ভারতের সমকালীন সৃজনশীল লেখক-অগ্নিমিতা দাসের জীবন ছোঁয়া অসাধারণ গল্প “লাল গোলাপ”

510
ভারতের সমকালীন সৃজনশীল লেখক-অগ্নিমিতা দাসের জীবন ছোঁয়া অসাধারণ গল্প “লাল গোলাপ”

লাল গোলাপ
অগ্নিমিতা দাস


লাল আলোটা জ্বলতেই গাড়ি থামাতো হলো শিখাকে। আজকে ও অফিসে লেট হয়ে যাবে।
বহুদিন স্কুল টিউশন সব বন্ধ। কিন্তু এবার সব ছন্দে ফিরছে। তাই মেয়ে রায়না কে তার সবে খোলা সায়েন্স টিউটোরিয়ালে ছাড়তে গিয়ে যত বিপত্তি।পুরো উল্টো পথে ওকে ছাড়তে হবে অথচ পার্থর অফিসের পথেই পড়ে। কিন্তু বাবুর আজকেই যত তাড়াহুড়ো করে অফিসে যাওয়া।শিখার যতো জ্বালা, ঘর বাইরে সব সামলাও। অফিসে আজ ফার্স্ট হাফে মিটিং আছে, যা ট্র্যাফিকের হাল তাতে বসের কাছে ঝাড় অনিবার্য। মা গোলাপ কিনবো। মনে মনে গজগজ করতে করতে শিখা দেখলো কালো কাঁচের ওপারে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। এই হয়েছে এক জ্বালা। সিগন্যালে কাঁচ ঠকঠক করে জিনিস বিক্রির ধুম।

মা দাও না একটা ফুল ম্যাথআন্টি কে দেবো। শিখা বকা দিতে গিয়ে ও আন্টিকে দেবে শুনে জানলা খুলে একটা লাল গোলাপ কিনে রায়নার হাতে দিল। _ ফেরার সময় থিয়ার মা তোকে ড্রপ করে দেবে। বাড়ি ফিরে ফোন নিয়ে বসে যেও না, তিনটে থেকে অনলাইনে ইংলিশ টিউশন আছে আর বিকেল পাঁচটায় গানের। আরতি মাসির কথা শুনবে। সোনামুখ করে খেয়ে নেবে। রায়নাকে নামাতে নামাতে শিখা বলল। রেড সুইফ্টটা ছেড়ে দিতেই রায়না বড় রাস্তা ছেড়ে গলিপথে ঢুকলো।
গলির তিনটে বাড়ি পর ওদের বড় টিউটোরিয়াল হোম। গাড়ি গলিতে ঢোকে না তাই মা এখানেই নামিয়ে দেয়। গলির মুখেই সেই অন্ধ ছেলেটা বসে আছে। কতদিন পরে দেখা। এই লকডাউনের আগে তো প্রায় এখানেই বসে থাকতো। মা বাচ্চাদের পয়সা দিতে বারন করে তাই রায়না কোন সময় চকোলেট কখনো বিস্কুট কেক এসব দিতো। ছেলেটা হাত দিয়ে দিয়ে বুঝতো আর গন্ধ শুঁকে এক গাল হেসে রায়নাকে থ্যাংকু বলতো। এই তো সাতদিন মাত্র টিউটোরিয়ালে এসেছে। আজ প্রথম ওকে দেখলো।রায়না পায়ে পায়ে ওর কাছে এসে দাঁড়ালো।ছেলেটা ঠিক বুঝতে পেরে ওর দিকে তাকালো। রায়না বলে উঠলো_ হাই আমি রায়না। চিনতে পারছো। এখন তো টিউশন খুলেছে তাই এসেছি। তোমায় দেখিনি। ভালো আছো। ছেলেটা ঘাড় নাড়ায়। তারপর বিড়বিড় করে বলে_ আম্মী বিমার আছে তাই আসিনি। তুমি রায়না তো! রায়নার লজ্জা লাগলো সামান্য চকোলেট দেওয়ার জন্য সে তার নাম মনে রেখেছে। কিন্তু ভিখারী বলে ছেলেটার নাম সে জিগ্যেস করে নি। কথাটা বলে ছেলেটা তার দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। রায়না তো আজ সাথে কিছু আনে নি।ও তো জানতো না, সাথে আজ ফুটো কড়ি ও নেই যে ও পাশের দোকান থেকে কিনে দেবে।হঠাৎ রায়না এগিয়ে এসে ছেলেটার দিকে এগিয়ে দিল গোলাপ ফুলটা। ছেলেটা প্রথমে খাবার ভেবে ওটায় হাত বুলাতে গিয়ে কাঁটার খোঁচা খেল, তারপর মুখ উঠিয়ে বলল ফুউল কি রঙ। রায়না বললো_ গোলাপ ফুল। লাল রঙ।
ছেলেটা অদ্ভুত খুশিতে মাথা দোলাতে দোলাতে বলল__ আমার আম্মী গোলাপ খুব ভালোবাসে। আমার আব্বা যখন বেঁচে ছিল তখন মাকে মাঝে মাঝে দিতো। মা কি খুশ থাকতো। কাঁচের গেলাসে সাজিয়ে রাখতো। আমি এই ফুলটা আম্মীকে দেব। থ্যাংকু রায়না।চৌদ্দ বছরের রায়নার চোখে তখন অকাল বর্ষা নেমেছে।
© মিতার কলমে অগ্নি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here