মুক্তগদ্য দেয়াল “দেয়ালপাঠ” লিখেছেন সভ্যতা গড়ার অন্যতম সারথি ওপার বাংলার কবি ও লেখক অ ল ক জা না।

478
মুক্তগদ্য দেয়াল “দেয়ালপাঠ” লিখেছেন সভ্যতা গড়ার অন্যতম সারথি ওপার বাংলার কবি ও লেখক অ ল ক জা না।

দেয়ালপাঠ

             ——–
             অ ল ক জা না

সে এক আশ্চর্য প্রকৃতি। যার সঙ্গে প্রতিটি জীবনের নিদেন একবারটির জন্য হলেও মুখোমুখি সাক্ষাত হয়েছিল। কথামোহর সাজিয়ে দিয়েছিল, যে প্রহর যে কথায় ঝলমল হয়ে ওঠে। কিন্তু এই সব অবধারিত ঐশ্বর্য কেন যে স্বল্পায়ু নিয়ে আসে ? বিয়োগ ব্যথার শূন্যতা বড়োবেশি অন্তর্দাহী ফল্গুধারা। একান্ত নির্জনতা নিয়ে অামৃত্যু প্রিয় কোন অসুখের মতো আচরণ করে যায়। আটকাল বারোমাস মননমজ্জায় তার সুতীক্ষ্ণ বর্ণাঢ্য উপস্থিতি। এই গ্রহান্তরী আরোগ্য, আরামটুকু জামার আড়ালে হৃৎপিণ্ডের নিকট ধারণ করে আমার আমাদের কিংবা তোমার প্রাত্যহিক নির্মাণ সুঠাম চনমনে অটুট থাক।

“সংঘাত চাইনা তো,
চেয়েছি বড়ো কোন অন্তর্ঘাত—
প্রলয়ে নদী ভাঙবে বাঁধ, ভেতরের
ঘুমন্ত ঘোড়া টগবগ দৌড় লাগাবে।
সমস্ত রাষ্ট্রের অশৌচ জঞ্জাল সরে
সোজা মেরুদণ্ডের আস্বাদে
হয়ে উঠবে অপার উচ্ছ্বসিত। “

শীতের পরেই যদি এসে পড়ে বৃষ্টির আবেগী প্রলাপ
তখন নির্বাক মুহূর্তই জানে, সেতুবন্ধনের যাবতীয়
কারুকাজ। এদের ভেতর না হয় রবাহূত ফাল্গুন, আবির-আরক্ত আকাশে জড়িয়ে পড়ার নম্রতায় নিকটে এলে কে তাকে অসমাপ্ত বিমুখাকারে ফেরাতে চায় ?

“অনিবার্য ঘটে যাক,
ঘটে তো যাবেই
আত্মীয়তার প্রথম সুলগ্নপাঠ !”

তারপরই বাইরের পৃথিবী তার নিয়মেই কক্ষপথ পালটে নিতে থাকে। আমাদের মাঝখানে হুড়মুড়িয়ে তখন ঢুকে পড়ে প্রথম পত্রমোচনের সুরলোকায়ত স্বাদ ! সেই প্রকৃতি তখন বার বার ডেকে যায়——

“প্রসারিত পূর্ণবাক্যে মেলে ধরা
আমার তালুতে,
আমার ক্লান্তিতে
নেমে আসে শুক্লপক্ষের
অনিন্দ্য আক্ষরিক চাঁদ।

হয়তো পরম সযত্নে গচ্ছিত ব্রহ্মবিবর,
আলোস্নানে মগ্ন হতে চেয়ে
যে সহজেই ছুঁতে পারে ঠোঁটের বিষুব। “

এভাবেই পৃথিবীর প্রতিটি সরলতার জন্ম হয়। এভাবেই প্রতিটি নির্মাণের আঁতুড় ঘরের নিজস্ব পদাবলি। সঞ্চয়ে অবিচলিত নির্জন একক ভাস্কর্য।

“এ বসুধার যা কিছু
সশব্দেই ভাঙে। ”

কিছু শ্রবণযোগ্য আর গুটিকতক আত্মস্থ, ব্যক্তিগত স্নায়ুধমনির ভেতর সুরেশ বাহিত শাব্দিক পীড়ন। দ্বিতীয় সারণির অগ্রাধিকারে আমি।

“লিখি সেই প্রিয় প্রকৃতিপাঠ
অথবা ক্রমা ঐশ্বর্য।”

আসলে সবকিছু চুকেবুকে ভেঙে যাওয়ার পরই সেখানেই একটি অদৃশ্য অভেদ্য দেয়াল দাঁড়িয়ে পড়ে। তাকে অস্বীকার অবজ্ঞা করে সাধ্য কার ? আমি তো চূড়ান্ত অধিকারত্যাগী অলসচোরা নিরাহী অক্ষরভুক। কেন আর বিমুখ নীরবতাকে বিব্রত করা ? একাকীত্বের অতলডুবে আমি বিশ্বাস রেখেই হাঁটি, হাঁটতে ভালোবাসি। ভাবতেই পারো, এও এক অক্ষমতার নতুন সংস্করণ। প্রতিটি দেয়াল আসলে নেতিবাচক ছলনার সুস্বাস্থ্য। যে সত্য আমি একা নয়, হাড়ে হাড়ে অনেকের জানা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here