প্রিয়তমাসু
—– উৎপল বাগ
বারাসাত
প্রিয়তমাসু ,
গ্রাম থেকে শহরের রাজপথে একটা চাকরির আশায়
হন্যে কুকুরের মতো ঘুরে চলেছি অফিসের দরজায় দরজায়
দিনান্তের শেষে পাইপলাইনের জলে আর্সেনিক খেয়ে
ধুলো আর ধোঁয়াশার পলেস্তরা গায়ে জড়িয়ে
ফুটপাতে কেটে যায় রাত পেটে ঘুষি মেরে।
সর্বত্রই ঠিকাদারের জিম্মায় নো ভ্যাকান্সি সাইনবোর্ড
চাকরি আছে স্থায়িত্ব নেই টাকাতেই ঝাড়া হাত পা
কর্মসংস্থানের বিজ্ঞাপনে ডিগ্রির কাগজপত্রে ঝাল মুড়ি !
ধর্মঘটের নেই অধিকার ফেলো করি মাখো তেল
বারো ঘন্টার ঠিকেদারী আইন , নগদা নগদী কমিশন
রোদ ঝড় বৃষ্টির ই.এল. – সি.এল – মেডিকেল নো কম্প্রোমাইজ
বউ ছেলেপুলের রোগ ব্যাধি উইদাউট পের হরদম ছুটি ।
শহরের ফুটপাতের যানজটে মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথায়
হাওড়া শিয়ালদা স্টেশনের প্লাটফর্মে জিআরপির তল্লাশি
সাবওয়ের জায়গাটুকুও কেড়ে নিয়েছে হকারের দল ;
পথিকই হারিয়ে ফেলেছে পথ আমি দূর ছাই
মুহূর্তের ভুল চুকে ঘটে যেতে পারে বিস্ফোরণ
সেদিকে লক্ষ্য দেওয়ার লোকজন কোথায়
সবাই ব্যস্ত নিজের আখের গোছানোর ধান্ধায় !
প্রিয়তমাসু , তোমাকে আর নিয়ে আসতে পারছি কই ?
আসার সময় কথা দিয়েছিলেম একটা সরকারি চাকরি খুঁজে
তোমাকে নিয়ে আসবো আমার কাছে সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে —
গ্রামের অনিশ্চয়তার চাষবাসের কাজ ফেলে
চলে এসেছিলাম শহরের নিশ্চয়তার জীবনের সন্ধানে ,
এখানে এসে দেখি সবাই কামড়াকামড়ি করছে এক টুকরো রুটি নিয়ে
কেউ কাউকে একচুল ছাড়ছে না ” সূচাগ্র মেদিনী ।”
যাদের পকেট ভারী তারাই এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে
আমি কপর্দকহীন পিছনেই পড়ে আছি পিছনের সারিতে
এখানে ডান হাতের থেকেই বাম হাতের কাজ পছন্দ করে বেশি
পাশাপাশি থেকেও সম্পর্কহীন অচেনাই থেকে গেছি।
প্রিয়তমাসু , এখনো জোগাড় করতে পারিনি গ্রুপ ডি’র চাকরি
হয়তো এই জীবনে তোমাকে দেওয়া কথা রাখা হবে না আর ,
ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে তোমার কাছে কোন মুখে ফিরে যাবো আবার ?
ভীরু কাপুরুষের দলে মিশতে মিশতে একদিন মিশে যাব মাটিতে
আন ডেলিভারি একটা লাশ হয়ে —