাফি প্রসেস বানাতে সক্ষম হন ।
ফ্রান্সের লুই ডাগুয়েরে.ওই বছরেই ১৯ আগস্ট ফ্রান্সের সরকার বিনামুল্যে তার দেশের জনগণকে এই ফোটোগ্রাফি সার্ভিস দেওয়া শুরু করেন, সেই থেকেই আজকের দিনটিকে সারা পৃথিবীতে ওয়ার্ল্ড ফোটগ্রাফি ডে হিসেবে পালন করা হয়।
ধাপে ধাপে ক্যামেরার পরিবর্তিত রূপ আমরা দেখতে পাই। সেই কোডাক থেকে SLR (Single Lens Reflect)
তারপর DSLR ( Digital Single Lens Reflect).,পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা,মিররলেস ইন্টারচেঞ্জেবল লেন্স ক্যামেরা, ,হাইব্রিডক্যামেরা।
আর কোনো শিল্প মাধ্যমে প্রযুক্তির আশীর্বাদে এতো বড় বিপ্লব আসে নি,যতটা এসেছে ফটোগ্রাফীতে। ফটোগ্রাফী নিয়ে সারা বিশ্বই এখন মাতোয়ারা।
আমাদের দুচোখে দেখা পৃথিবীকে ক্যামেরা দেখে একচোখে। ছবি তোলা খুব সহজ কাজ মনে হলেও ভালো ছবি তোলা এতসহজ নয় । সঠিকভাবে ছবি তুলতে গেলে একজন ওস্তাদের পথপ্রদর্শন খুব প্রয়োজন হয় । তাই , ওয়ার্ল্ড ফোটোগ্রাফি ডে তে ফোটোগ্রাফির খুঁটিনাটি বিষয়ে আড্ডা মারবো বলেই পৌঁছে গেলাম উত্তরবঙ্গের ছবিমহলের জনপ্রিয় ফটোগ্রাফার ও গুরু গৌতম রায়ের কাছে।
১ ) প্রশ্ন -আজ ওয়ার্ল্ড ফোটোগ্রাফি ডে। আপনি এই দিনটি কি ভাবে কাটান ? কিকি করে থাকেন ?
উত্তর – আমি সুযোগ পেলেই ছবি তুলি। কিন্তু আজকের দিনটি বিশেষ দিন। তাই যেমন করেই হোক, আজকের দিনে আমি ক্যামেরায় হাত রাখি। নানা ধরণের ফটোশুট করি। যদি আজকের দিনটা রবিবার অথবা ছুটির দিন হয়, তাহলে আমি আউটডোর ফোটোগ্রাফি করি ।
২) প্রশ্ন – আপনি কি ভাবে ফটোগ্রাফির দিকে আকৃষ্ট হলেন ?
উত্তর – ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন নামিদামী ছবির ম্যাগাজিন ঘাঁটাঘাঁটি করতাম। তখন সবসময় মনে হতো, এতো সুন্দর ছবি কি ভাবে তোলে ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি ক্যামেরা কিনি, ছবি তোলার খুঁটিনাটি শিখতে শুরু করি এবং ধীরে ধীরে ফোটোগ্রাফিতে ঢুকে পড়ি।
৩ ) প্রশ্ন -ফটোগ্রাফির প্রাথমিক নিয়ম কি ? ছবি তোলার সময় কোন কথাগুলো মাথায় রাখা উচিত ?
উত্তর – ফটোগ্রাফি বিজ্ঞানের এক অদ্ভুত অবদান । ফোটোগ্রাফির মূল খেলাটা লাইট বা আলোর সাথে। Light is the lifeline of photography. এই বিষয়টা বোঝার জন্য হাতেকলমে কাজ করতে হবে।
৪) প্রশ্ন – মোবাইল বিপ্লবের ফলস্বরূপ ফোটোগ্রাফি আজ অনেকটাই ‘ছেলেখেলা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে, আপনার এই ব্যাপারে কি মতামত ?
উত্তর – হ্যা , কথাটা ঠিক। হাতে হাতে, হাই কোয়ালিটি ক্যামেরা যুক্ত মোবাইল আসাতে ছবি তোলা সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, সবাই ফটোগ্রাফার। কিন্তু, আমার মনে হয়, মোবাইল ক্যামেরা কখনোই আসল ক্যামেরার বিকল্প হতে পারে না। যে স্পষ্টতা বা ডিটেলিং এবং পিকচার কোয়ালিটি রিয়েল ক্যামেরা দিয়ে থাকে সেইসব মোবাইল ক্যামেরা দিতে পারে না।
৫) প্রশ্ন – মোবাইল ফোটোগ্রাফি আর ক্যামেরা ফটোগ্রাফির মধ্যে কি পার্থক্য ?
উত্তর – মোবাইল ফোটোগ্রাফি, ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে শেয়ার করার জন্য খুবই ভালো মাধ্যম। কিন্তু, যখনই আমরা ছবি প্রিন্টের কথা ভাবি, তখন ক্যামেরা ফটোগ্রাফির বিকল্প নেই। কারণ ছবির মানদণ্ড প্রিন্টের মাধ্যমে বোঝা যায়। স্ক্রিনে সেটা বোঝা যায় না।
৬) প্রশ্ন – আপনি এখন অব্দি কি কি কাজ করেছেন ?
উত্তর – নানা ধরণের ফোটোগ্রাফি হয়ে থাকে। যেমন, ওয়াইল্ড লাইফ,বার্ডিং,মেরিন, ল্যান্ডস্ক্যাপ, মাউন্টেইন স্ক্যাপ ,প্রোট্রেট, ফ্যাশন, ইভেন্ট, স্ট্রিট, ম্যারেজ ইত্যাদি। আমি একজন সম্পূর্ণ চিত্রগ্রাহক হিসেবে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে চাই। তাই আমি সব ধরণের ফটোগ্রাফি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকি। তারমধ্যে কিছু পাখির ফটোগ্রাফি করেছি, প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণী, মুষ্টিমেয় বিবাহ, ফ্যাশন, মডেল শ্যুট, রাস্তা, ইভেন্ট ইত্যাদি।
৭ ) প্রশ্ন – ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির সেকাল ও একাল বলতে আপনার কি মনে হয় ?
উত্তর – ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি হল প্রাণীদের ছবি তোলা এবং প্রাকৃতিক বাসস্থানে পাখিদের ছবি তোলা । প্রায় একশো বছর আগে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি বলতে শিকার করা প্রাণীদের ছবি তোলা হতো। কিন্তু, আজ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উপায় ও তাদের সুরক্ষার প্রয়োজনের সচেতনতা ছড়িয়ে দেবার জন্য ছবির ব্যবহার করা হয়।
৮ ) প্রশ্ন -নতুন ফটোগ্রফারদের কি পরামর্শ দিতে চান ?
উত্তর – ফোটোগ্রাফি একটি বিশাল সাবজেক্ট এবং এক অন্যতম জীবিকার মাধ্যমও বটে। অন্যান্য বিষয়ের মতো এই বিষয়েও গ্রামার আছে। সেই গ্রামারটা একটু ভালো করে শেখা দরকার। দক্ষতা লাভের জন্য প্রচুর প্র্যাক্টিসও প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত টেকনোলজি ডেভেলপ হয়ে চলেছে। কাজেই একটু পড়াশুনা করে নতুন টেকনিক ও নতুন গিয়ারের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকতেই হবে। শেখার কোনো অন্ত নাই।
৯) প্রশ্ন – আপনি কি ফটোগ্রাফির ক্লাস নেন ?
উত্তর – আমার খুব ইচ্ছে নতুন প্রজন্মকে ফটোগ্রাফি শেখাবার। কিন্তু, এখন চাকরি বজায় রেখে এই শখ গুলো মেটাবার সময় পাই না। অদূর ভবিষ্যতেঅবশ্যই শেখাবো।
আমি ও আমার কাছের তিন বন্ধু মিলে ওয়েবসাইট লঞ্চ করেছি। যার নাম www.lensinwoods.com.
এই ওয়েবসাইট বানানোর মূল উদ্দেশ্য, সাধারণ মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া। পৃথিবীর জীবজগৎ সংকটাপন্ন। পাখি, প্রাণী, উদ্ভিদ সবই এখন মানুষের লোভের সামনে বিপন্ন ও অসহায়। আমরা কেউ বোঝার চেষ্টা করি না,পৃথিবী শুধু মাত্র আমাদের একার নয়। এখানে সবার নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে বাস করবার অধিকার আছে।
আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই বার্তাই সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই।
ধন্যবাদ গৌতম বাবু। কথা বলে খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।