প্রকৃতি,পাখী ও পরিবেশ নিয়ে পাখী প্ৰেমী নোয়েল ফোনিং এর এক দুর্লভ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন–ওপার বাংলার প্রকৃতি প্রেমী-অজন্তা প্রবাহিতা

1715
পাখী প্ৰেমী নোয়েল ফোনিং এর এক দুর্লভ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন –ওপার বাংলার প্রকৃতি প্রেমী- অজন্তা প্রবাহিতা

জীব জগতে পাখী মানুষের অন্যতম আকর্ষণ। সকালে ঘুম ভাঙে পাখীর কলতানে, বিকেলে আকাশ ছেয়ে পাখীদের বাড়ি ফিরে যাওয়া দেখে বুঝি সন্ধ্যে নেবে এলো।
অনায়াসে ডানা মেলে নীল আকাশে উড়ে যাওয়া এই প্রাণীটিকে দেখে প্রায়ই আমাদের মনে হয়,আহা যদি এমন ডানা থাকতো আমাদের পিঠে,কত আনন্দে উড়ে বেড়াতাম ওই আকাশে।কোনো রকম নিয়ম ছাড়াই উড়ে যেতাম এই দেশ থেকে ওই দেশে।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে,পাখীদের জীবনধারণ করা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ছে। গাছের পরে গাছ কেটে ফেলে নগরায়ণ হচ্ছে। নিজেদের বিলাসিতার জন্য অকারণে মারা হচ্ছে অনেক পাখী। তার উদাহরণ,’ডোডো ‘ পাখী। মানুষের লোভের যোগান দিতে গিয়ে বিলুপ্ত হয়েছে এই প্রজাতির পাখি। ঠিক যেমন, ‘হরিণা এমন মাংসে বৈরী।
এরকম আরো অনেক পাখী আছে, যারা হাতে গোণা সংখ্যায় পৃথিবীতে রয়ে গেছে তাদের মধ্যে ‘ধনেশ বা হর্নবিল’,রেড হেডেড ভালচার বা রাজ্ শকুন,ফরেস্ট আউলেট অন্যতম।


এই পাখীদের প্রতি যদি আমরা সচেতন না হই,অদূর ভবিষ্যতে পাখীরা কেমন ছিল দেখবার জন্য আমাদের জাদুঘরে যেতে হবে।
অনেক ধ্বংসের মাঝেও কেউ কেউ সংরক্ষণের কাজ করতে ভালোবাসেন। এমনি এক পাখী প্রেমী মানুষের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানতে পেরেছি অনেক কিছু। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরন্তর চেষ্টা আমার মতো অনেক মানুষকে পাখীদের প্রতি সজাগ ও সদয় হতে শিখিয়েছে। যাঁর কথা বলছি তাঁর নাম নোয়েল ফোনিং।
উত্তরবঙ্গে হিমালয়ের কোলে জন্মেছেন। পাহাড়ের কাছে তাঁর ছোট বেলা কেটেছে। পরবর্তী কালে, বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন থেকে তিনি ভূগোল নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করেছেন। জন্মসূত্রে রহস্যময় হিমালয়ের সাথে তাঁর সখ্যতা ওপর দিকে রবীন্দ্র চিন্তায় ও শিক্ষায় অনুপ্রাণিত তাঁর মন। ভূগোলের জ্ঞান এবং প্রকৃতির অজানা তথ্যকে জানবার জন্য তাঁর অক্লান্ত চেষ্টা এক অদ্ভুত গুণী মানুষকে জন্ম দিয়েছে।
জীবজগতে নানা প্রাণীর মধ্যে তাঁর পছন্দের বিষয় হলো, পাখী । একেকটি প্রজাতির পাখীর আচরণ ও স্বভাব জানবার জন্য দিনের পর দিন তিনি বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান ।ছবি তোলেন। দীর্ঘ নিরীক্ষণের পরে পাখীদের বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাপারে যা কিছু জানতে পারেন সেই সমস্ত টুকু জ্ঞান আবার নিজের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে বিলিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। ওনার মতে , অন্তত দশ জন ছাত্রও ওনার অনুভবের সাহায্যে প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট ও সদয় হয়, তাহলে ভবিষ্যতের পৃথিবী কিছুটা হলেও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
আসুন, ওনার সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে বাকি বিষয়টুকু জেনে নি।
১) নমস্কার ! নোয়েল স্যার ! ভূগোল নিয়ে আপনার পড়াশুনা। ছবি তোলা ও পাখী সংরক্ষণ আপনার শখ। দুই মেরুর দুটি বিষয়কে আপনি সামলান কি করে ?
উত্তর -হা ! হা ! দেখুন, ভূগোল হলো নানাবিধ পরিবেশ, স্থান, এবং পৃথিবীপৃষ্ঠের উপরিভাগের এবং তাদের মধ্যেকার যোগাযোগের অধ্যয়ন। এই বিষয়টি এতো সুন্দর ও ইন্টারেষ্টিং ছবি তোলা বা ফোটোগ্রাফি কিন্তু এর সাথে রিলেটেড। ফোটোগ্রাফি যারা করেন তাদের প্রকৃতি, পরিবেশ ও নানা ধরণের ল্যান্ডফর্মসের প্রতি একটা বিশেষ আকর্ষণ থাকে। Geography and photography complement each other.
ভূগোলে একটা বিশেষ টপিক আছে, Biosphere, এর সাথে ওয়াইল্ডলাইফ সরাসরি জড়িত। জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করার সময় আমার ভূগোলের ব্যাকগ্রাউন্ড আমায় বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
২) প্রশ্ন -ওয়াইল্ড লাইফে আপনার বিষয় পাখি, পাখির ব্যাপারে আপনি কি করে এতটা আকর্ষিত হলেন ?
উত্তর – আমি কোনো কিছুই পূর্বপরিকল্পিত ভাবে করি নি। গোড়ার দিকে যখন ছবি তুলতে শুরু করি তখন সব রকম ঘরানা চেষ্টা করেছিলাম। তারপর দেখলাম, পাখির ছবি তুলতে গেলে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়।তাই একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম,কঠিন কাজটাই করবো। তখন নতুন ক্যামেরা ও বড় লেন্স নিলাম আর এই কাজটাতে ডুবে গেলাম।

৩) প্রশ্ন -পাখির বিষয়ে যখন কথা উঠলো তখন জিজ্ঞেস করি, আপনি পাখিদের কিভাবে পৰ্য্যবেক্ষণ করেন ?
উত্তর – আগেই বলেছি, পাখির বিষয়টা খুব কঠিন। পাখির ছবি তোলা আর পাখির ভালো ছবি তোলা দুটো কিন্তু এক্কেবারে আলাদা কাজ। একটা পাখিকে মন দিয়ে অবজার্ভ করা ও তার স্পষ্ট ছবি তুলতে অনেকটা খাটতে হয়। রোজ ফিল্ডে যেতে হয়। প্রতিদিন ফিল্ডে গেলে একেকটা পাখির ব্যবহার,তার প্রজনন সময় ,নেস্টিং ইত্যাদি খেয়াল করা যায়।
পাখির চরিত্রের এক বিশেষতা হচ্ছে ‘regional adaption ‘বা আঞ্চলিক অভিযোজন। উদাহরণ স্বরূপ -Blue-fronted Redstart
এই পাখিটা শীতকালে lower altitiude বা নিম্ন উচ্চতায় চলে আসে। আবার গরমের সাথে সাথে higher altitude বা উচ্চ উচ্চতায় চলে যায়। এই পাখি গুলোকে মার্চের পরে দেখায় যায় না। আবার শীতের শুরুতে এরা নজরে আসে।

৪) মাইগ্রেটরি বার্ড বা পরিযায়ী পাখি আর ঘরোয়া পাখির মধ্যে কি পার্থক্য ? পরিযায়ী পাখি কোন গুলো ?
উত্তর –একটা ছোট্ট কারেকশন করবো। ঘরোয়া পাখি বলে না। রেসিডেন্সিয়াল বার্ড বা আবাসিক পাখি বলা হয়ে থাকে। কারণ, ঘরোয়া বললে আর ওয়াইল্ড রইলো না।
যে পাখি গুলোকে সারা বছর আমাদের দেশে বা আমাদের স্থানীয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় তাদের ‘রেসিডেন্সিয়াল বার্ড’ বা ‘আবাসিক পাখি’ বলা হয়। এর মধ্যে কিছু পাখি ঋতু অনুযায়ী ‘সিজনাল এডাপশন’ করে, কিন্তু আমাদের দেশের বাইরে যায় না, এই ধরণের পাখি গুলোকেই ‘রেসিডেন্সিয়াল বার্ড’ বলা হয়ে থাকে।
যে পাখিরা ঋতু পরিবর্তনের সময় প্রকট গরম বা চরম ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু সময়ের জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যায়, তাকে পরিযায়ী পাখি বলে। উদাহরণ স্বরূপ, সাইবেরিয়া,তিব্বত,চীন ইত্যাদি। ইউরোপ থেকেও অনেক পাখি শীতকালে আমাদের দেশে চলে আসে,শীত কাটিয়ে আবার নিজের দেশে ফিরে যায়।
আমাদের দেখা বেশির ভাগ জলচর পাখি বা সামুদ্রিক পাখি, পরিযায়ী পাখি।
শীতকালে আমাদের দেশের বড় বড় জলাভূমিতে নানা ধরণের পরিযায়ী জলচর পাখি দেখতে পাওয়া যায়। এরা অক্টোবর মাসের শেষে আমাদের দেশে এসে পৌঁছায় আবার মার্চ মাস এলে নিজের দেশে ফিরে যায়।
পরিযায়ী পাখি ও আবাসিক পাখির প্রাথমিক বিভিন্নতা হলো,
• পরিযায়ী পাখি আমাদের অতিথি। এরা এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমাদের দেশে আসে। আর আবাসিক পাখি আমাদের দেশের
বাসিন্দা।
• পরিযায়ী পাখি আমাদের দেশে বংশবৃদধি করে না। এরা নিজের দেশেই বংশবৃদধি করতে ভালোবাসে। কিছু পাখি দল বেঁধে পরিযায়ী হয়,যেমন -সোয়ালো,বী ইটার ইত্যাদি। আবার কিছু পাখি একা দেশ ভ্রমণে ভালোবাসে। যেমন -golden oriol।
পরিযায়ী পাখিরা কিন্তু প্রতিবছর একই পথে একই জায়গায় যায়। এরা একই সরলরেখায় ওড়ে।
• পরিযায়ী পাখিরা মূলত জলচর ও সামুদ্রিক পরিবেশে থাকে। যেমন- large whistling teal, Northern পিনটাইল, Ruddy shelduck (চখাচখি), Comb Duck (নাকটা ) এদের সাথে আমরা বিশেষ ভাবে পরিচিত।
৫ ) প্রশ্ন -পরিযায়ী পাখিরা কেনই বা নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে উড়ে যায় ?
উত্তর – আমি আগেই বলেছি,পাখিরা ভীষণ ইন্টেলিজেন্ট ও সেনসিটিভ হয়। ওরা আগে থেকেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝতে পারে। ওরা বোঝে যে চরম শীত ও আবহাওয়ার দুর্যোগ আস্তে চলেছে। পুরো এলাকা বরফের নিচে চাপা পড়লে ওদের খাবারের অভাব হবে। জলাভাব ও খাদ্যাভাবে ওদের জীবনধারণ করা মুশকিল হয়ে যাবে। তাই শীতকালে নিজের জায়গা ছেড়ে চলে যায় এমন জায়গায়, যেখানে ঠান্ডা অপেক্ষাকৃত কম। গ্রীষ্মকালে আবার নিজের জায়গায় ফেরত আসে বাসা বাঁধার জন্য,ডিম্ পাড়ার জন্য।

৬) প্রশ্ন -পাখী এতো গুরুত্ব পূর্ণ কেন আমাদের জন্য ?
উত্তর –পৃথিবীর সব প্রাণী ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদি এদের গুরুত্ব না থাকতো, তাহলে এরা পৃথিবীতে উপস্থিত থাকতো না। অতএব পাখিও গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। পাখি অরণ্য সৃষ্টি করে। পাখিরা অরণ্যের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। আগে মানুষের বাড়ি বাড়ি চড়াই শালিকের ছড়াছড়ি ছিল। এখন এদের দেখাই যায় না। কেন ? কারণ কি ?
কারণ, এদের সংখ্যা কমে এসেছে। প্রায় বিলুপ্ত । আজকের পরিবেশ এদের জীবনধারণের অনুকূল নয়,তাই এরা অনেক সংখ্যায় কমে এসেছে।
আরেকটা ইন্টারেষ্টিং কথা বলি,পাখিদেরকে ‘ফরেস্টফারমার’ বা ‘বন কৃষক’ ও বলা হয়ে থাকে,বিশেষ করে হর্নবিল বা ধনেশকে এই নামে ডাকা হয়। এরা প্রাকৃতিক ভাবেই অরণ্যের সৃষ্টি করে। মানুষ গাছ লাগাতে পারে কিন্তু অরণ্য সৃষ্টি করতে পারে না। ফলের বীজ খেয়ে নিজের বিষ্ঠার সাহায্যে পাখী যেমনি অরণ্য সৃষ্টি করে, তেমনি মাটির ও জলের পোকামাকড় খেয়ে আবহাওয়া কীটাণু মুক্ত করেএবং বিভিন্ন অসুখ বিসুখের হাত থেকেও বাঁচায়।ইকো সিস্টেমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এরা প্রাকৃতিক প্রহরী হিসেবে কাজ করে। সব কিছুই বৃত্তাকারে ঘোরে। পাখি থেকে গাছ, গাছ থেকে অরণ্য, অরণ্য থেকে অক্সিজেন,সঠিক সময় বৃষ্টি,পর্যাপ্ত ও নিয়মিত বৃষ্টির ফলে ভালো ফসল ইত্যাদি।


৭) প্রশ্ন -আপনার দেওয়া ইনফরমেশন দেখে বুঝতে পারছি পাখিদের জীবন বিপন্ন। কি ভাবে এদের জীবন রক্ষা করা যায় ?
উত্তর- এই প্রশ্নটা সত্যি খুব গুরুত্বপূর্ণ। জীব জগতের সংরক্ষণ একদিনের কাজ নয়। একার পক্ষে এটা করা সম্ভবও নয়। এর জন্য সরকার ও জনসাধারণকে একসাথে কাজ করতে হবে।
সরকারের ভূমিকার সাথে জীবজগতের সংরক্ষণের জন্য স্থানীয়দের বাসিন্দাদের সচেতনতা ও সতর্কতাও বিশেষ ভাবে কাজ করে। সম্প্রতি, পাখিদের ছবিতোলা বা বার্ডিং ফোটোগ্রাফি যে ভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সেটা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছে। স্থানীয় যুবকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে টুরিস্ট ও ফোটোগ্রাফারদের ‘বার্ড গাইড’ হিসেবে সাহায্য করে। এর ফলে এদের একটি জীবিকা যেমন হয়েছে তেমনি নিজের এলাকার প্রাণী সম্পদের ব্যাপারেও এরা অনেক সচেতন হয়েছে। ফলস্বরূপ,চোরা শিকার অনেকাংশে কমে এসেছে। কিন্তু ‘পাখী হত্যা’ বন্ধ হয় নি।
আরেকটা পয়েন্ট হলো,যে কোনো দেশেই সময়ের সাথে নানা রকম উন্নয়নের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয়। এই উন্নয়নের সময় আমাদের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হবে। যেমন রাস্তা বানানোর জন্য অনেক গাছ কেটে পরিষ্কার করা হয়। গাছ কাটার আগে দেখা উচিত, সব গাছ কেটে ফেলতে হবে ? নাকি, কিছু গাছ কাটলেই হবে। কারণ, বেশির ভাগ পাখিরা গাছেই বাসা বাঁধে। এরা নিজের মতো বাসা বেঁধে থাকতে না পারায় সময় মতো বংশ বৃদধিও হচ্ছে না। ফলস্বরূপ দিনেদিনে এরা সংখ্যায় কমে আসছে । সুতরাং , পাখিদের বাঁচাতে গেলে ওদের বাসস্থানকে সুরক্ষিত করতে হবে।
এই ব্যাপার গুলো একটু মনোযোগ দিয়ে দেখা উচিত।
৮ )প্রশ্ন – বাচ্চাদের কিভাবে প্রকৃতির বৈশিষ্ট সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো যায় ?
উত্তর – ছোট বাচ্চাদের কৌতূহল ও জানার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকে। বাচ্চাদের মনটা ব্ল্যান্ক ক্যানভাসের মতো। সেটা যে রঙে রাঙানো হবে সেই রংটাই পাকাপোক্ত ভাবে থেকে যাবে। তাই ছোট থেকেই যদি ওদের প্রকৃতির রহস্য উন্মোচন করার জন্য অনুপ্রাণিত করা যায় ,তাহলে এই বিষয়ে ওদের আগ্রহ আরো বাড়বে। ভবিষ্যতে এই বাচ্চারাই দায়িত্ববান ও প্রকৃতি প্রেমী নাগরিক হবে। ভবিষ্যতের প্রজন্মকে তৈরী করার জন্য বর্তমানে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি, যেমন –
a) এদের environment সাবজেক্টের বইতে একটা চ্যাপ্টার যদি বন্য প্রাণী পাখিদের বিস্তারিত বিবরণ এবং ছবি দিয়ে তৈরী করা যায়,তাহলে জীবজগতের বিষয়ে এদের ধারণা স্পষ্ট হবে এবং ভীষণ ভাবে বিষয়টাকে উপভোগ করবে।
b) স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে যদি আমরা রিয়েল লোকেশনে যাই, বইয়ের গন্ডি থেকে বিষয় গুলোকে প্রাক্টিক্যালি বোঝানোর চেষ্টা করি তাহলে ওরা সরাসরি প্রকৃতির সাথে নিজেদের সম্পর্ক অনুভব করবে। ছবিতে বাঘ দেখা,চিড়িয়াখানায় খাঁচার ভেতর বাঘ দেখা, আর স্বচক্ষে জঙ্গলে বাঘের চড়ে বেড়ানো দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
c) ‘নেচার এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ’ নিয়ে নানা ধরণের সেমিনার, ওয়ার্কশপ,পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেনটেশন,ইন্টারেক্টিভ সেশন যদি করা যায়,তাহলে এতে স্কুলের বাচ্চাদের সাথে সাথে বিভিন্ন বয়সের মানুষকেও আকর্ষিত করা যাবে।
d)স্কুলগুলো যদি একটু ইনিশিয়েটিভ নিয়ে যদি বাচ্চাদের ‘নেচার ওয়াক,’ ‘ট্রি প্লানটেশন’ এই জিনিস গুলোর দিকেও অগ্রাধিকার দেয়,তাহলে সচেতনতা বাড়বে।
e) প্রতি স্কুলেই নানা বিষয় নানা ধরণের প্রতিযোগিতা হয়। নেচার ফোটোগ্রাফি বা বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় যদি ওয়াল্ড লাইফ থিম দেয়া যায়, তাহলেও বাচ্চাদের সাথে সাথে বাবামায়েদেরও উৎসাহ বাড়বে এবং এবং খুব কম সময়ের প্রকৃতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সচেতনতা বৃধ্ধি পাবে।

৯ ) প্রশ্ন -আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ?
উত্তর –আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে আমি বার্ডিং করতে ভালোবাসি। আমি আরো অনেক পাখির ছবি তুলবো। আমি কম্পিটিশনে বিশ্বাস করি না বা প্রতিযোগিতায় আগ্রহও নেই। কারণ আমি ভীষণ ভালোবেসে বার্ডিং করি। আমি জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে এদের সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি সব টুকু সবাইকে জানাতে চাই। বেশ কিছু awareness প্রোগ্র্যাম করেছি, আরো এওয়ার্নেস প্রোগ্র্যাম করতে চাই। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে যে সংরক্ষণের কাজ গুলো হয়,তাতে ভাগ নিতে চাই। আমি ভীষণ পাখি ভালোবাসি। তাই,দেশে বিদেশে ‘পাখি প্রেমী’ হিসেবে আমায় সবাই চিনুক এটা ভীষণ ভাবে চাই। তারসাথে জীব জন্তুর সংরক্ষণের জন্য পৃথিবীর সবাই এগিয়ে আসুক এটাও চাই। পৃথিবীতে খাবার জিনিস অনেক আছে,এই নিরীহ প্রাণীগুলোকে মেরে মেরে না খাওয়াই ভালো। অন্তত : এবছরের করোনা প্রত্যক্ষ ভাবে এই শিক্ষাই দিয়েছে।

১০ ) প্রশ্ন – নতুন যারা পাখির ছবি তুলছেন,তাদের জন্য কোনো বিশেষ সাজেশন দিতে চান কি ?
উত্তর –নতুন যারা পাখীর ছবি তুলছেন তাদের বলবো, বার্ডিং, ফটোগ্রাফির ভীষণ ভালো ঘরানা এবং ‘বার্ড ফোটোগ্রাফি’ সবচেয়ে কঠিন। তাই শুরুতেএই ফটোগ্রাফির বিষয়বস্তু রপ্ত করতে বেশ সময় লাগে। কিন্তু একবার প্রাকটিস হয়ে গেলে, এর থেকে ইন্টারেষ্টিং আর কিছু নেই। তখন ভীষণ ভালো লাগবে। অনেকেই বার্ডিং শুধু মাত্র ফোটগ্রাফির বিষয়বস্তু হিসেবে দেখেন। তখন তারা একটা ভালো শট নেবার জন্য পাখিদের বিরক্ত করেন। তাদের অনুরোধ করবো, তারা যেন এমনটা না করেন। ওদের বাচ্চার ছবি তোলার জন্য এক্কেবারে ওদের বাসার কাছে জুম করেন,এতে বাচ্চারা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। কখনো ওদের খাবারের লোভ দেখিয়ে কাছে ডেকে ওদের ছবি তোলা, এই অভ্যেস গুলো থেকে বিরত থাকুন। ওদের ভালোবাসুন। ওদের স্বভাব বুঝতে চেষ্টা করুন। পাখির ছবি তুলতে গেলে অনেক ধৈর্য্য,পরিশ্রম ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়। একটা ডিসটেন্স মেইনটেইন করে পাখির ছবি তুলুন।
দ্বিতীয়ত, যখন সবাই জঙ্গলে পাখির ছবি তুলতে আসেন, নিজের সাথে আনা শুকনো খাবারের প্যাকেট ও জলের বোতল এদিক সেদিক ফেলে চলে যাবেন না। চুইংগাম খেয়ে খোলা অবস্থায় ফেলে দেবেন না। পাখির পা ওতে আটকে গেলে ওরা আর খুলতে পারে না ,তখন ওদের প্রাণ বিপন্ন হয়। এখন সবাইকে মাস্ক পড়তে হয়। দয়া করে মাস্ক এদিক ওদিক ফেলবেন না। মাস্কের দড়িতে পাখীর পা বা ঠোঁট আটকে গেলে ওরা ছাড়াতে পারে না। যেখানে সেখানে ‘লিটার ‘ করবেন না। জঙ্গলকে পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব আমাদেরও। এগুলো সবাই একটু মাথায় রাখবেন।
ধন্যবাদ নোয়েল স্যার। অনেক অজানার সাথে আজ আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আপনার চেষ্টা সফল হোক এই কামনা করি।
ধন্যবাদ ম্যাডাম।

Content Protection by DMCA.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here