নীল সময়ের রোদ গুলি
নিমাই জানা
এক
ভীষ্মের বাবা অক্ষয় ।
নাইন পাশ নীল সাইকেলের সবুজসাথী, সিরিজ কাগজে কোরা পালিশ করে ফার্নিচারে । গুঁড়ো হলুদ রং নিয়ে দুপুর ভেজে খায় শুষনি শাক । পুকুরপাড়ে অনেক রাতে অক্ষয় দাদুকে দেখেছে অনেকে । ভীষ্ম এক গোপন বুকের ভেতর অন্ধের মত বেড়ে উঠছে । ব্লাড ক্যান্সার রোগ বেড়ে উঠছে একই চালার নিচে । চা পানের অন্ধত্ব মজুরি নিয়ে মাঠ ভেঙ্গে, হাতে রাখা ডেকচির ভেতর চরচর করে বেড়ে উঠছে কম হিমোগ্লোবিনের উপসর্গগুলো । আমন ধানের শীষ নিয়ে বাড়ির উঠোন থেকে চিরতরে চলে যাচ্ছে নিমতলায় । আচার্য পাড়ায় সবাই ব্রহ্মচর্য পালন করে এখন । নিমরোদে পোকা নেই তাই নিমাই আজীবন বাউল ।পাট জলে আচার্যের মেয়ে ডুবে মারা গেলে সিরিজ মৃত্যু পালন করে সবাই ।
দুই
তাপসের খেয়া থেকে দাঁড়িয়ে পোড়ানো চিতা দেখা হয়নি কতকাল । মানুষগুলো হাত বের করে আগুন নেভাতে চায় খালি । বাবলা গাছ দাঁড়িয়ে থাকে অস্থির হয়ে । ভিজে কপালে পালক গজিয়ে উঠলে সকলেই পিচ রাস্তায় দৌড়ায় । হাতে রাখা কাস্তে কুপিয়ে ভাঙ্গে কলসি । সাদা ধুতির অশৌচ পুরুষ নদীর গলায় আটকে আছে ।নীল কাঁটা শ্বাসরোধ করে প্রতিটি রাতে । গভীর ছায়া পাকা রাস্তায় হাঁটতে বেরোলেই শিরা ফুলে ওঠে মাথায় । অসহ্য দহন কেবল পটাশ গাছের তলায় ছেঁড়া গামছায় বিছানাপাতে ।
তিন
চাঁপাতলার পাড়ে গোলাপজামে উবু হয়ে বসে আছে স্বপন খাটুয়া । সিরোসিস লিভার ডুবিয়ে গেছে মাদুর কাঠির চাষ । বাজ পড়া খিরিশ গাছের মাথায় আটকে , সবং এর প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের বাজার খরচ । মোশতাকের হাতের ফিতায় পরিমিতি আর লাভের দানা চকচক করে দাড়ির নিচে ।বারোটায় আজান হলে প্রতিটি পুরুষ চন্দন হয় । গুল্ম লতায় হলুদ কামনার ঝিঙ্গে ফুল ,
শীত করে লোমকূপ ডগায় ।
চার
অভাবের ঘরে অসুখ হলে নতুন কাপড়ে পা জড়িয়ে ওঠে সাপ । মান্না ঘরের ছোট পিসি খড় কে পুড়িয়ে চলে বৈশাখের সপ্তাহ জুড়ে । নিমপাতার শুদ্ধ বাতাস নিয়ে রঞ্জিত ঠ্যালায় ভরে আনে মাটির দানা ।ক্যাকটাসের কাঁটায় আবার জন্ম হয় । এখানে ভোরবেলায় কালবৈশাখী হয় । সারা রাতে রঞ্জিতের বউ রান্না করা ছাতু টকের স্বপ্ন দেখে ।ব্রিটানিয়া বিস্কুট, গরুর ডাক্তার ,প্রেসক্রিপশন রাখা থাকে আলের উপর । চন্দ্রবোড়া ফাঁদ পেতে রাখে ।ছায়ায় ছোবল বসায়।শুকনো আলে বিষন্ন সং কীর্তনীয়া বসে পড়ে গোল হয়ে। নিশি প্রহর গান গায় রাতের প্রহর মেপে মেপে ।
পাঁচ
প্রতিটি চরিত্র ঝাউ পাতার মতো ।জোড়া যায়, ভাঙা যায় ।হাতের আঙুলে সরু সরু মায়া রাঁধছে আলু ভাত,টক আম। শাঁখের শব্দ এখন ও ঘুরেফিরে আসে দিনে দু তিনবার । অসুখ হাঁটছে দেখো সোজা রাস্তা ধরে । পুলিশ দাঁড়িয়ে ভাবছে শেষ দিনের কথা ।টোটো ফিরছে কোয়ারান্টিনে । নিঃশব্দ মানুষগুলো দাঁড়িয়ে আছে আউটডোরে ,
আঙুলের গাঁটে রাখা মিছিমিছি মৃত্যুভয় । ঘরের কুলগাছ ঝুলে আছে মাথার উপর ।প্রমাণ নেই । আর প্রশাখা নেই ।বয়স বাড়ছে তরতর করে , চোখের নিচের চামড়া ঝুলে আছে শুকনো সুপুরী ডাঁটার মতো । জৈবিক ভাইরাসে ঈশ্বর দেখছে সবাই । ক্রমশ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে দিনদিন ।
ছয়
বালিশের তলায় রোজ রাতের সিডেটিভ ।
ঈশ্বর নামে ঘরের ভিতরে গান গাইছে শ্যামসুন্দর ।বাঁশি বাজে না আর ,শীত এ সে কেবল সাদা কাপড় মুড়িয়ে যায় নাকে-মুখে । পোড়া গন্ধে কাঁদেনা কেউ ।ছোঁয়েনা কেউ। রুমালে ঢাকা গোটা শহর ।মায়ার জ্বরে কাঁদলো না কেউ ।রোদ নিভে যাচ্ছে দিন দিন । এম্বুলেন্স ঘুরে ঘুরে দাঁড়িয়ে পড়ে বন্ধ ডিসপেনসারির কাছে । ঘুরে আসা রোগী বিষ খায় রাতে ।অতি মারিও বোঝে গৃহপালিত । চোখে-মুখে স্বপ্নের ভিতর বসে থাকে মা,
শ্বাসকষ্টের ভিতরে সাদা গুঁড়ো ওষুধ জিভের তলায় ঢুকিয়ে ফেলছে আরোগ্য আশায় ।
চাঁদ একা ফিরে যাচ্ছে বীজগণিতে ।।
এক বিপন্নতার মধ্যে জীবন বোধ কাজ করে – সেই সময় জীবন যন্ত্রণাময়। তখন চাঁদও হিসেব নিকেশেে মধ্যে ঢুকে যায়। ভালো লাগলো।