বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদের বিশেষ আয়োজন সাক্ষাৎকার পর্বের এবারের অতিথি ছিলেন অন্যভূবন সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুহাম্মদ আমির হোসেন।
উক্ত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর হাসিনা ইসলাম সীমা,প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাঈম মাহমুদ মিথেল ও সাধারণ-সম্পাদক জেসমিন জাহান জুঁই।
সাক্ষাৎকারঃ
প্রশ্নঃ আপনার শৈশবকাল কেমন ছিল?
উঃ শৈশবে অত্যন্ত ডানপিঠে ছিলাম সব সময় নিজের মত করে চলার চেষ্টা করেছি পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম না এবং খুব ইনজয় করেছি।
প্রশ্নঃ সাহিত্য জগতে আপনার হাতে খড়ি কবে এবং কিভাবে?
উঃ আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি তখন স্কুলে একটি প্রতিযোগিতা হয় কবিতা আবৃতি এবং কবিতাটি গানের সুরে গাওয়া, আমি দু’জায়গাতেই ফার্স্ট প্রাইজ পাই,তখন থেকে লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি, গান আমাকে খুব টানে, গান শিখতে চাইলাম আমাদের পরিবারটা ছিল মোটামুটি ইসলামের শাসনে তখন গান শিখার অনুমতি পরিবার থেকে পাইনি, তারপর আর গান শেখা হলো না পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিকে এসে যখন বৃত্তি পেলাম সেই বৃত্তির টাকা দিয়ে প্রথম গিটার কিনি এবং গান শেখার চেষ্টা করি এভাবেই সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে পড়া।
প্রশ্নঃ আপনাকে আমাদের মাঝে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত
আপনার কাছে আমি প্রথমে জানতে চাই আপনার ছাত্রজীবন কেমন ছিলো? সে সময় শিক্ষক ছাত্র সম্পর্ক কেমন ছিল?
উঃ ছাত্র জীবন মধুর হয় আমারও তাই ছিলো, তবে আমি যখন মাধ্যমিকে পড়ি তখনই ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি এবং শিক্ষকদের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব একটা ভাল ছিলনা, 48 জন শিক্ষকের মধ্যে চার থেকে পাঁচজন শিক্ষক আমাকে ভালোবাসতেন আর অন্যরা কেউ ভালোবাসতো না।
প্রশ্নঃআপনার লেখালেখির প্রেরণা কি বিশেষ কেউ বা কিছু?
উঃ বিশেষ কেউ হ্যাঁ এটা বলা যায় কারণ আমি যখন গান শিখতে পারলাম না তখন মুক্তাঙ্গন সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠা করলাম আমি ক্লাস এইটে পড়ি তখন , আমার এক বড় ভাই ছিলেন মোরশেদ আলম শাহিন তাকে নিয়ে আমি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করি তখন, উনি আমাকে বললেন যে তুমি যদি নিজেই না লিখো তাহলে সাহিত্য সংগঠন করলে কেন ? মূলত তার উদ্দীপনায় লেখালেখি, পরবর্তীতে পড়াশোনার কারণে সংগঠনটি বন্ধ করে দেই এবং রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি আমি যেহেতু বামপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম আমার কবিতার বিষয়বস্তু মূলত মানবতার জন্য
প্রঃআপনি কবে থেকে লিখেন?
উঃআমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি ১৯৮৮
মাঝে 20 বছর আমি লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তখন আর লেখা হয়নি.
প্রঃআবার কখন থেকে লেখালেখি শুরু করলেন?
উঃগত বছর কোরবানির ঈদের পর, আমার গার্মেন্টসের ব্যবসায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা লস করি তখন আমার সহধর্মিনী রুবিয়া আমির রুবি আমাকে আবারো কাব্য জগতে আসতে উদ্দীপনা যোগায়।
প্রঃ অনলাইন সাহিত্য সংগঠন গুলি কিভাবে সাহিত্যর কল্যাণে অবদান রাখতে পারে বলে আপিনি মনে করেন?
উঃ শুদ্ধতা ও শুভ্রতার অন্বেষণ করলেই অনলাইন গ্রুপ গ্রুপগুলো সাহিত্যকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। এবং বর্তমানে অনলাইন গ্রুপ গুলি সাহিত্যকে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে আসছেন এটা বাংলা সাহিত্যের জন্য একটা আশাব্যঞ্জক দিক।
প্রশ্নঃ আপনার প্রিয় কবি/লেখক কে?
প্রিয় কবি অনেক বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম, সুকান্ত, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ । প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ ও প্রিয় প্রকৃতজ শামিম রুমি টিটন।
প্রঃবর্তমান কবি লেখকদের আপনি কী বার্তা দিতে চান?
উঃ শুদ্ধতা ও শুভ্রতা বুকে ধারণ করলেই প্রেম ঢেউ খেলে যায় এবং শুধুমাত্র প্রেম ই একজন কবিকে , কবির কবিতাকে জাগিয়ে তুলতে পারে।
প্রঃ সাহিত্যের ক্ষেত্রে কবিতা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে ঋদ্ধ করতে সক্ষম কী? করলে তা কিভাবে?
উঃ অবশ্যই সক্ষম যদি কবিতা মানুষের কথা বলে যদি কবিতা মানুষের অধিকারের কথা বলে যদি কবিতা পথ দেখায় প্রেম ও প্রেমাষ্পদের।
প্রঃ আপনি বা.সা.প গ্রুপের একজন নিয়মিত লেখক ও পাঠক,
আমরাও আপনার গ্রুপে নিয়মিত লেখি ও পাঠ করি।
আজকে অতিথি হিসেবে আমাদের সাক্ষাৎকার পর্বে এসে আপনার অনুভূতি কেমন তা জানতে চাই?
উঃ খুব আবেগ তাড়িত হয়ে অপেক্ষা করছিলাম আপনাদের জন্য, আপনাদের মতো গুণী মানুষদের সাথে কথা বলা এ ও একটা ভাগ্যের ব্যাপার, নিজেকে গর্বিত বোধ করছি আপনাদের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
প্রঃ প্রত্যেক লেখকেরই মৃত্যু চিন্তা থাকা উচিত, এ নিয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই?
উঃ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্য এটা প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে ভালো-মন্দ কি করেছি কতটা করেছি তার জন্য স্রষ্টার কাছে ক্ষমা চাই তবে উনি যতবার কাহার রূপের কথা বলেছেন তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি বার নিজেকে ক্ষমাশীল ও রহমতের দরিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন তাতে মনে হয় উনাকে ভালোবাসতে পারলে সেই পানিহীন নদী পাড়ি দিতে পারব।
প্রঃ আপনি ছাত্র রাজনীতি করতেন,
বর্তমান ছাত্র নেতাদের আপনি কি বার্তা দিতে চান?
উঃ আসলে অবক্ষয় এতো দূরে তার মূল প্রোথিত করে ফেলেছে যে এখন তাদেরকে বার্তা দিলে সংশোধন হবে না। আমাদের মনন ও মানবিকতা, শিক্ষার জায়গায় উন্নতি করতে হবে। রাজনীতি রাজারনীতি হলেও রাজনীতি শুধু মানুষের কথাই বলবে মানুষের অন্তরের কথা বলবে মানুষের অধিকারের কথা বলবে।
প্রঃ বতর্মানে সাহিত্যের কোন দিকটা আরো পরিবর্তন প্রয়োজন?
শুদ্ধতার অন্বেষণ করা উচিত সাহিত্যকে স্বার্থের সাথে মিলিয়ে ফেললে তখন সেটা আর সাহিত্য থাকেনা। সেটা হয়ে যায় তোষামোদি লেখা এটা অবশ্যই বর্জন করা উচিত।
প্রঃ আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
উঃ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটা বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা ও কবিদের জন্য কবি ভবন করা।
*
বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা এখানে অনেক কবি আছেন যাদেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি।ইনশাল্লাহ সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করব আপনাদের যদি সময় হয় তাহলে অন্যভুবন সাহিত্য পরিষদে আপনাদের পদচারণা কামনা করি।
ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।